পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় উল্টো বেড়েছে রুবলের দাম, বলছেন ভ্লাদিমির পুতিন

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার জন্য শাপেবর হয়েছে। দেশটি ডলারে লেনদেন করতে না পারায় তাদের মুদ্রা রুবল আরও শক্তিশালী হয়েছে বলে দাবি করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়া নিজ মুদ্রা রুবলে বৈদেশিক বাণিজ্য শুরু করে। ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, এখন রাশিয়ার মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রায় ৪০ শতাংশ হচ্ছে রুবলে। ডলার বা ইউরোতে রাশিয়া বাণিজ্য করছে না, সেই সঙ্গে রাশিয়ার বন্ধু নয়—এমন কোনো দেশের মুদ্রায়ও তারা বাণিজ্য করছে না। এই পরিস্থিতিতে রুবলের কদর বেড়েছে।

সিএনবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহের শেষ দিকে সেন্ট পিটার্সবার্গে ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক ফোরামে (এসপিআইইএফ) যোগ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেখানে তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার বন্ধু দেশগুলো এখন আমাদের বিশেষ মনোযোগ দাবি করছে; কারণ, তারাই বিশ্ব অর্থনীতির ভবিষ্যৎ। এরই মধ্যে এসব দেশগুলো রাশিয়ার তিন-চতুর্থাংশ বাণিজ্যের অংশীদার।’

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পশ্চিমারা মস্কোর ওপর যেসব নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, পশ্চিমা পৃথিবীর বাইরে তার প্রভাব নেই বললেই চলে। ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি রোখার চেষ্টায় ফল হয় না, বরং তা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হয়। দুবাইয়ের এক ব্যবসায়ী নেতা সম্প্রতি ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন। ভ্লাদিমির পুতিনের কথায় তার সত্যতা পাওয়া যায়।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ব্রাজিল, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো উদীয়মান বাজারগুলোর কথা উল্লেখ করে বলেন, ব্রিকস জোটের দেশগুলোর সঙ্গে স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেন বাড়ানোর চেষ্টা করবে মস্কো। বন্ধু নয়, এমন দেশগুলোর মুদ্রায় রাশিয়ার লেনদেন গত বছরের তুলনায় অর্ধেক হয়ে গেছে বলেও জানান তিনি।

ভ্লাদিমির পুতিন আরও বলেন, আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রমে রুবলের অংশ বাড়ছে, বর্তমানে যা প্রায় ৪০ শতাংশে উঠেছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রুশ আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে রুবলে লেনদেনের পরিমাণ এক বছর আগের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে।

রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ বাজার ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনার কথাও বলেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। যেমন, চলতি দশকের শেষ নাগাদ রাশিয়ার পুঁজিবাজারের আকার দ্বিগুণ করা, আমদানি কমানো ও স্থায়ী সম্পদে বিনিয়োগ বাড়ানো।

এদিকে রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের সঙ্গে চীনের মুদ্রা ইউয়ানেও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাড়ছে। সৌদি আরবের কাছ থেকে চীন ইউয়ানে তেল কেনার বন্দোবস্ত প্রায় করে ফেলেছে। বস্তুত রাশিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং মূল্যস্ফীতি রোধে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ যেভাবে আগ্রাসী হারে নীতি সুদহার বাড়ায়, এর জেরে ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যায়। এতে প্রবল ডলার-সংকট দেখা দিলে অনেক দেশ বাধ্য হয়ে অন্যান্য মুদ্রায় লেনদেন শুরু করে। ব্রিকসও ডলারের পরিবর্তে অভিন্ন মুদ্রা বা নিজেদের মুদ্রায় লেনদেন করতে চায়। সে কারণেও রুবলে আন্তর্জাতিক লেনদেন বাড়ছে।

যুদ্ধ ও হাজারটা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের চেয়ে রাশিয়ার ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত বছর দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ, যদিও ২০২২ সালে রাশিয়ার অর্থনীতি ১ দশমিক ২ শতাংশ সংকুচিত হয়েছিল। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৫ শতাংশ। এই দুই দেশের অর্থনীতির আকার অবশ্য এক নয়।

চলতি ২০২৪ সালেও রাশিয়ার ভালো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস হচ্ছে, চলতি বছর রাশিয়ার প্রবৃদ্ধি হবে ২ দশমিক ৬ শতাংশ। যদিও দেশটির সরকারের পূর্বাভাস, প্রবৃদ্ধি হবে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।

রাশিয়ার দাবি, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার জেরে মস্কোর গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো আরও স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। রাশিয়ার নাগরিকদের ব্যক্তিগত ব্যয় ও অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ স্থিতিশীল। পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা ও জ্বালানি তেলের উচ্চ মূল্য মস্কোর শক্তিশালী রপ্তানি আয় ধরে রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে। ভারত ও চীনের মতো দেশে রাশিয়ার তেল ও পণ্য রপ্তানি অব্যাহত রয়েছে।