যুক্তরাষ্ট্রে আপাতত নীতি সুদহার বাড়বে না, অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাস

ফেডারেল রিজার্ভ বা ফেড আপাতত নীতি সদুহার বাড়াবে না বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা
ছবি : রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ আপাতত এখন আর নীতি সুদহার বাড়াবে না বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা। চলতি মাসের ১৯-২০ তারিখে ফেডের মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠকে নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখা হতে পারে বলে এক জরিপে এই অর্থনীতিবিদেরা মত দিয়েছেন।

অর্থনীতিবিদদের নিয়ে এ জরিপ পরিচালনা করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। সেখানে অর্থনীতিবিদেরা বলেছেন, সম্ভবত আগামী বছরের এপ্রিল–জুন ত্রৈমাসিকের আগপর্যন্ত ফেড সুদের হার অপরিবর্তিত রাখবে। এরপর সুদের হার কমানো হতে পারে।

তবে ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান গত আগস্টে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর এক সম্মেলনে বলেছিলেন, তিনি দীর্ঘ মেয়াদে উচ্চ সুদহার বজায় রাখতে চান। এমনকি তিনি এ–ও বলেছিলেন, মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রায় নামিয়ে আনতে আরও একবার নীতি সুদহার বাড়ানো প্রয়োজন হতে পারে।

ফেডারেল রিজার্ভের ওপেন মার্কেট কমিটির অন্য সদস্যরা পাওয়েলের এ কথার সঙ্গে একমত নন। গত বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ থেকে এ পর্যন্ত যে ৫২৫ ভিত্তি পয়েন্ট নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে, এর কী প্রভাব পড়ছে, সেটা দেখার জন্য তাঁরা আরও সময় নিতে চান। তাই আরেক দফা নীতি সুদহার বাড়ানোর সম্ভাবনা আপাতত নেই বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

৭ থেকে ১২ সেপ্টেম্বর রয়টার্স ৯৭ অর্থনীতিবিদের ওপর এ জরিপ পরিচালনা করে। ৯৭ জনের মধ্যে ৯৪ জন বা ৯৫ শতাংশের পূর্বাভাস, আগামী সপ্তাহের মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠকে বাজারের প্রত্যাশার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফেড নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখবে।
তবে জরিপে অংশ নেওয়া অন্তত ২০ শতাংশ অর্থনীতিবিদ ধারণা করছেন, চলতি বছরের মধ্যে আরও একবার সুদহার বাড়ানো হতে পারে। তিনজন অর্থনীতিবিদ আবার মনে করছেন, আগামী সপ্তাহের বৈঠকেই নীতি সুদহার বাড়ানো হবে।

ডয়চে ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ব্রেট রায়ান রয়টার্সকে বলেন, আগামী সপ্তাহের বৈঠকে ফেড সুদহার না বাড়ালেও চলতি বছরের মধ্যে আরও একবার নীতি সুদহার বাড়ানো হতে পারে। ফেডের নীতি প্রণেতারা যে সুদহারের পূর্বাভাস দিয়েছেন, তার ভিত্তিতে তিনি এ কথা বলেছেন।

ব্রেট রায়ান আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এখন পর্যন্ত সফলতা মিললেও ফেড বিষয়টিকে চূড়ান্ত গণ্য করতে পারে না।

এদিকে আজ বুধবার ফেড আগস্ট মাসের ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) প্রকাশ করবে। এ প্রতিবেদনে কী চিত্র পাওয়া যায়, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। ধারণা করা হচ্ছে, গত মাসে সিপিআই শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে, আগের মাস জুলাইয়ে যা শূন্য দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছিল। সেটা হলে আগস্টের মূল্যস্ফীতি ৩ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হবে।

চাকরির বাজার

এদিকে গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্ব বেড়ে ৩ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। কর্মসংস্থানের হার কমার কারণে বাজারসংশ্লিষ্টদের মধ্যে আশাবাদ তৈরি হয়েছে, ফেড আপাতত নীতি সুদহার বাড়াবে না।

কিন্তু অর্থনীতিবিদদের নিয়ে করা রয়টার্সের জরিপে জানা গেছে, চলতি বছর বেকারত্বের গড় হার দাঁড়াবে ৩ দশমিক ৭, ২০২৪ সালে যা কিছুটা বেড়ে দাঁড়াবে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থাৎ তখনো ফেড শতভাগ কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা থেকে খুব একটা দূরে থাকবে না।

রয়টার্সের আরেকটি জরিপে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ির দাম বাড়ছে। মাঝে কিছুদিন দাম কমার পর এখন আবারও বাড়ছে। সেই সঙ্গে দেশটির মানুষের সম্পদমূল্যও বেড়েছে। যদিও সিএনএনের আরেক সংবাদে বলা হয়েছে, সম্পদমূল্য বৃদ্ধি সত্ত্বেও এখনো অনেক মানুষ কষ্টে আছেন। এই পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি হ্রাসের হার কমবে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের আগে তা ফেডের লক্ষ্যমাত্রা ২ শতাংশের ঘরে নামবে না।

অর্থাৎ নীতি সুদহার কমানোর বাস্তবতা এখনো আসেনি। রয়টার্সের জরিপে অংশ নেওয়া ৭০ শতাংশ অর্থনীতিবিদ অবশ্য মনে করেন, আগামী জুনের মধ্যে একবার নীতি সুদহার কমানো হতে পারে।