চীনের কর্তৃপক্ষকে সমালোচনার পর জ্যাক মার সম্পদ অর্ধেক কমেছে

জ্যাক মা

তিন বছর আগে জ্যাক মার যে পরিমাণ সম্পদ ছিল, এখন তা অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে ধারণা করা হয়। তিন বছর আগে তিনি একটি বক্তৃতা দিয়েছিলেন, আর সেই বক্তৃতাই তাঁর কোম্পানি অ্যান্টের শেয়ার তালিকাভুক্তিকেই ঝামেলায় ফেলে দিয়েছিল। সেই সময় অ্যান্টের তালিকাভুক্তিকে মনে করা হচ্ছিল শেয়ারবাজারে সবচেয়ে বড় শেয়ার ছাড়ার ঘটনা।

সিএনএন জানায়, ব্লুমবার্গের বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স গত সপ্তাহে এমন ধারণা দিয়েছে যে গত বছরের তুলনায় এই বিজনেস মোগলের সম্পদ ৪১০ কোটি ডলার কমেছে। এর কারণ, অ্যান্ট গ্রুপের শেয়ারের ব্যাপক মূল্যপতন। এই আর্থিক প্রযুক্তিবিষয়ক কোম্পানিটির তিনি একজন সহপ্রতিষ্ঠাতা, তবে এখন আর তিনি এটির নিয়ন্ত্রণে নেই।

অ্যান্ট গ্রুপে জ্যাক মার ৯ দশমিক ৯ শতাংশ শেয়ারের মালিক। তিনি ই-কমার্স কোম্পানি আলিবাবারও সহপ্রতিষ্ঠাতা।

একসময় জ্যাক মা ছিলেন এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। তাঁর এখন সম্পদের পরিমাণ তিন হাজার কোটি ডলার। তাঁর সম্পদ সবচেয়ে বেশি ছিল ২০২০ সালে। সে সময় তাঁর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ১২০ কোটি ডলার। কিন্তু ওই ২০২০ সালেই তিনি ঝামেলায় পড়েন।

অ্যান্ট গ্রুপ চীনা মূল ভূখণ্ডে ডিজিটাল লেনদেন পরিষেবা আলিপে পরিচালনা করে। এই কোম্পানি সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে তারা ৭ হাজার ৮৫০ কোটি ডলার খরচ করে তাদের শেয়ার পুনঃ ক্রয় করবে। ২০২০ সালের দামের তুলনা করলে এখন তাদের ৭৫ শতাংশ অর্থ বা ২৩ হাজার কোটি ডলার কম খরচ করতে হবে।

সিএনএন বলছে, একত্রে হিসাব করলে ২০২০ সালের অক্টোবরের তুলনায় অ্যান্ট ও আলিবাবার বাজার মূলধন ৮৭ হাজার ৭০০ কোটি ডলার কমেছে। ওই সময়ে এই কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম সবচেয়ে উঁচুতে ওঠে। আর ঠিক ওই সময়েই জ্যাক মা চীনা আর্থিক নিয়ন্ত্রক ও ব্যাংকগুলোকে কঠোর সমালোচনা করে বক্তৃতা করেছিলেন।

অ্যান্ট তখন সাংহাই ও হংকং শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়ায় ছিল। তবে জ্যাক মার সমালোচনার পর চীনে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর ওপর নজিরবিহীন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়। দেশটির অন্যান্য প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোও তখন আরও বেশি নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার সামনে পড়ে।

এরপর ২০২০ সালের নভেম্বরে চীনের নিয়ন্ত্রকেরা অ্যান্টের ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের আইপিও বা শেয়ারের প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বাতিল করে এবং কোম্পানিটিকে তাদের ব্যবসা পুনর্গঠনের আদেশ দেয়।

সেই থেকে জ্যাক মা নিভৃতে চলে যান। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি জাপানে অবস্থান করছিলেন বলে খবর বেরোয়। সেখানে থাকেন তাঁর বন্ধু মাসা সন, যিনি সফটব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং আলিবাবা কোম্পানিতে একজন বিনিয়োগকারী। এ ছাড়া জ্যাক মা সময় কাটিয়েছেন হংকংয়েও।

এর বাইরে তিনি টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ভিজিটিং অধ্যাপক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। জ্যাক মা ইদানীং আগের চেয়েও বেশি সময় দিচ্ছেন জনহিতকর কাজে।

যেসব কোম্পানি তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন, সেগুলো থেকে তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন।

জানুয়ারি মাসে জ্যাক মা অ্যান্টের নিয়ন্ত্রণ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। এর আগে নিয়ন্ত্রকদের চাহিদামতো দুই বছর ধরে কোম্পানিটি নিজেদের পুনর্গঠন করে, ঋণ দেওয়ার কাজ থেকে তারা বিভিন্ন বিমা পণ্যের দিকে ঝোঁকে।

আর আলিবাবার চেয়ারম্যানের পদ থেকে তিনি সরে দাঁড়ান ২০১৯ সালে, যখন তাঁর বয়স হয় ৫৫ বছর।

কয়েক সপ্তাহ আগে অ্যান্ট এবং এর বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে চীনের আর্থিক নিয়ন্ত্রকেরা ৯৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার জরিমানা করে। অভিযোগ ছিল, ভোক্তা সুরক্ষা ও করপোরেট সুশাসন সম্পর্কিত নিয়মনীতি তারা ভঙ্গ করেছে। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, জরিমানা আরোপের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রকদের কঠোর ব্যবস্থা শেষ করা হচ্ছে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

গত মার্চে আলিবাবা ঘোষণা করে যে কোম্পানিটিকে ছয়টি আলাদা ইউনিটে বিভক্ত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এসব ইউনিটের জন্য আলাদা পরিচালনা পর্ষদ ও প্রধান নির্বাহী থাকবে। আলিবাবা বলে যে নতুন কাঠামোর ফলে কর্মতৎপরতা বাড়বে বলে তারা আশা করছে এবং বিনিয়োগকারীরাও এতে লাভবান হবেন।