টানা তিন মাস ধরে বিশ্ববাজারে খাদ্যের দাম বাড়ছে

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)ছবি: ডব্লিউএফপির টুইটার

বিশ্ববাজারে মে মাসে টানা তৃতীয় মাসের মতো খাদ্যের দাম বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে খাদ্যশস্য ও দুগ্ধজাত পণ্যের দাম; কমেছে চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিভাগের (এফএও) মাসভিত্তিক মূল্যসূচক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি গত এপ্রিল ও মে মাসে বেড়েছে। এরপর এফএওর প্রতিবেদনে জানা গেল, সারা বিশ্বেই খাদ্য মূল্যসূচক বেড়েছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ২০২২ সালে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই মূল্যস্ফীতি রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে গত বছর। বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের দুর্দশার অন্ত ছিল না। ২০২২ সালে এফএওর খাদ্যমূল্যের সূচক ছিল এ যাবৎকালের সবচেয়ে বেশি—১৪৪ দশমিক ৭। ২০২৩ সালে তা অনেকটাই কমে ১২৪ দশমিক দশমিক ৭-এ নেমে আসে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেও এফএও সূচক কমে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। এরপর আবার তা কিছুটা বেড়েছে, যদিও ২০২২ সালের তুলনায় তা এখনো অনেক কম।

আন্তর্জাতিক বাজারে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য হওয়া খাদ্যপণ্যের ভিত্তিতে এফএওর এই সূচক তৈরি করা হয়। এফএও জানিয়েছে, মে মাসে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ছিল ১২০ দশমিক ৪ পয়েন্ট; এপ্রিলের সংশোধিত সূচকের চেয়ে যা ছিল দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। তবে মে মাসের সূচক আগের বছরের চেয়ে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ কম।

গম, ভুট্টা, বার্লি প্রভৃতি শস্যের মূল উৎপাদন কেন্দ্র হলো যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাঞ্চল, ইউরোপ ও কৃষ্ণসাগরীয় অঞ্চল। কিন্তু এ বছর আবহাওয়া ও ভূরাজনৈতিক কারণে এসব অঞ্চলে চাষাবাদের পরিস্থিতি অনুকূল নয়। এর প্রভাবে গত মাসে দানাদার খাদ্যশস্যের দাম আগের মাসের তুলনায় ৬ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। সূচক বৃদ্ধির পেছনে এটিই মূল কারণ।

এদিকে পশ্চিম ইউরোপে দুধের উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রীষ্মকালীন ছুটির আগে দুগ্ধজাত পণ্যের চাহিদা বেড়ে যেতে পারে। ফলে মে মাসে দুগ্ধজাত পণ্যের দামও আগের মাসের চেয়ে ১ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে।

তবে চিনির মূল্যসূচক খানিকটা কমেছে। সংস্থাটি বলছে, বৃহত্তম চিনি উৎপাদক দেশ ব্রাজিলে পণ্যটির উৎপাদন বাড়ার প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে কৃষকেরা জমি থেকে আখ তুলতে শুরু করেছেন।

আখের উৎপাদন ভালো হওয়ায় বৈশ্বিক উৎপাদন ইতিবাচক দিকে মোড় নিতে পারে বলে মনে করছে এফএও। এমন প্রত্যাশার কারণে মে মাসে পণ্যটির মূল্যসূচক ৭ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। এ ছাড়া বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ার কারণেও চিনির দামে প্রভাব পড়েছে।

এফএও বলছে, জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়া প্রকারান্তরে চাহিদা কমে যাওয়ার ইঙ্গিত।

এদিকে মাংসের দামও কিছুটা কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে মুরগির দাম কিছুটা কমেছে, যদিও শূকরের মাংসের দাম কিছুটা বেড়েছে। এতে সামগ্রিকভাবে মাংসের দাম কিছুটা কমেছে।

এফএও আরও বলেছে, চলতি বছর বিশ্ববাজারে দানাদার খাদ্যের বেচাকেনা গত বছরের চেয়ে ১ দশমিক ৩ শতাংশ কমবে। এবার মোট ৪৮ কোটি ১০ লাখ টন দানাদার খাদ্যের বেচাকেনা হতে পারে। এফএও মনে করছে, এবার ভুট্টা বেচাকেনা কমে যেতে পারে। তবে বিশ্ববাজারে চালের বেচাকেনা অনেকটা বাড়বে।

বিশ্ববাজারে দানাদার খাদ্যের মজুত ১ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ৮৯ কোটি ৭০ লাখ টনে উন্নীত হতে পারে। এ ছাড়া ভুট্টা, বার্লি ও চালের মজুত বাড়বে, যদিও গমের মজুত কমতে পারে।