এবার পুঁজির ওপর নিয়ন্ত্রণ শিথিল হচ্ছে বেইজিং ও সাংহাইয়ে

চীনের পতাকা

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে এবার বড় দুই শহরে পুঁজির ওপর নিয়ন্ত্রণ শিথিল করছে চীন। এখন থেকে রাজধানী বেইজিং ও অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক শহর সাংহাইয়ে বিদেশিদের স্বাধীনভাবে অর্থ নিয়ে প্রবেশ করার এবং একইভাবে অর্থ নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার স্বাধীনতা দেবে দেশটি।

সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে চীনে এফডিআই বা প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ রেকর্ড পরিমাণ কমে যাওয়ার খবর প্রকাশিত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন।

সাংহাই পাইলট ফ্রি টেড জোন থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা (ব্যক্তি ও কোম্পানি) তাৎক্ষণিকভাবে অর্থ বাইরে নিয়ে যেতে পারবেন বলে জানিয়েছে সাংহাই নগর সরকার কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার তারা এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।

একই দিনে বেইজিং নগর সরকারও একই ধরনের প্রস্তাব দিয়েছে। অর্থাৎ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনা বাধায় অর্থ স্থানান্তরের সুযোগ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে তারা। এখন তারা এ প্রস্তাবের ওপর মানুষের মতামত চাইছে।

চীন সরকার বলেছে, উন্মুক্ত অর্থনীতি গড়ে তোলা ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে এসব নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।

চীনের মূলধনি হিসাব বদ্ধ প্রকৃতির, অর্থাৎ কোম্পানি ও ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা কঠোর আইন পরিপালন করা ছাড়া সে দেশ থেকে অর্থ নিয়ে যেতে পারেন না।

চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইউয়ানের ৬ শতাংশ দরপতন হয়েছে। অর্থনীতি গতি হারিয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ যেখানে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করছে, সেখানে চীনে পণ্যের মূল্য কমছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক অত্যন্ত আগ্রাসীভাবে মুদ্রানীতি শিথিল করছে। মুদ্রার দরপতন হলে দেশটিতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ বোধ করবেন না বিনিয়োগকারীরা, তখন পুঁজি বেরিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়বে।

চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে চীনের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ ১৯৯৮ সালের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। দেশটির বিদেশি মুদ্রা নিয়ন্ত্রক সংস্থা স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব ফরেন এক্সচেঞ্জ এ তথ্য দিয়েছে।

দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বছরের প্রথম আট মাসে এফডিআই আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ শতাংশ কমেছে।
এদিকে চীনের এই অর্থনৈতিক দুর্গতির কারণে দেশটিতে কর্মরত মার্কিন বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস কমেছে। গত মঙ্গলবার সাংহাইয়ের আমেরিকান চেম্বার অব কমার্সের এক জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৫২ শতাংশ বিনিয়োগকারী আগামী পাঁচ বছর চীনে ব্যবসার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী। ১৯৯৯ সালে যখন প্রথম এই জরিপ শুরু হয়, তখন থেকে ব্যবসায়ীদের আত্মবিশ্বাস আর কখনো এত কম ছিল না। ২০২২ সালে এই হার ছিল ৫৫ শতাংশ, ২০২১ সালে ছিল ৭৮ শতাংশ।

এ পরিস্থিতিতে সাংহাই নগর কর্তৃপক্ষ বিদেশি কর্মীদেরও তুষ্ট করার চেষ্টা করছে। হংকং, ম্যাকাও ও তাইওয়ানের মতো অঞ্চলের কর্মীরাও এখন থেকে বিনা বাধায় অর্থ স্থানান্তর করতে পারবেন।

পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে পিপলস ব্যাংক অব চায়না (পিবিওসি) বেশ কয়েকটি পশ্চিমা কোম্পানির সঙ্গে বৈঠক করেছে, যেমন জেপি মর্গ্যান, টেসলা, এইচএসবিসি। পিবিওসি বলেছে, দেশের আর্থিক খাত আরও উন্মুক্ত করা হবে। একই সঙ্গে আরও উন্নতি করা হবে বিদেশি কোম্পানির কর্মপরিবেশের।