পাঁচ ট্রিলিয়নের মাইলফলক ছুঁয়েছে ভারতের শেয়ারবাজার

শেয়ারবাজারগ্রাফিকস: প্রথম আলো

২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে ভারতের জিডিপি পাঁচ লাখ কোটি ডলার বা পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হবে বলে এত দিন প্রচারণা চালিয়েছে ভারতের নরেন্দ্র মোদির সরকার। কিন্তু তাদের সেই আশা পূরণ হওয়ার লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না।

জিডিপি পাঁচ লাখ কোটি ডলারে না উঠলেও ভারতের শেয়ারবাজারের মূলধন গত বুধবার পাঁচ লাখ কোটি ডলারের মাইলফলক ছুঁয়েছে। অর্থাৎ বুধবার এই প্রথম দিন শেষে পাঁচ লাখ কোটি ডলার হওয়ার ইতিহাস গড়ল তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির শেয়ারের মোট মূল্য; শেয়ারবাজারের পরিভাষায় যাকে বলে মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন। খবর লাইভমিন্ট।

ভারতের এখন সাধারণ নির্বাচন চলছে। নির্বাচনের আগে শেয়ারবাজারের গতি কিছুটা কমে গেলেও কয়েক দিন ধরে উঠছে ভারতের বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের (বিএসই) মূল সূচক সেনসেক্স। মাঝখানে মাত্র দুই দিন সামান্য কমেছিল শেয়ার সূচক। গত ৯ মে সূচক ছিল ৭২ হাজার ৪০৪ দশমিক ১৭; বুধবার তা ২৬৭ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট বেড়ে ৭৪ হাজার ২২১ দশমিক ০৬ অঙ্কে ওঠে। মাঝখানে ৯ কর্মদিবসে বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের দাম বেড়েছে ২২ দশমিক ৫৯ লাখ কোটি রুপি।

জানা যায়, গত বছরের ২৯ নভেম্বর বিএসইর তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মোট শেয়ারমূল্য প্রথমবার চার লাখ কোটি ডলারে ওঠে। গত বুধবার লেনদেনের মধ্যে ইতিহাসে এই প্রথম তা পাঁচ লাখ কোটি ডলারে ওঠে। তবে দিন শেষে তা নেমে আসে ৪ দশমিক ৯৭ লাখ কোটি ডলারে।

কয়েক বছর ধরেই ভালো করছে ভারতের শেয়ারবাজার। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, ভারতীয় শেয়ারবাজারের এই নজির তৈরি করা ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা। বিশ্বজুড়ে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, উচ্চ নীতি সুদহার, ভারতে লোকসভা নির্বাচন এসব কারণে দেশটিতে অস্থিরতা থাকলেও সূচক চাঙা।

বাজার বিশেষজ্ঞদের দাবি, বিএসই ও এনএসই—উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের মোট মূল্য পাঁচ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র, হংকং, জাপানের মতো বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলোর কাতারে উঠে এসেছে ভারত। অর্থনীতিকে আরও চাঙা করার ক্ষেত্রে তা সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, এর ফলে বাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারী কোম্পানি ও বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের প্রবাহ বাড়বে।

সংবাদে বলা হয়েছে, ভারতে ১৫ কোটির মতো ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট (স্টক, মিউচুয়াল ফান্ড, ইটিএফ ইত্যাদি কেনাকাটার ক্ষেত্রে পরিভাষাগত দিক থেকে এগুলোকে সিকিউরিটিজ বলা হয় আর এই সিকিউরিটিজ কেনার জন্য যে অ্যাকাউন্ট প্রয়োজন, তাকেই ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট বলে) রয়েছে। এই বাস্তবতায় খুচরা বিনিয়োগকারীরা বাজারে আসতে উৎসাহিত হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হিন্দুস্তান টাইমসের ব্রোকারেজ সংস্থা সিএলএসএর আশা, কয়েক বছরের মধ্যে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠবে। ২০২৭ সালের মধ্যে ভারত জাপানকে টপকে যাবে; ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতের অর্থনীতি ২৯ ট্রিলিয়ন বা ২৯ লাখ কোটি ডলারে পৌঁছাবে।

সিএলএসএ আরও বলেছে, ২০২৭ সালের মধ্যে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠবে; তখন শুধু চীন ও যুক্তরাষ্ট্র ভারতের চেয়ে এগিয়ে থাকবে। বড় ধরনের সংস্কার হলে ২০৫২ সালের মধ্যে ভারতের অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল রেখে শেয়ারবাজারের সম্মিলিত মূল্য সেই অনুপাতে বা তার চেয়ে বেশি হারে বাড়বে বলেই ধারণা করা যায়।

সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, বাজারে মোট শেয়ারমূল্য যত বাড়বে, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য তত সুবিধা। এর মধ্য দিয়ে তাদের পক্ষে শেয়ার ছেড়ে মূলধন সংগ্রহ সহজ হবে। সামগ্রিকভাবে ভারতের অর্থনীতিতেও তার প্রভাব পড়বে। সেই সঙ্গে শেয়ারবাজারের পাশাপাশি এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে ঋণপত্রের বাজারসহ আনুষঙ্গিক খাতেও।