কমেছে তেলের দাম, বেড়েছে শেয়ার সূচক

জ্বালানি তেলফাইল ছবি: রয়টার্স

শেষমেশ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে ইরান ও ইসরায়েল—এ খবর প্রকাশিত হতেই বিশ্ববাজারে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। আজ মঙ্গলবার বিশ্ববাজারে তেলের দাম ৪ শতাংশ পড়ে গেছে, শেয়ার সূচকের উত্থান হয়েছে আর ডলার দুর্বল হয়েছে।

এর আগে গত সোমবারও বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমেছে। সেদিন ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ৭ শতাংশ পড়ে যায়। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার প্রতিক্রিয়ায় দেশটি কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের এক সামরিক ঘাঁটিতে প্রতীকী হামলা চালিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছে যে আপাতত তারা আর এগোবে না। এরপর বাজারসংশ্লিষ্টদের মধ্যে এই ধারণার সৃষ্টি হয় যে হরমুজ প্রণালি দিয়ে তেল সরবরাহ এখন বন্ধ হচ্ছে না। যদিও সোমবার ইরানের সংসদে হরমুজ প্রণালি বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

আজ অপরিশোধিত ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬৭ দশমিক ৬৮ ডলার পর্যন্ত নেমে যায়; ১১ জুনের পর যা সর্বনিম্ন। মার্কিন ডব্লিউটিআই ক্রুডের দামও ৩ দশমিক ৬ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। দাম কমে হয় ৬৬ দশমিক শূন্য ২ ডলার। এরপর অবশ্য উভয় জাতের তেলের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পায়।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন যে যুদ্ধের ঝুঁকি আপাতত শেষ। এখন বিনিয়োগকারীদের চোখ থাকবে আসন্ন শুল্ক সিদ্ধান্ত আর বাণিজ্য আলোচনার দিকে। যেভাবে মধ্যপ্রাচ্য সংকট দ্রুত মিটে গেল, তাতে করে শুল্ক ও বাণিজ্য চুক্তির বিষয়েও দ্রুত অগ্রগতি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে যুদ্ধবিরতির খবরে শেয়ারবাজারেও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যুদ্ধের কারণে কয়েক দিন টালমাটাল থাকার পর আজ বিশ্বের বিভিন্ন শেয়ারবাজারে সূচকের উত্থান হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ফিউচার বেড়েছে ১ শতাংশ, নাসডাক বেড়েছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ। ইউরোপের স্টক্স ৬০০ সূচক বেড়েছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ, বিশেষ করে এয়ারলাইনস ও ভ্রমণ সংস্থাগুলোর শেয়ারের দাম ৪ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। যদিও তেল-গ্যাস কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে ৩ শতাংশ।

এশিয়ার বাজারেও একই রকম চাঙাভাব ছিল। এমএসসিআইয়ের এশিয়া-প্যাসিফিক সূচক (জাপান বাদে) বেড়েছে ২ দশমিক ২ শতাংশ, জাপানের নিক্কেই বেড়েছে ১ দশমিক ১ শতাংশ।

রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, জাপানে-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনার নতুন পর্ব শুরু হতে যাচ্ছে। জাপানের প্রধান সমন্বয়কারী রিওসেই আকাজাওয়া সম্ভবত ২৬ জুন সপ্তমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন।

যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সাধারণত ‘নিরাপদ বিনিয়োগ’মাধ্যম হিসেবে সরকারি বন্ডের কদর বাড়ে। কিন্তু এবার বাজার দ্বিধায় ছিল যে তেলের দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি বাড়বে। তাই বন্ডে বিনিয়োগ তেমন একটা বাড়ছে না।

এদিকে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের ভাইস চেয়ারম্যান মিশেল বোম্যান বলেছেন, চাকরির বাজারে ঝুঁকি বাড়লে ধরে নিতে হবে যে সুদ কমানোর সময় ঘনিয়ে আসছে। এর আগে শুক্রবার ফেড গভর্নর ক্রিস্টোফার ওয়ালার জানিয়েছিলেন, আগামী ২৯-৩০ জুলাইয়ের বৈঠকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে সুদ কমানোর পক্ষে।

আজ মার্কিন কংগ্রেসে বক্তব্য দেওয়ার কথা ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের। নিকট ভবিষ্যতে সুদ কমানোর বিষয়ে তিনি এখন পর্যন্ত কিছুটা সংযত। বর্তমানে বাজারের ধারণা, জুলাই মাসে সুদ কমার সম্ভাবনা ২২ শতাংশ। তবে সেপ্টেম্বরের বৈঠকে সুদ কমা প্রায় নিশ্চিত বলেই মনে করা হচ্ছে।

অন্যদিকে ১০ বছর মেয়াদি মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার এখন ৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ, জার্মানির ক্ষেত্রে তা ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ।

যুদ্ধবিরতির খবরে ডলারের মান রাতারাতি পড়ে গেছে। আজ জাপানি মুদ্রা ইয়েনের বিপরীতে ডলারের মান শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ কমে ১৪৫ দশমিক ৪৩ ইয়েন হয়েছে। আগের রাতেই যা ছিল ১৪৮ ইয়েন। ইউরোর দামও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ১৬০২ ডলার, আগের রাতেই তা শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছিল।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইউরোপ ও জাপান তেল-এলএনজি আমদানির ওপর নির্ভরশীল। সে জন্য তেলের দাম কমলে তাদের মুদ্রা শক্তিশালী হয়। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র নিট জ্বালানি রপ্তানিকারক। অর্থাৎ তারা যে পরিমাণ তেল আমদানি করে, তার চেয়ে বেশি রপ্তানি করে। ফলে তাদের মুদ্রার দাম উল্টো কমেছে।