ডলার আবারও শক্তিশালী হয়েছে, কেন এটা ভালো সংবাদ নয়

মার্কিন ডলারছবি: রয়টার্স

গ্রিনব্যাক হিসেবে পরিচিত মার্কিন ডলারের বিনিময় মূল্য চলতি বছর বেশ খানিকটা বেড়েছে। গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার বৃদ্ধির ধারা থামালে ডলারের বিনিময় মূল্য ওঠানামা শুরু করে। কিন্তু মার্চে নীতি সুদ কমছে না, এমন খবর বাজারে রটে যাওয়ার পর ডলার আবার শক্তিশালী হতে শুরু করেছে।

সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, বিশ্বের অন্যান্য ছয়টি শক্তিশালী মুদ্রা, যেমন ব্রিটিশ পাউন্ড, ইউরো, জাপানি ইয়েন, সুইস ফ্রাঁ, কানাডীয় ডলার ও সুইডিশ ক্রোনার বিপরীতে মার্কিন ডলারের মান গত শুক্রবার পর্যন্ত বেড়েছে।

গত বছরের নভেম্বরে মার্কিন ডলারের মান পড়ে যায় এবং বছর শেষে এ ছয়টি মুদ্রার মধ্যে বিপরীতে তার পতনের ধারা দেখা যায়। তখন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ধারণা তৈরি হয়েছিল যে ফেডারেল রিজার্ভ চলতি বছরের মার্চে নীতি সুদহার কমাবে। কিন্তু ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল জানুয়ারিতে মুদ্রানীতিতে বলেছেন, মার্চে নীতি সুদহার কমানোর সম্ভাবনা কম। এরপর ডলার আবার শক্তিশালী হতে শুরু করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচক প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে বোঝা যাচ্ছে, ফেডারেল রিজার্ভ আরও বেশ কিছুদিন সুদহার বাড়তি রাখবে। জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে ৩ লাখ ৫৩ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ফলে নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে বেকারত্ব বৃদ্ধির যে আশঙ্কা ছিল, তা অনেকটাই কেটে গেছে। সবচেয়ে বড় কথা, ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তামূল্য সূচক ছিল ৩ দশমিক ৪ শতাংশ, যদিও এখনো এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ২ শতাংশের ওপরে।

মার্কিন ডলার শক্তিশালী হলে সে দেশের কোম্পানিগুলো বিপাকে পড়ে। কারণ, তাদের সিংহভাগ রাজস্ব আয় হয় অন্যান্য দেশ থেকে। ধরা যাক, ইউরোপের কোনো দেশে মার্কিন কোম্পানি কাজ করছে, সে দেশে তারা ইউরোতে রাজস্ব আয় করে। ফলে ইউরোর মান ডলারের বিপরীতে পড়ে গেলে, যখন সেই ইউরো ডলারের রূপান্তরিত করা হয়, তখন কোম্পানিগুলোর রাজস্ব কমে যায়। তবে ডলার শক্তিশালী হলে মার্কিন কোম্পানি ও ভোক্তাদের সুবিধা হয়, তখন আমদানি করা পণ্যের দাম কমে যায় এবং মার্কিন নাগরিকেরা অন্যান্য দেশে বেড়াতে গেলে ক্রয়ক্ষমতা বেড়ে যায়।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তের প্রভাবও মার্কিন ডলারের বিনিময় মূল্যে অনুভূত হয়।

জানুয়ারিতে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রেখেছে। এমনকি ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন ল্যাগার্ড চলতি বছরের গ্রীষ্মকালে নীতি সুদহার কমানোর ঘোষণা দিলেও মার্কিন ডলার শক্তিশালী হবে বলে মনে করেন বহুজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এলপিএল ফাইন্যান্সিয়ালের প্রধান কৌশলবিদ কুইন্সি ক্রসবি।

কুইন্সি ক্রসবি বলেন, হঠাৎই সুদের হারের পার্থক্যের বিষয়টি চলে এসেছে। হতে পারে সেটা ফেডের চেয়ে ধীরগতিতে কিংবা দ্রুতগতিতে।

মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বাড়লে সে দেশে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বেড়ে যায় এবং মুদ্রা শক্তিশালী হয়। শিগগিরই ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদ কমাবে না—বাজারে এই ধারণা তৈরি হওয়ার পর ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদহার আবার ৪ শতাংশের ওপরে চলে গেছে। এতে মার্কিন ডলার শক্তিশালী হয়েছে।

২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্বের অনেক দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রেও মূল্যস্ফীতির হার অনেক বেড়ে যায়। তখন থেকে ফেডারেল রিজার্ভ আগ্রাসীভাবে নীতি সুদহার বাড়াতে শুরু করে। ফেডের দেখাদেখি বিশ্বের অন্যান্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এই নীতি অনুসরণ করে।

একপর্যায়ে মূল্যস্ফীতির হার কমতে শুরু করলেও ফেডারেল রিজার্ভ ২০২৩ সালের জুলাই থেকে সুদহার অপরিবর্তিত রাখে। তখন থেকে ফেডের সুদহার ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশের মধ্যে।

জানুয়ারিতে মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠকে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে না আসা পর্যন্ত কিংবা তা ২ শতাংশের মধ্যে চলে আসবে—কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনে এই প্রত্যয় সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত সুদহার কমানো যথাযথ হবে না।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, নীতি সুদহার কমানোর সময় এলে ডলারের বিনিময় হার আবার কমে আসবে। বাজার–সংশ্লিষ্ট মানুষের ধারণা, আগামী মে ও জুন থেকে ফেড নীতি সুদহার কমাতে শুরু করবে।