মূল দোকানের সঙ্গে কফি শপ খুললে ব্যবসা বাড়ে
এশিয়ার দেশ সিঙ্গাপুরে রালফ লরেন ব্র্যান্ডের কর্ডরয় কাপড়ের একেকটি জ্যাকেটের দাম ৯০০ সিঙ্গাপুরি ডলার। একই বিপণিকেন্দ্রের ক্যাফেতে ভ্যানিলা লাতের দাম ৯ সিঙ্গাপুরি ডলার। সেই দোকানে আর যা বিক্রি হয়, সেই তুলনায় এই দাম মন্দ নয়। মূল দোকানের সঙ্গে কফি শপ যুক্ত করায় অনেক ব্র্যান্ডের বিক্রিও বাড়ছে।
বাস্তবতা হচ্ছে, রালফ লরেন থেকে শুরু করে কোচ, লুইস ভিটন, ডিওর ও প্রাডার মতো পোশাক ও বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলো এশিয়ার বাজারে দোকান খুলছে। এশিয়ার ক্রেতারা এখন স্পর্শগ্রাহ্য পণ্যের চেয়ে অভিজ্ঞতা লাভে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন। বিশেষ করে জেন–জি প্রজন্মের মধ্যে এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন কোচ ব্র্যান্ডের প্রধান নির্বাহী টড কান। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সবখানেই জেন–জি প্রজন্ম তাদের আত্মপ্রকাশে গুরুত্ব দিচ্ছে। এ অবস্থায় ব্র্যান্ডগুলো যে ক্যাফে খুলছে, তা হয়ে উঠেছে জেন–জি প্রজন্মের আত্মপ্রকাশের মঞ্চ, তাদের সমাজের মঞ্চ।’
জেন–জি প্রজন্ম আবার নিজেদের এই অভিজ্ঞতা অনলাইনে তুলে ধরতে পটু। দেখা যায়, তারা হয়তো কোচের চিলি ক্র্যাব আইসক্রিম হাতে ছবির জন্য পোজ দিচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে এসব ব্র্যান্ডের বিপণনও হয়ে যাচ্ছে।
একসময় বিলাসবহুল পণ্যের জগতে মানুষের পদার্পণ ঘটত সানগ্লাস ও চেইনযুক্ত চাবির রিং দিয়ে। এসবের দামও কম ছিল না। এখনকার জেন–জি প্রজন্ম হাতে সেলাই করা চামড়ার হ্যান্ডব্যাগ কিনছে না, বরং তারা কেক দিয়ে তৈরি হ্যান্ডব্যাগ কিনছে। এটাই অভিনবত্ব।
টড কান বলেন, খাবারের জগতে কোচ ব্র্যান্ডের বিচরণ শুরু হয়েছে এশিয়া মহাদেশে। এখানে তারা খাবারদাবার নিয়ে নানা পরীক্ষা–নিরীক্ষা করছে। চলতি মাসেই সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরে তারা নিজেদের ব্র্যান্ডের স্টেক হাউস খুলছে।
টড কান আরও বলেন, কোম্পানির তথ্যানুসারে, তাদের ব্যবসার জন্য সম্ভবত সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হচ্ছে কফি শপ খোলা।
বিশ্বের সবখানেই জেন–জি প্রজন্ম তাদের আত্মপ্রকাশে গুরুত্ব দিচ্ছে। এ অবস্থায় ব্র্যান্ডগুলো যে ক্যাফে খুলছে, তা হয়ে উঠেছে জেন–জি প্রজন্মের আত্মপ্রকাশের মঞ্চ, তাদের সমাজের মঞ্চ।টড কান, প্রধান নির্বাহী, কোচ ব্র্যান্ড।
যেসব জায়গায় মানুষের পদচারণ বেশি, সেসব জায়গায় কোচ ব্র্যান্ডের ক্যাফের ব্যবসা এমনিতেই ভালো। ক্যাফে থাকলে মূল দোকানের ব্যবসাও ভালো হয়। যাঁরা কেনাকাটা করতে আসেন, ক্যাফে থাকলে তাঁদের সঙ্গীরা সময় কাটানোর সুযোগ পান। ফলে ক্রেতারা নিশ্চিন্তমনে কেনাকাটা করতে পারেন। ফলে যেখানে কফি শপ আছে, সেখানকার মূল দোকানে বেচাকেনা ১৫ থেকে ৩৫ শতাংশ বেশি হয়।
বিশ্বজুড়ে কোচের ৯৮০টির বেশি দোকান আছে। তারা এখন কফি শপ চালু করা নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করছে। তাতে আশা করা হচ্ছে, আগামী চার বছরে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে তাদের ১০০টির বেশি কফি শপ চালু হতে পারে। ফলে তাদের ব্যবসা আরও বাড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
* যেখানে কফি শপ আছে, সেখানকার মূল দোকানে বেচাকেনা ১৫–৩৫ শতাংশ বেশি হয়।
* রালফ লরেন, কোচ, লুইস ভিটন, ডিওর ও প্রাডার মতো পোশাক ও বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলো এশিয়ায় দোকান খুলছে।
ম্যাককিনসে অ্যান্ড কোম্পানির জানুয়ারিতে প্রকাশিত দ্য স্টেট অব লাক্সারি প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিলাসবহুল শিল্পের মুনাফা প্রায় তিন গুণ হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্রয় বৃদ্ধির বড় অংশ—প্রায় ৮০ শতাংশ হয় মূল্যবৃদ্ধির কারণে, চাহিদা বৃদ্ধির কারণে নয়।
এদিকে ব্যবস্থাপনাবিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বেইন অ্যান্ড কোম্পানি জানায়, বিলাসবহুল পণ্যের কোম্পানিগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তাও রয়েছে। যেমন ২০২৪ সালে তাদের বিক্রি কমেছে ২ শতাংশ। কোভিড–১৯ মহামারি বাদ দিলে গত ১৫ বছরে এই শিল্প এই প্রথম প্রকৃত অর্থে সংকুচিত হলো।
কোচ ব্র্যান্ডের প্রধান নির্বাহী টড কান আরও বলেন, প্রথাগত ইউরোপীয় বিলাসবহুল পণ্যের বাজার গত ১৫–২০ বছরে বেড়ে ১০ গুণ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘চার মাসের বেতন জমিয়ে হ্যান্ডব্যাগ কেনো, কাউকে এ কথা বলতে আমি স্বস্তি বোধ করি না। আমাদের পণ্যের বড় অংশের দাম ৩০০ থেকে ৫০০ ডলারের মধ্যে। তরুণদের পক্ষে এসব কেনা খুবই সম্ভব।’
টড কানের মতে, শুধু জেন–জিদের মনোযোগ আকর্ষণ করাই কচের কাজ নয়।