নিষেধাজ্ঞায় কাহিল কিউবায় গুরুতর অর্থনৈতিক সংকট

ফাইল ছবি: এএফপি

কিউবার অর্থনৈতিক সংকট গভীর হচ্ছে। সম্প্রতি দেশটির জ্যেষ্ঠ নেতা ও মন্ত্রীরা টেলিভিশনের পর্দায় হাজির হয়ে অর্থনৈতিক সংকটের গুরুতর চিত্র হাজির করেছেন। নজীরবিহীনভাবে তাঁরা কিউবার অর্থনৈতিক সংকটের বিস্তারিত তুলে ধরছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, কমিউনিস্ট পার্টি–শাসিত দেশ কিউবায় টানা চার বছর ধরে অর্থনৈতিক সংকট চলছে। আমদানিনির্ভর এ দেশের রাজস্ব কমে গেছে, সেই সঙ্গে তৈরি হয়েছে বিদেশি মুদ্রার সংকট। আর এত সব সংকট নিয়েই এখন দেশটিকে চলতে হচ্ছে।

২০১৮ সালের পর কিউবার খাদ্য উৎপাদন, ওষুধ সরবরাহ ও যোগাযোগ খাতের সংকোচন হয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ–ঘাটতির কারণে চলতি বছরেও সেই ধারা অব্যাহত আছে।

প্রয়োজনীয় খাদ্য ও জ্বালানির বড় অংশ কিউবা আমদানি করে। কিন্তু মহামারির পর থেকে রাজস্ব কমতে শুরু করেছে। এক দিকে আছে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞা, আরেক দিকে আছে পর্যটন খাতের দুরবস্থা। অথচ একসময় কিউবার অর্থনীতির মূল খাতই ছিল পর্যটন।

কিউবার অর্থনীতিবিদ ওমর এভারলেনি বলেছেন, দেশের মন্ত্রীরা যেমন বলেছেন, পরিস্থিতি তেমন গুরুতরই। এ বছর প্রবৃদ্ধি হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।

দেশটির কৃষিমন্ত্রী ইদায়েল জেসাস পেরেজ বলেছেন, কিউবার শূকরের মাংস, চাল ও শুঁটিজাতীয় উদ্ভিদের উৎপাদন প্রাক্‌–সংকটকালের তুলনায় ৮০ শতাংশের কম, ডিমের উৎপাদনও কমেছে ৫০ শতাংশ। বাস্তবতা যা দাঁড়িয়েছে, তাতে জ্বালানি চাহিদার ৪০ শতাংশ, সারের চাহিদার ৪ শতাংশ আর প্রাণী খাদ্যের ২০ শতাংশ পাওয়া সম্ভব।

কিউবার হাসপাতালে এখন গজ ও তুলার মতো মৌলিক পণ্যের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। দেশটির প্রথম উপস্বাস্থ্যমন্ত্রী তানিয়া মার্গারিতা ক্রুজ টেলিভিশনের এক উপস্থাপনায় বলেছেন, ২০১৯ সালের তুলনায় এসব উপকরণের অন্তত ৩০ শতাংশ স্বল্পতা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া মৌলিক ওষুধের স্বল্পতা আছে ৬৮ শতাংশ।

সমাজতান্ত্রিক দেশ কিউবায় ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা খুবই কম, গণপরিবহনই তাই ভরসা। কিন্তু জ্বালানিসংকটের কারণে দেশটির গণপরিবহন খাতের কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে।

দেশটির পরিবহনমন্ত্রী এদুয়োর্দো রদরিগেজ দাভিলা বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের আগে হাভানা শহরে দিনে ২ হাজার ৫০০ বাস চলাচল করত; চার বছর আগে যা নেমে আসে ৬০০ বাসে। এখন এই সংখ্যা ৩০০।

কিউবার মন্ত্রীরা জানিয়েছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ পণ্যবাহী যান চলাচল ২০১৯ সালের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এসেছে, শিল্পের সক্ষমতা এখন ৩৫ শতাংশ।

এই পরিস্থিতিতে কিউবার সরকার স্বীকার করেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত অর্থনীতির সংস্কার প্রয়োজন। দেশটির স্থানীয় সরকার এ পরিস্থিতি নিরসনে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে, কিন্তু তহবিলসংকটের জন্য তেমন একটা সুবিধা করতে পারছে না।