জাকারবার্গ, বেজোস, অল্টম্যানকে যেভাবে বিপদে ফেলতে পারেন ইলন মাস্ক
ইলন মাস্ক তাঁর প্রতিযোগিতা করার মানসিকতার জন্য সুপরিচিত। একই সঙ্গে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীর তালিকাও বেশ বড়।
একটি খাঁচার মধ্যে লড়াই করতে ইলন মাস্ক ফেসবুকের মালিক প্রতিষ্ঠান মেটার প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন। অ্যামাজন ও ব্লু অরিজিনসের মালিক জেফ বেজোসকে তিনি ‘নকলবাজ’ বলে উপহাস করেছেন। আর অতি সম্প্রতি তিনি মামলা করেছেন ওপেনএআইয়ের স্যাম অল্টম্যানের বিরুদ্ধে।
এত দিন পর্যন্ত এগুলো ছিল কয়েকজন ধনী ও সফল ব্যক্তির মধ্যে ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিগত লড়াই; কিন্তু মাস্ক এবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনে স্থান পাচ্ছেন। ফলে তাঁর প্রভাব আরও বাড়বে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, সরকারে তাঁর যে ক্ষমতা হবে, তা তিনি নিজের কোম্পানিগুলোর সুবিধার জন্য ব্যবহার করতে পারেন আর ক্ষতি করতে পারেন প্রতিদ্বন্দ্বীদের।
কারও বিরুদ্ধে সরকারি তদন্ত শুরু করা বা বাতিল করা, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নতুন করে তৈরি করা বা আগে থেকে থাকা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা দুর্বল করা এবং এমনভাবে সরকারি কাজ বিতরণ করা, যাতে মাস্কের নিজের কোম্পানিগুলো সুবিধা পায়—এসব নিশ্চিত করতে ট্রাম্প প্রশাসনের ক্ষমতা ব্যবহার করা হতে পারে।
মাস্কের প্রতিনিধিকে মন্তব্য করতে বলা হলেও সিএনএন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পায়নি।
জেফ বেজোস
ধনীর তালিকায় শীর্ষে থাকার জন্য ইলন মাস্ক ও জেফ বেজোসের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়েছে। তবে তাঁদের মধ্যে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে মহাকাশশিল্প নিয়ে। মাস্কের স্পেসএক্স এবং বেজোসের ব্লু অরিজিনস সরকারি কাজ পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করেছে। তবে এখন যেহেতু মাস্ক ট্রাম্প প্রশাসনে থাকবেন, তাই তিনি নিজের প্রভাব ব্যবহার করে সরকারি কাজ বাগিয়ে নেন কি না, তা নিয়ে অনেকেই উদ্বিগ্ন।
শুধু মহাকাশ নয়, অ্যামাজনের প্রজেক্ট কুইপার একই সঙ্গে স্পেসএক্সের স্টারলিঙ্কের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে পৃথিবীর কক্ষপথে কৃত্রিম উপগ্রহ শিল্পে কে এগিয়ে যাবে, তা নিয়েও। এ কাজে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন লাগবে। অ্যামাজন পৃথিবীর কক্ষপথে ৩ হাজার ২০০ কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর জন্য এখন কাজ করছে।
ব্লু অরিজিনসের জন্য অবশ্য আরেকটি মাথাব্যথার কারণ সম্ভবত ঘটে গেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প নাসার প্রশাসক হিসেবে জ্যারেড আইজ্যাকম্যানের নাম ঘোষণা করেছেন। ইলন মাস্কের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
স্যাম অল্টম্যান
ওপেনএআইয়ের সঙ্গে মাস্কের বিবাদ অনেক পুরোনো।
২০১৫ সালে মাস্ক এ কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করেছিলেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি এই কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করেন। অভিযোগ, চ্যাটজিপিটি তৈরিকারী এই প্রতিষ্ঠান মুনাফা না করার পুরোনো প্রতিজ্ঞা থেকে সরে গিয়ে কিছু বেসরকারি গ্রাহকের জন্য আধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তি বানিয়েছে। তিনি চান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তাঁর এক্সএআইয়ের তৈরি করা ‘গ্রোক’ চ্যাটবটের কোড তিনি উন্মুক্ত করে দিয়েছেন।
ইলন মাস্ক চেয়েছেন জুরির মাধ্যমে বিচার। ওপেনএআই, স্যাম অল্টম্যান এবং আরেক সহপ্রতিষ্ঠাতা ও কোম্পানির প্রেসিডেন্ট গ্রেগ ব্রকম্যান এই ব্যবসা থেকে যে মুনাফা করেছেন, তা যেন তাঁরা ফেরত দেন, ইলন মাস্ক সেটাও চেয়েছেন।
মাস্ক এই মামলা তুলে নিলেও গত আগস্টে তিনি ওপেনএআই ও অল্টম্যানের বিরুদ্ধে নতুন মামলা করেন। অভিযোগ অবশ্য মোটামুটি এক। বলা হয়েছে, মাইক্রোসফটের সঙ্গে অংশীদারত্বে গিয়ে এবং কিছু পণ্যের বাণিজ্যিকীকরণ করে ওপেনএআই তাদের মুনাফা না করার নীতি থেকে সরে এসেছে।
মার্ক জাকারবার্গ
ফেসবুক একটি অ্যামোস–৬ উপগ্রহ মহাকাশে তুলতে চেয়েছিল। এর জন্য কোম্পানিটি দ্বারস্থ হয় স্পেসএক্সের। বিশ্বের যেসব জায়গায় ইন্টারনেট–সেবা নেই, সেখানেও যাতে মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে এই উপগ্রহ উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু স্পেসএক্স ওই উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করতে ব্যর্থ হয়। এই ঘটনা তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা বিবাদ তৈরিতে কতটা ভূমিকা রেখেছে, তা পরিষ্কার নয়। কিন্তু তাঁরা দুজন সুযোগ পেলেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একে অপরের বিরুদ্ধে অপমানসূচক বিভিন্ন মন্তব্য করেন। এমনকি এ পর্যায়ে মাস্ক ও জাকারবার্গ সত্যি সত্যিই একটি হাতাহাতি লড়াই করতে আলোচনা করেছিলেন।
আগস্টের দিকে অবশ্য ওই লড়াইয়ের কথা বন্ধ হয়ে যায়।
একচেটিয়া ব্যবসা করার অভিযোগে মেটার বিরুদ্ধে একটি মামলা চলমান আছে। ভবিষ্যতে ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশনের কাছ থেকে কোম্পানিটি আরও বেশি চাপের মুখোমুখি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
টেসলার অন্যান্য প্রতিযোগী
ট্রাম্প নির্বাচনে জেতার পর টেসলার শেয়ারের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে। বৃদ্ধি এখনো অব্যাহত আছে। বিদ্যুৎ–চালিত গাড়ির জগতে টেসলা প্রভাবশালী অবস্থানে রয়েছে। এবার মাস্ক সরকারের অংশ হওয়ার কারণে এই কোম্পানি আরও সুবিধা পেতে পারে। যেমন টেসলার স্বচালিত গাড়ি প্রযুক্তির নিরাপত্তা নিয়ে যে তদন্ত চলছে, তা বাতিল হতে পারে।
এ ছাড়া রয়েছে টেসলার প্রতিদ্বন্দ্বীদের সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি।
গত সপ্তাহে সরকারি দক্ষতা বিভাগে মাস্কের কো–চেয়ারম্যান বিবেক রামাস্বামী বিদ্যুৎ–চালিত গাড়ির স্টার্টআপ কোম্পানি রিভিয়ানকে ৬৬০ কোটি ডলার শর্তযুক্ত ঋণ দেওয়ার বিষয়টির সমালোচনা করেন। জ্বালানি মন্ত্রণালয় এই ঋণ দেওয়ার কথা। ২০১০ সালে টেসলা নিজেই ৪৬ কোটি ৫০ লাখ ডলারের একই ধরনের একটি ঋণ পেয়েছিল, যা এই কোম্পানির সাফল্যের পেছনে বড় অবদান রাখে।