ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে জুনে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে
যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছরের জুনে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এর পেছনে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি বা ট্যারিফ বড় কারণ হিসেবে কাজ করছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা। এতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকব্যবস্থা ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্তে অটল থাকছে।
মার্কিন শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত তথ্যমতে, জুন মাসে ভোক্তা মূল্যসূচক আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে, যা ফেব্রুয়ারির পর সর্বোচ্চ। মে মাসে এই হার ছিল ২ দশমিক ৪ শতাংশ।
এ ছাড়া মূল মূল্যস্ফীতি (যেখানে খাদ্য ও জ্বালানির অস্থিতিশীল মূল্য বাদ দেওয়া হয়) বার্ষিক হিসাবে ২ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে। আর গত জুনে মাসওয়ারি ভিত্তিতে মোট মূল্যস্ফীতি বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ এবং মূল মূল্যস্ফীতি বেড়েছে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ।
ট্যারিফের প্রভাব স্পষ্ট
ট্রাম্প প্রশাসনের বিশ্বব্যাপী যে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছে, তার প্রাথমিক প্রভাবেই মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। দেখা যাচ্ছে, যেসব পণ্যের ওপর ট্যারিফ আরোপ হয়েছে, সেগুলোর দামই তুলনামূলকভাবে বেশি বেড়েছে। যেমন ঘর সাজানোর সামগ্রীর দর এক মাসে ১ শতাংশ বেড়েছে, গৃহস্থালি যন্ত্রপাতির দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৯ শতাংশ এবং পোশাকের দাম বেড়েছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। অথচ কয়েক মাস ধরে এসব পণ্যের টানা দরপতন হয়েছিল।
আবার জ্বালানির দাম গত জুনে ১ শতাংশ বেড়েছে, যদিও মে মাসে তা ২ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছিল। মুদিপণ্যের দামও মাসব্যাপী শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ ও বছরওয়ারি হিসাবে ২ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে।
আরও দাম বাড়ার শঙ্কা
অর্থনীতিবিদেরা আশঙ্কা করছেন, আগামী ১ আগস্ট ট্রাম্প নতুন করে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য দেশের ওপর যে ট্যারিফ আরোপ করতে যাচ্ছেন, তা কার্যকর হলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে।
এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের নীতির ফলে মূল্যস্ফীতি যতটা বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল, ততটা হয়নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর উপদেষ্টারা অর্থনীতিবিদদের সতর্কবার্তাকে উপেক্ষা করছেন এবং নিজেদের নীতির পক্ষে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন। তবে কিছু খাতে দাম কমেছে। জুন মাসে নতুন ও পুরোনো গাড়ির দাম কমেছে এবং বিমানভাড়া শূন্য দশমিক ১ শতাংশ কমেছে।
সুদের হার কমবে না
মূল্যস্ফীতির এই ঊর্ধ্বগতি ফেডারেল রিজার্ভের জন্য সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত কঠিন করে তুলছে। ফলে ব্যাংকটি ‘অপেক্ষা করো ও দেখো’ কৌশলই বজায় রাখছে। ফেড সুদের হার কমাতে পারে তখনই, যদি মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে, অবনতির শঙ্কা না থাকে; অথবা শ্রমবাজারে বড় ধরনের দুর্বলতা দেখা দেয়। এই দুটি অবস্থার কোনোটাই এখনো বাস্তব হয়নি।
তবে ফেডের অভ্যন্তরে কিছু বিভাজন তৈরি হয়েছে। কিছু নীতিনির্ধারক এ মাসেই সুদের হার কমানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক মূল্যস্ফীতির ধারা ও ট্রাম্পের নতুন শুল্ক হুমকির কারণে সেই সম্ভাবনা দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফেডারেল রিজার্ভের পরবর্তী নীতিনির্ধারণী সভা অনুষ্ঠিত হবে ৩০ জুলাই।
ট্রাম্পের চাপ বাড়ছে
ফেডের এমন সতর্ক অবস্থানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অসন্তুষ্ট। তিনি বারবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসছেন, যেন দ্রুত সুদের হার কমানো হয়। ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে তিনি প্রায় প্রতিদিনই প্রকাশ্যে আক্রমণ করছেন এবং এমনকি পদত্যাগের আহ্বানও জানিয়েছেন।