ডিজেল রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা থেকে আংশিক সরেছে রাশিয়া

জ্বালানি তেল
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ডিজেল রপ্তানিতে যে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল রুশ সরকার, সেখান থেকে আংশিক সরে এসেছে তারা। মূলত অভ্যন্তরীণ বাজারের দাম স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে দুই সপ্তাহ আগে ডিজেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল দেশটি।

সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়ার তেল পরিশোধনাগারগুলো এখন বিশ্ববাজারে তেল রপ্তানি করতে পারবে, যদি তারা এটা নিশ্চিত করে যে তেলের ৫০ শতাংশের বেশি দেশীয় বাজারে বিক্রি হবে।

তথ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভরটেক্সার তথ্যানুসারে, রাশিয়ার অধিকাংশ ডিজেল এভাবে পাইপলাইনে রপ্তানি হয়; সামান্য কিছু তেল অবশ্য রেলপথে কৃষ্ণসাগরের বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে জাহাজে করে বিভিন্ন দেশে তা পাঠানো হয়।

রাশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম ডিজেল রপ্তানিকারক দেশ। গত ২১ সেপ্টেম্বর তারা ডিজেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। তবে শুধু ডিজেল নয়, এ নিষেধাজ্ঞা গ্যাসোলিন রপ্তানিতেও দেওয়া হয়। দেশটি অবশ্য সামান্য কিছু গ্যাসোলিন রপ্তানি করে। শুক্রবার ক্রেমলিন যে বিবৃতি দিয়েছে, সেখানে অবশ্য গ্যাসোলিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কথা বলা হয়নি।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন চলতি বছর সমুদ্রপথে রাশিয়ার ডিজেল আমদানি নিষিদ্ধ করলেও ডিজেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার খবরে সেখানেও ডিজেলের দাম বেড়েছিল। ইউরোপ নিজে রাশিয়ার ডিজেল না নিলেও বিশ্ববাজারে মস্কোর তেলের চালান দাম স্থিতিশীল রাখার জন্য জরুরি।

এদিকে ক্রেমলিনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের খবরে ইউরোপের বাজারে ডিজেলের খুচরা দাম গতকাল শুক্রবার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ পড়ে গেছে, যদি দিনের শেষভাগে মূল্য পরিস্থিতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

বলা হয়, ডিজেল হলো ইউরোপের অর্থনীতির চালিকা শক্তি। সেই মহাদেশে যত পণ্যবাহী ট্রাক ও ভ্যান চলাচল করে, তার বেশির ভাগই ডিজেলচালিত। সেই সঙ্গে মহাদেশের বিভিন্ন দেশে ঘর উষ্ণ রাখার জন্যও এই জ্বালানি ব্যবহার করা হয়।

চলতি বছর বিশ্ববাজারের ১৩ শতাংশ ডিজেল মস্কো সরবরাহ করেছে। ভরটেক্সা জানিয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার ডিজেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর দেশটি অন্যান্য দেশে, যেমন তুরস্ক ও ব্রাজিলে রপ্তানি বাড়িয়েছে।

রাশিয়ার রাজস্ব আয়ের বড় একটি অংশ আসে জ্বালানি রপ্তানি থেকে, যার মধ্যে আছে বিপুল পরিমাণে অপরিশোধিত তেল।

এদিকে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে রাশিয়া ও সৌদি আরব যেভাবে জোট বেঁধে উৎপাদন কমিয়েছে, তাতে জুন থেকে মধ্য সেপ্টেম্বর সময়ে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ৩৪ শতাংশ বেড়েছে।

এরপর অবশ্য দাম অনেকটা কমেছে। ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলে ৯৫ ডলার উঠে গিয়েছিল, সেটা কমে ৮৪ ডলারে নেমেছে। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত গত এক সপ্তাহে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ১২ শতাংশ কমেছে, সাপ্তাহিক দরপতনের নিরিখে মার্চ মাসের পর যা সর্বোচ্চ।

তেলের দাম কমে যাওয়ায় রুশ মুদ্রা রুবলেরও দরপতন হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার রুশ মুদ্রার দর ২ শতাংশের বেশি পড়েছে, যদিও পরে তা অনেকটা ঘুরে দাঁড়ায়। রুবলের দরপতনের অর্থ হলো, রাশিয়ার আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া।