প্রতিশ্রুতির চেয়ে বাণিজ্য চুক্তির অগ্রগতি কম

ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে গেলেও বাণিজ্যসুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে এখনো পিছিয়ে রয়েছে যুক্তরাজ্য। ব্রেক্সিট-পরবর্তীকালে বাণিজ্য চুক্তিগুলো সুরক্ষিত করার লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না দেশটির। প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ব্রেক্সিট চুক্তি বাস্তবায়নের পর থেকে যুক্তরাজ্যের রপ্তানিকারকের সংখ্যা ১৫ শতাংশ কমে গেছে।

২০১৯ সালের নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টি তথা রক্ষণশীল দল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে নতুন বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে তারা ব্রেক্সিটের কারণে খোয়ানো বহির্বাণিজ্যের ৮০ শতাংশই পুনরুদ্ধার করবে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী যুক্তরাজ্য ব্রেক্সিট-পূর্ব বাণিজ্যের সর্বোচ্চ ৬৩ শতাংশ পর্যন্ত পুনরুদ্ধার করতে পারে।

একটি সরকারি সূত্র বলেছে, বাণিজ্যের লক্ষ্য পূরণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন বিষয়টিকে তেমন অগ্রাধিকার দিচ্ছে না।

ব্রেক্সিট হচ্ছে দুটি ইংরেজি শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ। শব্দ দুটি হলো, ‘ব্রিটেন’ অ্যান্ড ‘এক্সিট’। ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্তকে ব্রেক্সিট বলা হয়।

এ রকম পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার গত ১২ নভেম্বর দীপাবলি উৎসবের দিনে ভারতের সঙ্গে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সম্পাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু সেটিও করা সম্ভব হয়নি। তবে যুক্তরাজ্য ইতিমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও জাপানসহ ৭১টি দেশের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে।

জাপানের সঙ্গে করা চুক্তিটি নিয়ে চলতি বছরের শুরুর দিকে বেশ সমালোচনা হয়েছিল। কারণ, সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে গত বছরে দেশটিতে যুক্তরাজ্যের পণ্য ও পরিষেবা রপ্তানি কমেছে। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের বাণিজ্য চুক্তিটিও সমালোচনার জন্ম দেয়। যুক্তরাজ্যের সাবেক পরিবেশমন্ত্রী জর্জ ইউস্টিসও কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘এটি আসলে যুক্তরাজ্যের জন্য খুব ভালো কোনো চুক্তি নয়।’

যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগের একটি সূত্র জানায়, ‘আমরা আমাদের লক্ষ্য বড় করেছি। কিন্তু আমাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পাদন করা প্রয়োজন। কিন্তু এটি এখন একটি স্পষ্ট বিষয় যে বাইডেন প্রশাসন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির আলোচনাকে খুব একটা অগ্রাধিকার দিচ্ছে না।’

এই সূত্রের মতে, ‘যখন যুক্তরাষ্ট্র আছে তখন আমরা আলোচনায় অগ্রগতি অর্জনের জন্য প্রস্তুত। এরই মধ্যে ব্রিটিশ সংস্থাগুলোর জন্য বাণিজ্য সুরক্ষিত করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছি। আমেরিকান বাজারের প্রতিবন্ধকতা নিরসন এবং ইস্পাত ও হুইস্কি নিয়ে শুল্কসংক্রান্ত যেসব সমস্যা ও বিরোধ রয়েছে, সেগুলোর সমাধান করতে চাই।’

রাজস্ব ও কাস্টমস বিভাগের তথ্য-উপাত্তে দেখা যায় যে ২০২০ সালে যুক্তরাজ্যে যেখানে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৪৪৩ জন রপ্তানিকারক ছিলেন সেখানে ২০২১ সালে তা কমে ১ লাখ ২৬ হাজার ৮১২ জনে নেমে এসেছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের অধীন প্রায় সব দেশ ও অঞ্চলেই রপ্তানিকারকের সংখ্যা কমেছে। তবে তা সবচেয়ে বেশি কমেছে ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে, যা শতকরা হিসাবে ২৩ শতাংশ। ইংল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে রপ্তানিকারকের সংখ্যা কমেছে ১৫ শতাংশ। এ ছাড়া উত্তর আয়ারল্যান্ডে কমেছে ৪ শতাংশ।

স্প্ল্যাশম্যাপ কাপড়ের মানচিত্র তৈরি করে। তাদের তৈরি ওয়াটারপ্রুফ বা জলরোধী মানচিত্রগুলো সাধারণ ভোক্তা ও সামরিক বাহিনী কিনে থাকে। স্প্ল্যাশম্যাপের মালিক ডেভিড ওভারটন জানান, তাঁরা সব সময়ই বিভিন্ন দেশে পতাকা বিক্রি করে আসছেন। এর মধ্যে প্রধান বাজার হলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। তাঁদের তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য ছিল জার্মানি। কিন্তু ব্রেক্সিটের পর থেকে বাণিজ্যপ্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসায় জার্মানি সব ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে। এতে লেনদেন ২ থেকে ৫ শতাংশ কমে গেছে বলে জানান তিনি।