জ্বালানি তেলের দাম আবারও ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে

ছবি: এএফপি

বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম আবারও ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট ওপেক। বাজারের চাহিদা ও জোগানের কারণে এমনটি হতে পারে বলে মনে করছে তারা।

বিশ্বের শীর্ষ তেল আমদানিকারক দেশ চীন শূন্য কোভিড নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। ফলে সেখানে চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়ছে। এতে এ বছর জ্বালানি তেলের বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকবে বলে ধারণা করছে ওপেক। আবার চাহিদা বেড়ে যাওয়ার বিপরীতে বিনিয়োগ-স্বল্পতাসহ নানা কারণে সরবরাহও সীমিত থাকবে। ওপেকের নেতারা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে সম্প্রতি এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ৮ বছরের মধ্যে প্রথম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। একপর্যায়ে তা কিছু সময়ের জন্য ১৩৯ ডলারে উঠে যায়। কিন্তু ব্যাপক মূল্যস্ফীতির কারণে পশ্চিমা দেশগুলোতে পণ্যের চাহিদা কমে যায়। তার ধাক্কায় তেলের দাম ধারাবাহিকভাবে কমতে শুরু করে। গত বছর প্রায় পুরো সময় চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে লকডাউনসহ কোভিডজনিত নানা বিধিনিষেধ ছিল। এতে দেশটিতে চাহিদা ছিল কম। এসব কারণে বিশ্ববাজারে জ্বালানির তেলের দাম আবারও যুদ্ধের আগের অবস্থায় ফিরে যায়।

গত বছর যখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়, তখন বিশ্বের অধিকাংশ দেশ করোনাভাইরাস মহামারির ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল। ঠিক সেই সময় যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থা ব্যাপক ঝুঁকির মুখে পড়ে। রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার কারণে বেড়ে যায় জ্বালানি তেলের দাম। তাতে জ্বালানি আমদানিকারক দেশগুলো উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে পড়ে। পশ্চিমা উন্নত দেশগুলোও এ মূল্যস্ফীতি থেকে বাদ যায়নি।

কিন্তু ওপেক মনে করছে, এ বছর তেলের বাজার আবারও ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরবে। তাতে ওপেক জোটের সদস্য দেশগুলোর আয় বাড়বে। আর দাম বাড়লে তেলের উত্তোলনও বাড়বে। তবে বিশ্বের জ্বালানি বিশ্লেষকেরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম আবারও ১০০ ডলার ছাড়ালে বিপদে পড়বে তেল আমদানিকারক দেশগুলো।

এ অবস্থায় রাশিয়া জ্বালানি তেলের উৎপাদন প্রতিদিন পাঁচ লাখ ব্যারেল কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। আগামী মার্চ থেকে তেলের উৎপাদন কমানো হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার নোভাক।

তেল কোম্পানির বিপুল মুনাফা

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বিশ্বের বড় ছয়টি জ্বালানি তেল কোম্পানি ২০২২ সালে সব মিলিয়ে ২১ হাজার ৫৪০ কোটি মার্কিন ডলার মুনাফা করেছে। সেগুলোর মধ্যে কেউ কেউ তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি মুনাফা করেছে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ২০২৩ সালের অগ্রাধিকার সংক্রান্ত এক বক্তব্যে বলেন, ‘আপনাদের মূল পণ্য হলো আমাদের মূল সমস্যা। আমাদের প্রয়োজন নবায়নযোগ্য পণ্যের বিপ্লব, আত্মঘাতী জীবাশ্ম জ্বালানির পুনরুত্থান নয়।’