মন্দার কবলে জাপান, হারিয়েছে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির শিরোপা

জাপান পতাকা

গত বছরের শেষ প্রান্তিকে হঠাৎই মন্দার কবলে পড়ে জাপান। ফলে এখন আর তারা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি নয়, সেই জায়গা তারা জার্মানির কাছে হারিয়েছে। ফলে জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কবে থেকে অতি শিথিল মুদ্রানীতির ধারা থেকে বেরিয়ে আসবে, তা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, অনেক বিশ্লেষক আরও খারাপ খবর শুনিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, চীনের চাহিদা কমে যাওয়া এবং জাপানের অভ্যন্তরীণ ভোগ ব্যয় কমে যাওয়া ও টয়োটা মোটর করপোরেশনে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে চলতি প্রান্তিকেও জাপানের অর্থনৈতিক সংকোচন হতে পারে। এসব দেখে মনে হচ্ছে, জাপানের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার চ্যালেঞ্জিং হবে।

দাই-চাই লাইফ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী অর্থনীতিবিদ ইওসিকি সিনকে রয়টার্সকে বলেন, যে বিষয়টি বিশেষ করে উল্লেখযোগ্য তা হলো, ভোগ ব্যয় ও পুঁজি বিনিয়োগ কমে যাওয়া। এই দুটি অভ্যন্তরীণ চাহিদার মূল ভিত্তি। এ কারণে এ দুটির সূচকের নিম্নগামী হওয়া ভালো লক্ষণ নয়।

ইওসিকি সিনকে আরও বলেন, সাময়িকভাবে অর্থনীতিতে গতির অভাব দেখা যাবে; প্রবৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তিগুলো শক্তি হারাবে।

গত বছরের শেষ, অর্থাৎ অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে জাপানের মোট দেশজ উৎপাদন শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যানে অর্থনীতির এ চিত্র দেখা গেছে। এর আগের প্রান্তিকে, অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে অর্থনীতি ৩ দশমিক ৩ শতাংশ সংকুচিত হয়, যদিও পূর্বাভাস ছিল যে প্রবৃদ্ধি হবে ১ দশমিক ৪ শতাংশ।

অর্থনীতির সাধারণ সূত্র অনুসারে, টানা দুই প্রান্তিকে অর্থনৈতিক সংকোচন হলে বলা যায়, অর্থনৈতিক মন্দা চলছে।

অনেক বিশ্লেষক এখনো আশা করেন, জাপান চলতি বছর বড় ধরনের অর্থনৈতিক প্রণোদনা দেওয়া থেকে বেরিয়ে আসবে। কিন্তু এ সপ্তাহের দুর্বল পরিসংখ্যান দেখে সন্দেহ সৃষ্টি হতে পারে যে ক্রমবর্ধমান মজুরির কারণে মানুষের ভোগ ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে মূল্যস্ফীতির হারও দীর্ঘ মেয়াদে ২ শতাংশের ঘরে থাকবে।

মুডিস অ্যানালিটিকসের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ স্টিফেন অ্যাংগ্রিক রয়টার্সকে বলেছেন, পরপর দুই মেয়াদে অর্থনৈতিক সংকোচন হওয়া এবং টানা তিন প্রান্তিকে অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে যাওয়া ভালো খবর নয়। এমনকি পরিসংখ্যান সংশোধনের পর চূড়ান্ত সংখ্যায় পরিবর্তন এলেও বিষয়টি ভালো নয়।

উন্নত অর্থনীতিগুলোর মধ্যে জাপানি মুদ্রা ইয়েন অনেক দুর্বল। এই দুর্বলতার প্রধান কারণ ছিল জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শিথিল মুদ্রানীতি। ব্যাংক অব জাপান একমাত্র কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যারা এখনো স্বল্পমেয়াদি সুদহার নেতিবাচক রেখেছে। প্রবৃদ্ধির পালে হাওয়া দিতেই তারা এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে মূল্যস্ফীতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসায় ফেডারেল রিজার্ভ এবং ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে সুদহার হ্রাস শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে। জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও কঠোর হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

এপ্রিল মাসের মধ্যে তারা নেতিবাচক সুদহারের ধারা থেকে বেরিয়ে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যদিও তারা নিজে থেকে দিনক্ষণ জানায়নি।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, মন্দা কাটিয়ে উঠলেও জাপানের প্রবৃদ্ধির পালে তেমন একটা হাওয়া লাগবে না। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, জাপানের গার্হস্থ্য সঞ্চয়ের হার নেতিবাচক।