পাকিস্তানে চলতি বছরে মূল্যস্ফীতি হতে পারে ২৯.৫ শতাংশ: বিশ্বব্যাংক

অর্থনৈতিক সংকটে পাকিস্তানে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। ট্রাক থেকে ভর্তুকি মূল্যে আটার বস্তা কিনতে ভিড় করেছেন সাধারণ মানুষ। গত ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের করাচিতে
ফাইল ছবি: রয়টার্স

অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত পাকিস্তানে চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ২৯ দশমিক ৫ শতাংশে উঠতে পারে বিশ্বব্যাংকের এক সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের দুর্গতি আরও বাড়বে। খবর দ্য ডনের

মূলত জ্বালানি ও খাদ্যের উচ্চমূল্য এবং মুদ্রার দুর্বলতার কারণে মূল্যস্ফীতি এতটা বেশি হতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২৩ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার আরও কমে যাবে। তাদের পূর্বাভাস, প্রবৃদ্ধি হতে পারে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। এ ছাড়া গত বছরের প্রলয়ংকরী বন্যার পর গত ২০ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম পাকিস্তানের কৃষি উৎপাদন কমতে পারে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সরবরাহব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়া, মানুষের আত্মবিশ্বাসে চির ধরা, উচ্চ সুদহার ও উচ্চ জ্বালানি মূল্যের কারণে পাকিস্তানে শিল্পোৎপাদন কমতে পারে। শিল্পোৎপাদন হ্রাস পাওয়ার অর্থ হলো, যোগাযোগ খাত ও খুচরা বাজারেও তার প্রভাব পড়বে। অর্থাৎ সেবা খাত সংকুচিত হবে।

সেই সঙ্গে দারিদ্র্যের হার বাড়বে। এক দিকে দুর্বল শ্রমবাজার, আরেক দিকে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, আইএমএফের ঋণ পেতে বিলম্ব ও নীতিগত অনিশ্চয়তা পাকিস্তানের সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে। ফলে বাড়তে পারে দারিদ্র্য।

বড় ধরনের সংকটে রয়েছে পাকিস্তান। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমতে কমতে তলানিতে ঠেকেছে। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি আকাশ ছুঁয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দ্বারস্থ হয় তারা। কিন্তু আইএমএফ ঋণের কিস্তি ছাড় করতে এখনো রাজি হয়নি।

দ্য ডনের সংবাদে বলা হয়েছে, আইএমএফের সঙ্গে কর্মী পর্যায়ের ঐকমত্য না হওয়া প্রসঙ্গে পাকিস্তান সরকারের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, আইএমএফ জনসমক্ষে বলছে গরিববান্ধব নীতি করতে; কিন্তু আদতে তারা যা বলছে, তাতে গরিব মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে যাবে।

আইএমএফ এখন চাইছে, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে। এ ছাড়া অন্য যেসব বিষয়ে তাদের অগ্রাধিকার পরিবর্তন হয়েছে, সেগুলো হলো মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারিত না রাখা, যুদ্ধবিধ্বস্ত ও নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত আফগানিস্তানে অর্থ পাচার বন্ধ করতে ব্যবস্থা নেওয়া, বন্ধুরাষ্ট্রগুলো পাকিস্তানকে সহায়তা করবে—এই মর্মে লিখিত নিশ্চয়তা ও বিদ্যুতে সারচার্জের বিধান অব্যাহত রাখা।

দ্য ডন আরও জানিয়েছে, আইএমএফ ধনীদের ওপর করারোপের কথা বললেও এখন বিক্রয় কর বৃদ্ধির জন্য চাপাচাপি করছে। এতে মূল্যস্ফীতির হার আরও বাড়বে। কিন্তু ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানের বিদেশি মুদ্রা লেনদেনে করারোপের প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে তারা। আবার বন্যার ক্ষয়ক্ষতি পোষাতে উচ্চ আয়ের মানুষের ওপর লেভি আরোপেরও বিরোধিতা করছে আইএমএফ।

আইএমএফের সবচেয়ে নিয়মিত গ্রাহক পাকিস্তান

ইকোনমিক টাইমসের এক খবরে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় পাকিস্তান গত ৭৫ বছরে ২৩ বার আইএমএফের বেইল আউট প্যাকেজ নিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের সাবেক গভর্নর মুর্তজা সাঈদ জিও নিউজকে বলেছেন, ‘বাস্তবতা হলো, আমরাই হলাম আইএমএফের সবচেয়ে নিয়মিত গ্রাহক।’

প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারতের সঙ্গে তুলনা দিয়ে মুর্তজা সাঈদ বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে একই সময় স্বাধীনতা অর্জন করা ভারত মাত্র সাতবার আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছে। ১৯৯১ সালে মনমোহন সিংহের যুগান্তকারী সংস্কারের পর থেকে তারা একবারও আইএমএফের কাছে যায়নি। অথচ পাকিস্তানের দুর্দশার যেন শেষ নেই।’