ভূরাজনৈতিক কারণে সতর্ক অবস্থানে বিনিয়োগকারীরা

ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে অর্থনীতি নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে

ভূরাজনৈতিক কারণে বিনিয়োগকারীরা সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন। রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, চলতি সপ্তাহের শেষে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের মাত্রা আরও বেড়ে যেতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে বিনিয়োগকারীরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন।

সে সঙ্গে চলতি সপ্তাহে ফেডারেল রিজার্ভের বৈঠক, যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতিসহ বেকারত্বের তথ্য প্রকাশিত হওয়ার কথা আছে। সব মিলিয়ে বিনিয়োগকারীরা সতর্ক অবস্থানে আছেন।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত শনিবার বলেছেন, ইসরায়েলের সেনাবাহিনী গাজায় স্থল অভিযানের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের হামলা শুরু করেছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে আরও সামরিক সরঞ্জাম পাঠিয়েছে এবং গাজাসহ লেবানন ও সিরিয়ায় হামাস ও তাদের সমর্থকদের ওপর হামলা করায় বিনিয়োগকারীদের মনে আশঙ্কা ভর করেছে।

বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান চার্লস শোওয়াবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রান্ডি ফ্রেডরিক রয়টার্সকে বলেন, ‘ইসরায়েলের পরিস্থিতি আমাদের জন্য প্রভূত শঙ্কার কারণ।’

এদিকে এ ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে যা হয়, বাজারে তা ঘটতে শুরু করেছে। ইসরায়েলে হামাসের হামলা শুরু হওয়ার পর থেকেই আবার বাড়তে শুরু করেছে অপরিশোধিত তেলের দাম। সে সঙ্গে বিনিয়োগের নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে পরিচিত সোনার দাম চলতি বছরের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ের পর এই প্রথম আউন্সপ্রতি দুই হাজার ডলার ছাড়িয়েছে।

তবে গত শুক্রবার ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের বিশ্লেষকেরা বলেছেন, ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের জেরে তেলের বাজারে যা ঘটছে, সেটা খুব বেশি কিছু নয়। তবে বিশ্লেষকেরা এও মনে করেন, এই সংঘাতে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে জড়িয়ে পড়ার লক্ষণ দেখামাত্র বাজারে তেলের দাম অনেকটা বেড়ে যেতে পারে।

স্পার্টান ক্যাপিটাল সিকিউরিটিসের বাজার অর্থনীতি বিভাগের প্রধান পিটার কার্ডিলো রয়টার্সকে বলেছেন, এ যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ব্যয় বেড়ে গেলে অর্থাৎ তার ঘাটতি বাড়লে ট্রেজারি বন্ডের সুদহার আরও বেড়ে যেতে পারে, যা এমনিতেই এখন ১৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

আবার অনেক বিশ্লেষক বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত বাড়লে নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে ট্রেজারি বন্ডের বিক্রি বাড়বে। এতে অবশ্য বন্ডের সুদ বৃদ্ধির হার কমে আসতে পারে, কারণ, বন্ডের চাহিদা ও দামের সঙ্গে ট্রেজারি বন্ডের সুদহারের সম্পর্ক বিপরীতমুখী। তখন অবশ্য স্টক মার্কেট ও অন্যান্য সম্পদের ওপর চাপ কমে আসবে।

এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক গত জুলাইয়ের পর ১০ শতাংশ কমেছে, যদিও আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় তা এখনো ৭ শতাংশ বাড়তি।

ইউবিএস গ্লোবাল ওয়েলথ ম্যানেজমেন্ট শুক্রবার বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বন্ড সাধারণত যেভাবে বিনিয়োগের নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে, এ বছর এখন পর্যন্ত তা ঘটছে না। তবে সংঘাতের তীব্রতা বাড়লে মুদ্রানীতি থেকে মানুষের নজর সরে যেতে পারে এবং নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে ট্রেজারি বন্ডের চাহিদা বাড়তে পারে।

তারা আরও মনে করছে, বাজারের এ সাময়িক অস্থিরতার বিপরীতে সোনা ও তেল—উভয়ই সুরক্ষা হিসেবে কাজ করবে।

সিবিওই ভোল্যাটিলিটি ইনডেক্স বা সূচকের মান ইসরায়েল–হামাস সংঘাতের কারণে বেড়েছে, যা গত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে।

মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ আগামী বুধবার নতুন মুদ্রানীতির ঘোষণা দেবে। যথারীতি বিনিয়োগকারীরা ফেডের ঘোষণার দিকে তাকিয়ে থাকবেন।