শাওমি এবার বানিয়েছে বৈদ্যুতিক গাড়ি, নিতে চায় টেসলার বাজার

শাওমি লোগো

বৈদ্যুতিক গাড়ির জগতে প্রবেশ করল চীনের জনপ্রিয় স্মার্টফোন ব্র্যান্ড শাওমি। গত বৃহস্পতিবার শাওমি চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নিউ স্পিড আলট্রা ৭ (এসইউ ৭) মডেলের গাড়ির বাজারজাত কার্যক্রম শুরু করেছে।

শাওমির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লেই জুন বলেছেন, শাওমির প্রথম বৈদ্যুতিক গাড়ি ২৯ হাজার ৮৭৪ ডলার থেকে ৪১ হাজার ৪৯৭ ডলারে বিক্রি হবে।

সিএনএন জানিয়েছে, টেসলার একই মডেলের গাড়ির চেয়ে শাওমির এই মডেলের গাড়ির দাম চার হাজার ডলার কম রাখা হয়েছে।

গত সপ্তাহের শুরুতে লেই জুন বলেছিলেন, তিনি এসইউ ৭-কে সবচেয়ে সুন্দর, স্মার্ট ও চালানোর জন্য সবচেয়ে সহজ গাড়ি হিসেবে বাজারে ছাড়তে চান, যার দাম হবে ৬৯ হাজার ১৮০ ডলারের নিচে। গত বুধবার তিনি আরও বলেন, পোরশে ও টেসলার মতো স্বপ্নের গাড়ি বাজারে নিয়ে আসতে চায় শাওমি। সেরা গাড়ি বানাতে হলে এই দুটি কোম্পানির কাছ থেকে শেখা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

এর আগে শাওমি বলেছিল, বাজারে নতুন গাড়ি এনে তারা উচ্চ শ্রেণির ভোক্তাদের ধরতে চায়। তবে দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে তারা প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান নিয়েছে। চীনের বাজারে আমদানি করা পোরশে টেক্যানের দাম পড়ে ১ লাখ ২৪ হাজার ২৪৮ ডলার। এ ছাড়া টেসলার অন্যতম সেরা ব্র্যান্ড সেডান ধরনের মডেল এসের দাম পড়ে ৯৬ হাজার ৭০০ ডলার।

চীনের বাজারে বৈদ্যুতিক গাড়ির দাম বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেকটা কম। উদাহরণ হিসেবে বিওয়াইডির সবচেয়ে সাশ্রয়ী মডেল সিগ্যাল হ্যাচব্যাকের কথা বলা যায়; এর দাম মাত্র ৯ হাজার ৫৬৮ ডলার।

শাওমির এসইউ ৭ মডেলের বৈদ্যুতিক গাড়ির মাইলেজ ৭০০ কিলোমিটার; টেসলার মডেল ৩-এর চেয়ে তা বেশি বলে জানান লেই জুন।
বাজারজাতকরণ কার্যক্রম উদ্বোধনের দিনে প্রথম ২৭ মিনিটের মধ্যেই শাওমির এই মডেলের গাড়ি তৈরির ক্রয়াদেশ ৫০ হাজার ইউনিট ছাড়িয়ে গেছে। এ বাস্তবতায় নিজের উচ্ছ্বাস লুকিয়ে রাখতে পারেননি লেই জুন।

বৈদ্যুতিক গাড়ির জগতে শাওমি এমন এক সময়ে প্রবেশ করল, যখন চীনে এই গাড়ির বাজার দখল নিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। বিশ্বের বৈদ্যুতিক গাড়ির বৃহত্তম বাজার হচ্ছে চীন; গত এক দশকে এই খাতে চীন সরকার বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি দিয়েছে। একই সঙ্গে চীনের বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বীর সংখ্যা বেড়ে গেছে।

বর্তমানে দুই শতাধিক বড় কোম্পানি সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক গাড়ি এবং প্লাগ-ইন হাইব্রিড তৈরি করছে। চীনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো যাচ্ছে না। এই বাস্তবতায় গত বছর ভোক্তাদের চাহিদা কমে যাওয়ায় কোম্পানিগুলোর মধ্যে মূল্য প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়।

চীনের সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৩ সালে দেশটির বৈদ্যুতিক গাড়ি শিল্পের মুনাফার হার পাঁচ শতাংশে নেমে এসেছে। চীনের বৃহত্তম কোম্পানি বিইওয়াইডি চলতি সপ্তাহের শুরুতে জানায়, বেচাকেনা কমে যাওয়ায় গত ত্রৈমাসিকে তাদের মুনাফা হয়েছে দুই বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

গত সোমবার থেকে চীনের মূল ভূখণ্ডের ২৯টি শহরের বিক্রয়কেন্দ্রে শাওমির এসইউ ৭ গাড়ি প্রদর্শিত হচ্ছে।

গাড়ির বাজারে নতুন হলেও স্মার্টফোনের বাজারে শাওমি অনেকটাই অগ্রণী। কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে বৈশ্বিক ও চীনের স্মার্টফোন বাজারের ১৩ শতাংশ হিস্যা ছিল শাওমির।

২০২১ সালে শাওমি ১০ বিলিয়ন বা ১ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করে স্মার্ট বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির ঘোষণা দিয়েছিল।