সিঙ্গাপুরে স্ট্যাম্প ডিউটি বেড়ে দ্বিগুণ, কঠিন হয়েছে বিদেশিদের বাড়ি কেনা
সিঙ্গাপুরে সম্পত্তি বিক্রি করার একজন এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন ভেরা লিউ। বৃহস্পতিবার ভোররাতের দিকে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন, কারণ সম্পদ বিক্রির জন্য করা তাঁর দুটি চুক্তি বাতিল হয়ে গেছে। সিঙ্গাপুরে সম্পদ কেনার ওপর নতুন করে কর বাড়ানোর পর এ ঘটনা ঘটে। খবর রয়টার্সের
বুধবার রাতের দিকে সিঙ্গাপুরের কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করে ব্যক্তিগত বাড়ি কেনার ওপর বিদ্যমান কর বাড়িয়ে দেয়। দেশটিতে যেভাবে বাড়ির দাম বাড়ছিল, তা ঠেকাতে এই পদক্ষেপ নেয় সরকার। বিশেষ করে বিদেশিদের জন্য এখন সম্পদ কেনা ব্যয়বহুল হবে, কেননা তাদের জন্য স্ট্যাম্প ডিউটি দ্বিগুণ করা হয়েছে। ফলে সম্পদ মূল্যের ৬০ শতাংশ স্ট্যাম্প ডিউটি দিতে হবে।
ভেরা লিউর একজন বিদেশি ক্রেতা, সিঙ্গাপুরের ব্যস্ত শপিং এলাকা অরচার্ড রোডে একটি বিলাসবহুল কন্ডোমিনিয়াম কেনার চুক্তি করেছিলেন। তিনি ওই সম্পত্তির জন্য ৭৫ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ এক কোটি সিঙ্গাপুরি ডলার খরচ করতে চেয়েছিলেন। আরেকজন ক্রেতা সম্পত্তি কেনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সিঙ্গাপুরে নিয়ে এসেছিলেন। তিনিও চুক্তি স্থগিত করেছেন।
ভেরা লিউ বলছেন, ‘(বিদেশিদের জন্য) দরজা এখন বন্ধ হয়ে গেছে। আমি আতঙ্কিত হয়ে আমার ক্রেতাদের মাঝরাতে ফোন করেছি। এটা পাগলামি। এটা খুব বেশি বাড়ানো হয়েছে। কিছু ক্রেতাকে এখন শুধু স্ট্যাম্প ডিউটি হিসেবেই কয়েক লাখ ডলার অতিরিক্ত দিতে হবে’।
সম্পত্তিসংক্রান্ত কোনো কঠোর ব্যবস্থা নিতে হলে সিঙ্গাপুরের সরকার তা মধ্যরাতের দিকে ঘোষণা করে। এর কারণ হলো, ২০১৮ সালে একবার এমন পদক্ষেপ নেওয়ার পর যতটুকু সময় হাতে ছিল, সেই সময়ের মধ্যে লোকজন হুমড়ি খেয়ে সম্পত্তি কিনতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। স্ট্যাম্প ডিউটি বাড়ানোর নতুন ঘোষণা বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হয়েছে।
সম্প্রতি বিদেশি ক্রেতারা সিঙ্গাপুরে ব্যাপক সংখ্যায় সম্পত্তি কেনা শুরু করেছিলেন। সে কারণে দীর্ঘদিন পরে বাড়ি কেনাবেচার ক্ষেত্রে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হলো। নীতিনির্ধারকেরা উদ্বিগ্ন ছিলেন, কারণ বিদেশিরা সিঙ্গাপুরের সম্পত্তিতে বিনিয়োগ লাভজনক মনে করছিলেন। কিন্তু এ কারণে স্থানীয়রা বাড়ি কিনতে পারছিলেন না।
জাতীয় উন্নয়ন বিষয়কমন্ত্রী ডেসমন্ড লি বলেন, ‘কোনো ধরনের অগ্রিম ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এটা দেখা যেত দেশি ও বিদেশি উভয়ের দিক থেকে বিনিয়োগ বাড়ছে, ফলে সিঙ্গাপুরের যেসব মানুষ আবাসিক সম্পত্তি কিনতে চান, তাঁদের ভোগান্তি বেড়েই চলত।’
স্থানীয় বাসিন্দা, যাঁরা দ্বিতীয় কিংবা আরও সম্পত্তি কিনতে চান, তাঁদের ক্ষেত্রেও কর বেড়েছে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই পদক্ষেপের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সেই সব বিদেশি ক্রেতা, যাঁরা বিলাসবহুল সম্পত্তি কিনতে চান।
সরকার বলছে, করের নতুন হার ১০ শতাংশের মতো সম্পত্তি কেনাবেচায় প্রভাব ফেলবে।
অরেঞ্জ টি অ্যান্ড টাই প্রতিষ্ঠানের গবেষণাবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন সান বলেন, এই পদক্ষেপ বিদেশি ক্রেতাদের সমস্যায় ফেলবে। ‘বিলাসবহুল বাড়ি বিক্রিতে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি হবে। ফলে সাময়িকভাবে হলেও এরা বাড়ি কেনা থেকে পিছিয়ে যাবে।’
ক্রিস্টিন সান আরও বলেন, এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে চীনা ক্রেতাদের লক্ষ্য করে। আগামী মাসগুলোতে তাঁরা আরও বেশি বাড়ি কিনবেন, সম্ভবত এমনটা ধরে নেওয়া হয়েছিল। সিঙ্গাপুরে বেশির ভাগ বিলাসবহুল বাড়ি সাধারণত চীনারা কিনে থাকেন।
নগররাষ্ট্রটির সম্পত্তির বাজার অবশ্য বেশ চড়া হয়ে রয়েছে। গত বছর সেখানে বাড়ির দাম বেড়েছে গড়ে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে বেড়েছিল ১০ দশমিক ৬ শতাংশ। অন্যদিকে চীন, নিউজিল্যান্ড কিংবা কানাডার মতো দেশে এ সময় বাড়ির দাম কমেছে।
স্বল্পমেয়াদি সমাধান
বিশ্লেষকেরা অবশ্য ঠিক নিশ্চিত নন যে সরকারের এই পদক্ষেপ সিঙ্গাপুরে সম্পত্তির দাম কমাতে সাহায্য করবে কি না। ক্রিস্টিন সান বলেন, দাম হয়তো একটু ধীরগতির হতে পারে, তবে অতিধনীরা ঠিকই বাড়ি কেনা চালিয়ে যাবেন। ফলে শেষ পর্যন্ত বাড়ির দাম বাড়তেই থাকবে।
ক্রিস্টিন সান বলেন, ‘পুরোনো অভিজ্ঞতা থেকে বলত পারি, কয়েক মাস পরেই আবার চাহিদা বাড়বে। কারণ, তখন কেনার মতো বাড়ি খুব কম থাকবে। আর যাঁদের বাড়ি কেনা দরকার, তাঁদের শেষ পর্যন্ত একটি বাড়ি কিনতেই হবে।’
বিদেশিদের জন্য সিঙ্গাপুরে সর্বশেষ ২০২১ সালে স্ট্যাম্প ডিউটি বাড়ানো হয়েছিল, বিদ্যমান ২০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ। ফলে ২০২২ সালে বিদেশিদের কন্ডোমিনিয়াম কেনার হার ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল। কিন্তু বাড়ির দাম কমেনি।
সম্পত্তি কেনাবেচা নিয়ে গবেষণা করেন নিকোলাস ম্যাক। তিনি বলেন, সরকারের পদক্ষেপ যদি মাত্র ১০ শতাংশ সম্পত্তি কেনাবেচায় প্রভাব রাখে, তবে এই পদক্ষেপ খুব একটা কাজে আসবে না। তার মানে হলো ৯০ শতাংশের ক্ষেত্রে এর কোনো প্রভাব থাকবে না। যদি তা–ই হয়, তাহলে বাজার কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে?
নিকোলাস ম্যাক বলেন, বিষয়টি এমন যে একটি পেট্রোলিয়াম স্থাপনায় আগুন লেগেছে, আর মানুষজন আগুন নেভাতে ঠিক জিনিসটি ব্যবহার করছে না।