ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ২২৫ কোটি ডলার দিতে বায়ারকে নির্দেশ

যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের এক ব্যক্তিকে ২২৫ কোটি ডলার দিতে বহুজাতিক জৈবপ্রযুক্তি কোম্পানি বায়ারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই ব্যক্তি বলছেন, বায়ারের আগাছা দমনকারী পণ্য রাউন্ডআপ ব্যবহারের কারণে তাঁর ক্যানসার হয়েছে। তাঁর আইনজীবীরা এ তথ্য জানিয়েছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ফিলাডেলফিয়ার একটি আদালতের জুরিকে বলা হয়েছে যে জন ম্যাককিভিনসন যে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন, তা দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে রাউন্ডআপ ব্যবহারের ফল। আদালতের জুরিরা জানতে পেরেছেন যে তিনি নন–হজকিন্স লিম্ফোমায় আক্রান্ত হয়েছেন।

রায়ে যে পরিমাণ অর্থ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে ২৫ কোটি ডলার দিতে হবে ক্ষতিপূরণ হিসেবে এবং ২০০ কোটি ডলার দিতে হবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে। জন ম্যাককিভিনসনের আইনজীবীরা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘জুরিরা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা এই বার্তা দিচ্ছে যে বহুজাতিক এই করপোরেশনের পা থেকে মাথা পর্যন্ত পরিবর্তন দরকার।’

বায়ার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা জুরির দেওয়া রায়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে। কারণ, বিশ্বব্যাপী নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের মূল্যায়ন এবং বিপুল বৈজ্ঞানিক প্রমাণের সঙ্গে তা সাংঘর্ষিক। কোম্পানিটি বিশ্বাস করে যে আপিলে এই রায় উল্টো দেওয়া এবং অসাংবিধানিকভাবে অতিরিক্ত জরিমানা দেওয়ার আদেশ হয় বাতিল কিংবা জরিমানা কমানোর পক্ষে তাদের কাছে শক্ত যুক্তি রয়েছে।

বায়ার আরও বলেছে যে এর আগেও কিছু রায়ে আরোপ করা জরিমানা ৯০ শতাংশের বেশি কমানো হয়েছে।

সম্প্রতি রাউন্ডআপ ব্যবহারকারীরা বায়ারের বিপক্ষে পাঁচটি মামলা করে তাতে জিতেছেন। তবে গত ডিসেম্বরে সর্বশেষ যে মামলার বিচার হয়েছে, তাতে বায়ার জিতেছে। রাউন্ডআপ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে করা ১৬টি মামলার ১০টিতেই অবশ্য বায়ারের জিত হয়েছে।

রাউন্ডআপ ব্যবহারের কারণে ক্ষতির শিকার হওয়ার দাবি করে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১ লাখ ৬৫ হাজার মামলা হয়েছে। বায়ার এই পণ্য পেয়েছিল আরেক মার্কিন কৃষি–রাসায়নিক পণ্য প্রস্তুতকারক কোম্পানি মনসান্টোর কাছ থেকে। ২০১৮ সালে বায়ার মনসান্টোকে ৬ হাজার ৩০০ কোটি ডলারে কিনে নেয়।

বেশির ভাগ মামলার মূল অভিযোগ ছিল যে ব্যবহারকারীরা নন–হজকিন্স লিম্ফোমায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবে বায়ার বলছে, দশকের পর দশক ধরে চালানো গবেষণায় দেখা গেছে যে রাউন্ডআপ ও এর প্রধান সক্রিয় উপাদান গ্লাইফসেটের ব্যবহার মানুষের কোনো ক্ষতি করে না।

যুক্তরাষ্ট্রে যত আগাছা দমনকারী পণ্য ব্যবহার করা হয়, এর মধ্যে রাউন্ডআপের অবস্থান ওপরের দিকে রয়েছে। তবে গত বছর থেকে কোম্পানিটি ঘরে ব্যবহারের জন্য এই পণ্য আর বিক্রি করছে না।

২০২০ সালে রাউন্ডআপ–সংক্রান্ত মামলাগুলো নিষ্পত্তিতে বায়ার ৯৬০ কোটি ডলার খরচ করেছিল। তবে ভবিষ্যতে যেসব মামলা হতে পারে, সে ব্যাপারে কোম্পানিটি কোনো আপস নিষ্পত্তিতে আসতে পারেনি। সব মিলিয়ে ৫০ হাজার মামলা এখনো নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

রাউন্ডআপ নিয়ে বায়ারকে অনেক বেশি মামলার মুখোমুখি হতে হয়েছে। কোম্পানিটি একসময় ভেবেছিল যে তারা ফসলবিজ্ঞান–সংক্রান্ত ব্যবসা বন্ধ করে দেবে। তবে এ মাসের আরও আগের দিকে বায়ার জানিয়েছে, তারা আপাতত ওই পরিকল্পনা স্থগিত রাখছে। কোম্পানিটি বরং অভ্যন্তরীণ পুনর্গঠনের দিকে এখন বেশি মনোযোগ দিতে চায়।

চলতি বছরে রাউন্ডআপ নিয়ে আরও বেশ কিছু বিচারকার্য হওয়ার কথা রয়েছে।