আবার বাণিজ্য–বিনিয়োগ সম্পর্ক জোরদার করছে রাশিয়া ও কিউবা

কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ–কানেল, কিউবার বৈদেশিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগমন্ত্রী রিকার্ডো ক্যাব্রিয়াস এবং রাশিয়ার উপ–প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি চেরনিশেঙ্কো হাভানায় আলোচনা করছেন
ছবি: রয়টার্স

রাশিয়ার কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ী নেতারা কিউবায় বেশ কিছু ব্যবসা চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। দেশটির রাজধানী হাভানায় একটি সম্মেলন শেষে কিউবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এসব চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। দীর্ঘ সময়ের রাজনৈতিক মিত্রদেশ দুটি এখন বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে অর্থনৈতিক জোরদার করতে আগ্রহী।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়া ও কিউবা চিনি ও অ্যালকোহল পণ্য রামের উৎপাদন বাড়াতে একযোগে কাজ করতে রাজি হয়েছে। এ ছাড়া রাশিয়া আশ্বাস দিয়েছে যে কমিউনিস্ট-শাসিত দেশটিতে গম এবং অপরিশোধিত তেলের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।

রাশিয়া ও কিউবা দুই দেশই যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে।

কিউবা বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক মন্ত্রী রিকার্ডো ক্যাব্রিসাস শুক্রবার সম্মেলনের শেষ দিনে দেওয়া এক বক্তব্যে বলেন, ‘(চুক্তিগুলো) আমাদের দ্বিপক্ষীয় এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কের ইতিহাসে মাইলস্টোন হিসেবে কাজ করবে।’

যেসব বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে কিউবার রাষ্ট্রমালিকানাধীন কোম্পানি আলিমপোর্টের কাছে গম রপ্তানিবিষয়ক একটি চুক্তি। রাশিয়ার প্রোডিনটরগ এই গম সরবরাহ করবে। এই চুক্তির মাধ্যমে ‘নিশ্চয়তা’ দেওয়া হয়েছে যে কিউরার জনগণের জন্য ‘স্থিতিশীলভাবে’ গম সরবরাহ করা হবে। কিউবা-রাশিয়া বাণিজ্য কমিটির এক দলিলে এ কথা বলা হয়েছে, যা রয়টার্স দেখেছে।

আরেকটি চুক্তির আওতায় কিউবায় খাদ্য ও গৃহস্থালি কাজের বিভিন্ন পণ্যসহ রুশ পণ্যের জন্য একটি বাজার গড়ে তোলা হবে। এই বাজারের নাম হবে রুসমার্কেট। কিউবা-রাশিয়া বাণিজ্য কমিটির দলিলে বলা হয়েছে, এই বাজার দুই দেশের মধ্যে আরও সরাসরি শিপিং যোগাযোগ গড়ে উঠতে সাহায্য করবে।

তৃতীয় আরেকটি চুক্তি হয়েছে জরাজীর্ণ ‘তারারা’ সমুদ্রসৈকতকে পুনরুজ্জীবিত করতে রাশিয়া এবং কিউবার অভিপ্রায় নিয়ে। হাভানা থেকে মাত্র কয়েক মিনিটে সেখানে পৌঁছানো যায়। এই সৈকতে রয়েছে সাদা বালু এবং এটি ‘সাগর, মৎস্য শিকার এবং ডাইভিং উপভোগ করার জন্য আদর্শ’ একটি জায়গা বলে দুই দেশের দলিলে উল্লেখ করা হয়েছে।

রাশিয়ার পর্যটন, ক্রীড়া, সংস্কৃতি এবং যোগাযোগবিষয়ক উপপ্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি চেরনিশেঙ্কো আলাদা একটি অনুষ্ঠানে ঘোষণা করেছেন যে রাশিয়া ও কিউবার মধ্যে আগামী জুলাই মাসের মধ্যে নিয়মিত বিমান চলাচল শুরু করার জন্য আদেশ জারি হয়েছে। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ২০২২ সালের মার্চ মাস থেকে দুই দেশের মধ্যে বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

অন্য যেসব বিষয়ে চুক্তি হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে রাশিয়া-কিউবার মালিকানায় একটি রাম পানীয়র কোম্পানি চালু করা। এই কোম্পানি ভালো মানের রাম কিউবা থেকে রপ্তানি করবে। এ ছাড়া নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ করতে কিউবায় একটি ইস্পাত কারখানা তৈরি হবে। কিউবার গণমাধ্যম বলছে, এর জন্য কারিগরি জ্ঞান ও প্রযুক্তি রাশিয়া সরবরাহ করবে।

রাশিয়ার শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা তাদের বিনিয়োগকারীদের জন্য কিউবার দরজা খুলে দেওয়ার জন্য এর আগে হাভানার প্রশংসা করেছেন। তাঁদের যে ‘বিশেষ সুবিধা’ দেওয়া হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে কর সুবিধা, দীর্ঘমেয়াদি ভূমি বন্দোবস্ত এবং মুনাফা রাশিয়ায় ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা, তারও প্রশংসা করেন এই ব্যবসায়ীরা।