খাদ্য চুক্তির মেয়াদ বাড়ালে রুশ ব্যাংককে সুইফট সংযোগ দেওয়ার প্রস্তাব

খাদ্য চুক্তির মেয়াদ বাড়ালে রাশিয়ার একটি ব্যাংক আবার সুইফটের সঙ্গে যুক্ত হবে
রয়টার্স

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে একটি প্রস্তাব দিয়েছেন। সেটি হলো, পুতিন যদি কৃষ্ণসাগর দিয়ে ইউক্রেনের খাদ্য পরিবহনের চুক্তির মেয়াদ বাড়ান, তাহলে তার বিনিময়ে রাশিয়ার একটি কৃষি ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি সুইফট আন্তর্জাতিক পেমেন্ট ব্যবস্থার সঙ্গে আবার সংযুক্ত হবে।
আগামী সোমবার খাদ্য পরিবহন চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। রাশিয়া এই চুক্তির মেয়াদ আর বাড়াবে না বলে হুমকি দিয়েছে। কারণ, তার নিজের কয়েকটি রপ্তানির চাহিদা পূরণ হয়নি। এই কৃষ্ণসাগর চুক্তির অধীনে শেষ দুটি রপ্তানি পণ্যবাহী জাহাজ এখন ইউক্রেনের ওডেসা বন্দরে বোঝাই করা হচ্ছে। খবর রয়টার্সের।

চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে রাশিয়ার বড় একটি দাবি হচ্ছে, দেশটির কৃষি–বিষয়ক ব্যাংক রোসেলখোজ ব্যাংককে সুইফট আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করা। রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর ২০২২ সালের জুন মাসে এই ব্যাংককে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। জোটের এক প্রতিনিধি গত মে মাসে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার এই ব্যাংককে ইউনিয়নের নেটওয়ার্কে যুক্ত করার কথা ভাবছে না।

তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার রোসেলখোজ ব্যাংকের একটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানিকে সুইফট ব্যবস্থার সঙ্গে আবার যুক্ত করার কথা ভাবছে, বিশেষ করে শস্য ও সার রপ্তানির ক্ষেত্রে তারা এই চিন্তা করছে। বিষয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত তিনটি সূত্র রয়টার্সকে গতকাল বুধবার এ তথ্য জানিয়েছে। তবে ইউরোপীয় কমিশন এই বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য করেনি।

এই বাস্তবতায় জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস পুতিনকে প্রস্তাব দিয়েছেন, রাশিয়া যদি এই কৃষ্ণসাগর পরিবহন চুক্তির মেয়াদ কয়েক মাস বাড়ায়, তাহলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রোসেলখোজ ব্যাংককে সুইফট ব্যবস্থার সঙ্গে পুনরায় সংযুক্ত করার সময় পাবে। উল্লিখিত তিনটি সূত্রের মধ্যে দুটি সূত্র এই তথ্য দিয়েছে।

জাতিসংঘের এক মুখপাত্র গতকাল বলেছেন, গুতেরেস রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে গত মঙ্গলবার এক চিঠিতে রাশিয়ার শস্য ও সার রপ্তানির বিষয়টি অব্যাহত রাখার উপায় বের করতে প্রস্তাব দিয়েছেন, সেই সঙ্গে ইউক্রেনের শস্য রপ্তানি অব্যাহত রাখার কথাও বলেছেন তিনি।

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিখ সাংবাদিকদের বলেছেন, রাশিয়ার এই কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা আছে, তা দূর করাই গুতেরেসের প্রস্তাবের মূল উদ্দেশ্য, যে বিষয়ে রাশিয়াও গুরুতর উদ্বেগ জানিয়েছে। এ ছাড়া কৃষ্ণসাগর দিয়ে ইউক্রেনের শস্য পরিবহন অব্যাহত থাকুক, জাতিসংঘ সেটাও চায়।
তবে ডুজারিখ এই প্রস্তাবের বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি। তবে তিনি জানিয়েছেন, জাতিসংঘ মহাসচিব সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং এই বিষয়ে আরও আলোচনা করতে তিনি রাজি।

এ বিষয়ে ক্রেমলিনের মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য করেননি।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর দেশটির বন্দরগুলো অবরুদ্ধ করে। এতে ইউক্রেনের শস্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায় এবং পরিণামে বিশ্ববাজারে খাদ্যমূল্য অনেকটা বেড়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে ২০২২ সালের জুলাই মাসে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে এই কৃষ্ণসাগর দিয়ে খাদ্য পরিবহনের চুক্তি হয়। রাশিয়াকে এই চুক্তিতে রাজি করাতে সেই সময় তিন বছরের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এর অধীনে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা রাশিয়ার খাদ্য ও সার রপ্তানিতে সহযোগিতা করতে একমত হন।

ইউক্রেনে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমারা রাশিয়ার যেসব পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তার মধ্যে অবশ্য খাদ্য ও সার নেই। তবে মস্কো বলছে, অর্থ পরিশোধ, উপকরণ ও বিমাজনিত যেসব বিধিনিষেধ আছে, সেসব কারণে খাদ্য ও সার রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে।

এদিকে সুইফটের সঙ্গে সংযোগ না থাকার কারণে রাশিয়ার শস্য রপ্তানির অর্থ পরিশোধ যাতে ব্যাহত না হয়, তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা মার্কিন ব্যাংক জেপি মরগান চেজ ও জে পি এম এনকে রাজি করিয়েছে। মার্কিন সরকারের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে তা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে আফ্রিকায় রাশিয়ার খাদ্য ও সার রপ্তানির মূল্য পরিশোধে যেন সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ আফ্রিকান এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করছে। জাতিসংঘের বাণিজ্যবিষয়ক কর্মকর্তারা গত মাসে রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

রয়টার্সের আগের এক সংবাদে বলা হয়েছে, রোসেলখোজ ব্যাংককে সুইফটে ফিরিয়ে নেওয়া ও সার রপ্তানি পুনরায় চালু করা ছাড়াও রাশিয়ার আরও কয়েকটি শর্ত আছে। সেগুলো হলো—রাশিয়াকে কৃষি যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ সরবরাহের সুযোগ করে দেওয়া, বিমা ও বিভিন্ন বন্দরে রুশ জাহাজ ও কার্গোর প্রবেশের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া, রুশ সার কোম্পানিগুলোর ব্যাংক হিসাব ও লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া।