টেসলা চীনে ‘মেগাপ্যাক ব্যাটারি’ কারখানা করছে, আবার কমিয়েছে গাড়ির দাম
চীনের সাংহাইয়ে মেগাপ্যাক ব্যাটারি উৎপাদন করবে ইলন মাস্কের কোম্পানি টেসলা। এ কারখানায় বছরে ১০ হাজার ব্যাটারি উৎপাদিত হবে। এদিকে চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে চলতি বছর পঞ্চমবারের মতো গাড়ির দাম কমিয়েছে টেসলা।
টেসলার দাপ্তরিক টুইটার অ্যাকাউন্টে চীনে কারখানা স্থাপনের খবর প্রকাশ করা হয়েছে। ইলন মাস্কও তা নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করেছেন। সেই সূত্রে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর দিয়েছে। তবে রয়টার্স জানিয়েছে, চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সিনহুয়া প্রথমে এ সংবাদ দেয়।
চীনের সাংহাইয়ে টেসলার বিশাল বিদ্যুৎ–চালিত গাড়ি উৎপাদন কারখানা আছে। সেই গাড়ি উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করার পাশাপাশি এ কারখানায় যে মেগাপ্যাক ব্যাটারি উৎপাদিত হবে, তা সারা পৃথিবীতে বিক্রি হবে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় টেসলার একটি মেগাপ্যাক কারখানা আছে। সেখানেও বছরে ১০ হাজার ব্যাটারি উৎপাদিত হচ্ছে।
মেগাপ্যাক বিশালাকার ব্যাটারি। এতে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ সংরক্ষণ করা যায়। বিদ্যুৎ গ্রিডের স্থিতিশীলতা রক্ষা ও বিদ্যুৎ–বিভ্রাট ঠেকাতে এই ব্যাটারি সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এই ব্যাটারিতে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ সংরক্ষণ করা যায় বলে বিদ্যুতের অতিরিক্ত উৎপাদন হলে এই ব্যাটারির সাহায্যে তা এক দেশ থেকে আরেক দেশে বা আরেক রাজ্যে পাঠিয়ে দেওয়া সম্ভব। ফলে অনিয়মিত উৎস থেকে প্রাপ্ত বিদ্যুৎ সংরক্ষণ করে প্রয়োজনের সময় বাড়তি চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে এই ব্যাটারি।
রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, সাংহাইয়ে এ কারখানা স্থাপন করে টেসলা চীনের ব্যাটারি সরবরাহব্যবস্থার সুবিধা নিতে চায়। সেই সঙ্গে এতে তার মেগাপ্যাক লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির দামও কমবে। বিশ্বব্যাপী এর ব্যবহার বাড়বে। বিশ্বে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদ্যুৎ সংরক্ষণে ব্যবহৃত ব্যাটারির চাহিদাও বাড়ছে। ফলে এ কারখানার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
টেসলা বিদ্যুৎ–চালিত গাড়ি দিয়েই মূল ব্যবসা করে। তবে ইলন মাস্ক সৌরবিদ্যুৎ ও ব্যাটারির ব্যবসাও বড় করতে চান, মোটামুটি বিদ্যুৎ–চালিত গাড়ির সমপর্যায়ে নিয়ে যেতে চান।
এদিকে চীনের বৃহৎ ব্যাটারি উৎপাদনকারী কোম্পানি সিএটিএল টেসলাসহ অন্য বাণিজ্য সহযোগীদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন করছে। সিএটিএলের চেয়ারম্যান রবিন জেং এখন বিদ্যুৎ–চালিত গাড়ির ব্যাটারির মধ্যেই ব্যবসা সীমিত রাখতে চান না।
এদিকে ২০১৯ সাল থেকে চীনের সাংহাই কারখানায় মডেল থ্রি-এর গাড়ি উৎপাদন করছে টেসলা। রয়টার্সের আরেক সংবাদে বলা হয়েছে, টেসলা সাংহাইয়ের এই গিগা ফ্যাক্টরির উৎপাদন সক্ষমতা বছরে সাড়ে চার লাখে উন্নীত করতে চায়।
কিন্তু চীনে বিদ্যুৎ–চালিত গাড়ির চাহিদা কমে গেছে। ২০২৩ সালের প্রথম দুই মাসে চীনে বিদ্যুৎ–চালিত গাড়ি বিক্রির প্রবৃদ্ধি ২০ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। অথচ গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ১৫০ শতাংশ।
গাড়ির দাম আবার কমিয়েছে টেসলা
উচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় বিশ্বজুড়ে নীতি সুদহার বৃদ্ধি করা হচ্ছে। কমছে চাহিদা। ফলে বাধ্য হয়েই আবার বিদ্যুৎ–চালিত গাড়ির (ইভি) দাম ২ থেকে ৬ শতাংশ কমিয়েছে টেসলা। এ নিয়ে জানুয়ারির পর পাঁচবার গাড়ির দাম কমাল টেসলা।
এ প্রসঙ্গে টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক বলেন, বিদ্যমান বাস্তবতায় অতিরিক্ত মুনাফা করার মানসিকতা ত্যাগ করেছেন তিনি। খবর দ্য ন্যাশনালের।
টেসলা মডেল থ্রি সেডান গাড়ির দাম কমিয়েছে এক হাজার ডলার। এ ছাড়া মডেল ওয়াই ক্রসওভারের দাম দুই হাজার ডলার কমানো হচ্ছে।
টেসলার অন্যতম দামি মডেল এস এবং মডেল এক্সের দাম কমানো হয়েছে পাঁচ হাজার ডলার করে। মডেল ওয়াইয়ের একটি নতুন সংস্করণও বাজারে এসেছে, যার দাম ৪৯ হাজার ৯৯০ ডলার।
চলতি বছরের শুরুতে টেসলার দাম কমানোর পর জানুয়ারিতে মাস্ক জানিয়েছিলেন, উৎপাদনের প্রায় দ্বিগুণ হারে পণ্যটির ক্রয়াদেশ পাচ্ছেন তাঁরা। কোম্পানিটি অবশ্য সরবরাহ ও চাহিদার গতিশীলতা ধরে রাখতে পারেনি। চীনসহ অনেক দেশেই এর চাহিদা কমেছে। শেষ প্রান্তিকে টেসলা গ্রাহকদের কাছে যা হস্তান্তর করা হয়েছে, তার চেয়ে প্রায় ১৮ হাজার বেশি গাড়ি উৎপাদন করেছে।