চীনের বিওয়াইডির বিপুল ব্যবসা, বিক্রি করেছে ৩০ লাখ গাড়ি

অটো সাংহাই গাড়ি প্রদর্শনীতে বিওয়াইডি বুথ। এ বছরের এপ্রিলে চীনের সাংহাই শহরে এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়ছবি রয়টার্স

চীনের বিদ্যুৎ-চালিত গাড়ির কোম্পানি বিওয়াইডি ২০২৩ সালে বিপুল ব্যবসা করেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, গত বছর বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ি মিলিয়ে বিওয়াইডির ৩০ লাখ ২ হাজার ইউনিট গাড়ি বিক্রি হয়েছে। কোম্পানিটির ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬১ দশমিক ৯ শতাংশ।

চীনের সেনঝেনভিত্তিক এই কোম্পানি জানিয়েছে, গত বছর তাদের বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি হয়েছে ১৬ লাখ আর প্লাগ-ইন হাইব্রিড বিক্রি হয়েছে ১৪ লাখের বেশি।

বছরের শেষ মাস, অর্থাৎ ডিসেম্বরে বিওইয়াইডির মোট গাড়ি বিক্রি হয়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজার ১৭৮ ইউনিট। এর মধ্যে কেবল বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার ৭৫৪টি।

বিদ্যুৎ-চালিত গাড়ির সবচেয়ে বড় কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের টেসলা, তবে চীনের বিওয়াইডি বা ‘বিল্ড ইয়োর ড্রিম’ এখন টেসলাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। উৎপাদনের প্রান্তিক ভিত্তিতে হিসাব করলে, বিওয়াইডি ইতিমধ্যে টেসলাকে ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্বজুড়ে বিদ্যুৎ-চালিত গাড়ি বিক্রির ক্ষেত্রে তারা এখন দ্বিতীয়। তবে বিওয়াইডির মূল সাফল্য অন্য জায়গায়। তারা বিশ্বকে দেখিয়ে দিচ্ছে, চীনের গাড়িশিল্প কতটা এগিয়েছে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাড়ি রপ্তানিতে চীন এরই মধ্যে জাপানকে ছাড়িয়ে গেছে। অর্থাৎ এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গাড়ি রপ্তানিকারক দেশ চীন। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির এই দেশ এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত; তবে এর মধ্যে গাড়িশিল্প অন্ধকারে আলো দেখাচ্ছে।

বিওয়াইডির কমদামি গাড়ি বিক্রি হয় ১১ হাজার ডলারে। অথচ টেসলার মডেল ৩ সেডান গাড়ির দামই শুরু হয় ৩৬ হাজার ডলার থেকে। সেই সঙ্গে চীন হলো বিশ্বে বিদ্যুৎ-চালিত গাড়ির সবচেয়ে বড় বাজার। সেই বাজারে স্থানীয় কোম্পানি হিসেবে বিওয়াইডি সস্তায় গাড়ি ছেড়ে শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে। অন্য বাজারেও বিওয়াইডি সফল। জার্মানির ফক্সওয়াগন এত দিন ছিল চীনের বাজারে সর্বাধিক বিক্রীত গাড়ি—গত বছরের শুরুতে বিওয়াইডি তাদেরও স্থানচ্যুত করেছে। এ ছাড়া ব্যবসার সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে বিওয়াইডি হাঙ্গেরিতে কারখানা খুলতে যাচ্ছে।

২০২৪ সালের জন্য অর্থনৈতিক পূর্বাভাসে দ্য ইকোনমিস্ট বলেছে, নতুন বছরে বৈশ্বিক গাড়িশিল্পে ধীরগতি দেখা যাবে। এ বছর গাড়ি বিক্রি প্রাক্‌-মহামারি পর্যায়ে ফিরতে পারবে না। নতুন ব্যক্তিগত গাড়ি বিক্রির পরিমাণ বাড়বে ৩ শতাংশ, বাণিজ্যিক গাড়ি বিক্রিতে প্রবৃদ্ধি হবে মাত্র ১ শতাংশ। তবে কার্বন নিঃসরণ নিয়ে দেশে দেশে আইন আরও কঠোর হওয়ার কারণে বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি বাড়বে। এ খাতে প্রবৃদ্ধি হবে ২৫ শতাংশ। এই গাড়ির বাজার এখনো অতটা লাভজনক নয়, সে জন্য তাদের সরকারি ভর্তুকির ওপর নির্ভর করতে হবে।

বিশ্বের অধিকাংশ দেশ জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে বৈদ্যুতিক গাড়িতে জোর দিচ্ছে। সারা পৃথিবীতেই জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর গাড়ি থেকে বৈদ্যুতিক গাড়িতে উত্তরণ ঘটছে। কিন্তু এ প্রক্রিয়া অতটা সহজ হচ্ছে না। অবকাঠামোর অপ্রতুলতা ও সার্বিকভাবে ক্রেতাদের আকর্ষণ করার সহায়ক পরিবেশ কতটা তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দেশে দেশে সরকারকে এই খাতে বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।