দেশে দেশে মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন চলছে

শ্রমিকেরা ধর্মঘট করলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। আলোচনার টেবিলে এই শ্রমিকেরা তাই বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন।

করোনার অভিঘাতে বিশ্বজুড়ে সরবরাহব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে। এই খাতের কর্মীদেরও ব্যাপক চাপ নিতে হয়েছে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মূল্যস্ফীতি। তবে এত চাপ তাঁরা আর সহ্য করতে রাজি নন। এখন তাঁরা দেশে দেশে মজুরি বৃদ্ধিসহ নানা দাবিতে ধর্মঘট ডাকছেন।

অস্ট্রেলিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্রের শ্রমিক থেকে শুরু করে পেরুর ট্রাক ড্রাইভার—এমন অনেক শ্রমিক এখন মজুরি বৃদ্ধির দাবি করছেন। ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন ইউরোপের বিমান পরিবহন কোম্পানি রায়ানেয়ারের কর্মীরা। আবার সেই সঙ্গে প্যারিস ও লন্ডন বিমানবন্দরের কর্মীরাও ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। তাঁদের কাজ বিশ্ব অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা কাজ বন্ধ করলে থমকে যেতে পারে বিশ্ব অর্থনীতি। বলা হচ্ছে, এখনকার মূল্যস্ফীতি ঠিক চাহিদা বৃদ্ধিজনিত নয়, সরবরাহজনিত। সে কারণে তাঁরা ধর্মঘট করলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। আলোচনার টেবিলে এই শ্রমিকেরা তাই বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন। ইকোনমিক টাইমস সূত্রে এ খবর পাওয়া গেছে।

গত মাসে নরওয়ের প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্রের শ্রমিকেরা ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছিলেন। সেই খবরে ইউরোপের বাজারে রীতিমতো ভীতির সঞ্চার হয়েছিল।

আইএলওর তথ্যানুসারে, গত দুই বছরে বিশ্বের প্রায় সবখানেই শ্রমিকদের আয় কমেছে। ২০২০ সালে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর শ্রম আয় কমেছে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ আর ২০২১ সালে ১ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২০ ও ২০২১ সালে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে শ্রমিকদের মজুরি কমেছে ৭ দশমিক ৪ ও ২ দশমিক ৭ শতাংশ। উচ্চমধ্যম আয়ের দেশের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ৭ দশমিক ১ ও ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০২০ সালে উচ্চ আয়ের দেশের মানুষের আয় কমেছে ২ দশমিক ৫, তবে ২০২১ সালে বেড়েছে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রেকর্ড মূল্যস্ফীতি। ফলে এসব মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশে শ্রমিক আন্দোলন পুনর্গঠিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। বড় বড় করপোরেশন, যেমন স্টারবাকস ও অ্যামাজন ডটকমের মতো প্রতিষ্ঠানে শ্রম ইউনিয়ন শক্তিশালী হচ্ছে। সেই সঙ্গে দেশটির রেলওয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে সরকারের আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে। এতে দেশটির পরিবহন খাতে স্থবির হয়ে পড়তে পারে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই সংকট নিরসনে একটি প্যানেল গঠন করেছেন। এই প্যানেল সংকট নিরসনের লক্ষ্যে আগামী আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে শ্রমিকদের জন্য নতুন চুক্তির খসড়া পেশ করবে।

ব্রিটেনের অবস্থাও যুক্তরাষ্ট্রের মতো। ট্রেনচালকেরা বলেছেন, ৩০ জুলাই তাঁরা ধর্মঘট করবেন এবং পরিবহনশ্রমিকেরাও আগামী সপ্তাহে ২৪ ঘণ্টার কর্মবিরতি করবেন। এতে শুধু যাত্রীদের কষ্ট হবে, তা নয়; বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কনটেইনার জাহাজ কোম্পানি মেয়ার্সক বলেছে, এতে পণ্য পরিবহন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

দক্ষিণ কোরিয়ার জাহাজশ্রমিকেরাও কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করছেন। তাঁরা ৩০ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি এবং কাজের চাপ হ্রাসের দাবি করেছেন।

বিশ্লেষকেরা বলেন, মজুরি হার নির্ধারণ নিছক অর্থনৈতিক বিষয় নয়, রাজনৈতিকও বটে। ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে দেখা গেছে, শ্রমিকেরা আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়েই মজুরি বৃদ্ধির দাবি বাস্তবায়ন করেছেন। এ ক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়নের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।