মার্কিন অর্থনীতি যদি গতি হারায়, তাহলে তা হবে ট্রাম্পের কারণে: সিএনএন
ক্ষমতায় বসার প্রথম দিনেই অনেকগুলো নির্বাহী আদেশে সই করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও অর্থনীতি নিয়ে তিনি যেসব বড় অঙ্গীকার করেছিলেন, সে রকম কোনো নির্বাহী আদেশে এখন পর্যন্ত সই করেননি। প্রতিবেশী কানাডার রপ্তানি পণ্যে শুল্ক আরোপের আদেশে সম্ভবত আগামী ১ ফেব্রুয়ারি তিনি সই করতে পারেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন এক সময় ক্ষমতায় বসলেন, যখন মার্কিন অর্থনীতি বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। বাস্তবতা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের বেকারত্বের হার এখন মাত্র ৪ দশমিক ১ শতাংশ। এর আগে কোনো প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা গ্রহণের সময় বেকারত্বের হার এর চেয়ে কম ছিল এমন প্রেসিডেন্ট ছিলেন মাত্র দুজন—২০০১ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশ ও ১৯৬৯ সালে রিচার্ড নিক্সন।
২০২২ ও ২০২৩ সালে উচ্চ মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শুধু তারা নয়, সারা বিশ্বই তা করেছে। সেই মূল্যস্ফীতি এখন লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি চলে এসেছে। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ রয়ে গেছে। এমনকি আবারও তা বাড়তে পারে—এমন আশঙ্কাও আছে। তা সত্ত্বেও সামগ্রিকভাবে মার্কিন অর্থনীতি ভালো অবস্থায় আছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজার ধারাবাহিকভাবে চাঙা। মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির চেয়ে বেশি। সামগ্রিকভাবে প্রবৃদ্ধির হারও আশাতীত। এই বাস্তবতায় জে পি মরগ্যানের প্রধান বৈশ্বিক কৌশলবিদ ডেভিড কেলি বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তরাধিকার সূত্রে একটি স্বাস্থ্যকর অর্থনীতি পেতে যাচ্ছেন।
সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মার্কিন অর্থনীতি যদি গতি হারায়, তাহলে তা হবে ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডজনিত অনিশ্চয়তার কারণে। যদিও ওয়াশিংটনে যখন ক্ষমতার পালাবাদল হয়, যখন নতুন দল ক্ষমতায় আসে, তখন তারা নিজেদের চিন্তাভাবনা ও দর্শন নিয়েই আসে।
এবার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম দিনেই অনেক নির্বাহী আদেশে সই করে প্রতিপক্ষের মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার উপক্রম করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। জ্বালানি থেকে শুরু করে সীমান্ত, অভিবাসী—এমন কোনো বিষয় নেই বললেই চলে যে বিষয়ে তিনি নির্বাহী আদেশ দেননি। কর ও লাল ফিতার দৌরাত্ম্য হ্রাস, ব্যবসায়ী ও ব্যক্তিবর্গকে কর অবকাশসুবিধা দেওয়াসহ অর্থনীতিতেও বড় ধরনের সংস্কারের ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
বিষয়টি সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন ডেভিড কেলি। বলেছেন, ফুটবল ম্যাচের আগে কৌশল সম্পর্কে প্রতিপক্ষকে অন্ধকারে রাখতে হয়। কিন্তু অর্থনীতির বেলায় আপনাকে পরিকল্পনা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দিতে হবে। তা না হলে মানুষ সিদ্ধান্ত নিতে গড়িমসি করবে এবং পরিণামে অর্থনীতির গতি কমে যেতে পারে।
যাহোক, মূল্যস্ফীতির হার কমলেও ট্রাম্প জানেন, মার্কিন জনগণের মূল আক্ষেপ হচ্ছে পারিবারিক ব্যয়। মুডিস অ্যানালিটিকসের তথ্যানুসারে, ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের তুলনায় এখন একই পণ্য কিনতে মার্কিন ভোক্তাদের ১ হাজার ২১৩ ডলার বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে।
আশাবাদের তথ্যও আছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে মানুষের ব্যয়ের চেয়ে আয় কিছুটা বেড়েছে। অর্থাৎ মানুষ মোটামুটি বাড়তি ব্যয় মেটাতে পারছেন। অবশ্য অনেকেই ব্যয়ের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছেন না। সে জন্যই ট্রাম্প হয়তো ব্যয় কমানোর অঙ্গীকার করেছেন। ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করার কথাও বলেছেন। কিন্তু তিনি যেভাবে আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধি করতে যাচ্ছেন, তাতে বাড়তি মূল্য শেষমেশ ক্রেতার ঘাড়েই বর্তাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নির্বাচনী প্রচারণায় ডোনাল্ড ট্রাম্প যেসব অঙ্গীকার করেছিলেন, সেগুলো বাস্তবায়িত হলে যুক্তরাষ্ট্রের করপোরেট মুনাফা বাড়বে বলে তিনি মনে করেন। তাঁর অঙ্গীকারের মধ্যে আছে বাণিজ্য সংস্কার, কর হ্রাস ও সরকারি বিধিবিধানের রাশ আলগা করা।
কিন্তু অনেকে মনে করেন, ট্রাম্পের অঙ্গীকার বাস্তবায়িত হলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে। এতে ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদের হার বাড়াতে বাধ্য হবে। যদিও ট্রাম্প মনে করেন, মুদ্রানীতি প্রণয়নে প্রেসিডেন্টের ভূমিকা থাকা উচিত; এই ক্ষমতা কেবল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে থাকা উচিত নয়। নীতি সুদহার বাড়লে আবারও কষ্টের মধ্যে পড়বে মানুষ।
এ ছাড়া জিনিসপত্রের দাম প্রাক্-মহামারি পর্যায়ে ফেরত নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলেই মনে করেন বিশ্লেষকেরা। তাঁদের ভাষ্য, কেবল অর্থনৈতিক বিপর্যয় হলেই সে ধরনের মূল্যহ্রাস হতে পারে।