যে পাঁচ উপায়ে মানিয়ে নিচ্ছেন আর্জেন্টিনার মানুষেরা

প্রতি মাসেই আর্জেন্টিনার মুদ্রা পেসোর দরপতন হচ্ছে
রয়টার্স

আর্জেন্টিনার মানুষের জীবন কয়েক দশক ধরেই টালমাটাল। এই সময় বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করতে হয়েছে তাঁদের, কিন্তু টানা দুই মাসে মূল্যস্ফীতি ১০০ শতাংশের ওপরে থাকলে পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে ওঠে।

বাস্তবতা হচ্ছে আর্জেন্টিনার মূল্যস্ফীতি রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে। ২০২২ সালের এপ্রিলের তুলনায় চলতি বছরের এপ্রিলে দেশটির মূল্যস্ফীতি ১০৮ দশমিক ৮ শতাংশে পৌঁছেছে, যা আর্জেন্টিনার ইতিহাসে ৩ দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। মার্চেও তা ১০০ শতাংশের ওপরে ছিল।

এই পরিস্থিতিতে আর্জেন্টাইনরা কী করবেন? দেশটির মানুষের মানিয়ে নেওয়ার কৌশল সম্পর্কে জানতে বিবিসি পাঁচজন আর্জেন্টাইনের সঙ্গে কথা বলেছে। তাঁরা নিজেদের মতো করে পথ বের করে নিচ্ছেন। দেখা যাক, তাঁরা কীভাবে মানিয়ে নেওয়ার কৌশল নির্ধারণ করছেন।

আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস এইরেসের ডিজিটাল শিল্পী মনিকা এখন সুদবিহীন কেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন। বিষয়টি হচ্ছে, এই ক্রেডিট কার্ড দিয়ে তিনি এখন যে পণ্য কিনছেন, তার দাম পরবর্তী সময়ে সুদ ছাড়াই পরিশোধ করছেন। দেশটির অনেক সুপারমার্কেট ও কাপড়ের দোকান এখন এই সুবিধা দিচ্ছে।

মনিকা জানান, সাধারণত তিন মাস সময়ের মধ্যে এই মূল্য পরিশোধ করা যায়।

বিষয়টি হলো, ২০ হাজার পেসো দামের জুতা কিনতে হলে মনিকা এখন চারটি সমান কিস্তিতে সঙ্গে সঙ্গে তা কিনে ফেলেন। কারণ, ২০ হাজার পেসো জমিয়ে সেই জুতা কিনতে এলে হয়তো দেখা যাবে, জুতার দাম ২৫ হাজার পেসো হয়ে গেছে। এখন তিনি সাধারণত সবকিছু কিস্তিতেই কেনেন।

মূল্য বৃদ্ধির কারণে অনেক আর্জেন্টাইনের পকেট এখন মাসের শেষ দিকে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দেশটির নিম্ন আয়ের মানুষেরা পণ্য বিনিময় করছেন। মার দেল প্লাতা শহরের পরিচ্ছন্নতাকর্মী টেরেসা এখন পণ্য বিনিময়ের এক ক্লাবে যোগ দিয়েছেন। তিনি বিবিসিকে জানান, গত সপ্তাহে এক জোড়া জুতার বিনিময়ে তিনি দুধ, টুথপেস্ট, রুটি ও অন্যান্য খাবার পেয়েছেন।

আরেকটি কৌশল হলো, হাতে কিছু টাকা থাকলে অপচনশীল পণ্য বেশি করে কিনে রাখা। বিষয়টি হলো, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মেনডোজা শহরের নার্স নয়রা হাতে অর্থ থাকলেই অপচনশীল পণ্য কিনে রাখেন। কারণ, অর্থের মূল যেকোনো সময় পড়ে যেতে পারে। এরপর যেগুলো ব্যবহার হয় না, সেগুলো আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের মাঝে বিক্রি করেন।

এ ছাড়া আরেকটি কৌশল হলো ডলার কিনে রাখা। পেসোর দরপতনের কারণে ডলারে বিনিয়োগ অনেক নিরাপদ, সে কারণেই আর্জেন্টাইনরা এই কৌশল ব্যবহার করছেন। গত এপ্রিলে এক দিনেই ডলারের বিনিময় মূল্য ৭ শতাংশ বেড়ে যায়। তাই দেশটির ছাত্র জর্জ ডলার কিনে রাখছেন। কিন্তু ডলার তো সস্তা নয়। এমনও হয়েছে যে অনানুষ্ঠানিক বাজার থেকে ৫৬৯ পেসোতে ডলার কিনতে হয়েছে তাঁকে। তারপরও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে ডলারের চেয়ে নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগ মাধ্যম নেই।

টাকার নোট যখন কাগজ হয়ে যায়, প্রতি মাসেই যখন তার মূল্য কমতে থাকে, তখন আর্জেন্টিনার মানুষেরা আরেকটি কাজ করছেন। সেটি হলো, ডলার কেনার মতো সামর্থ্য না থাকলে হাতে যত পেসো আছে তাড়াতাড়ি সেটা ব্যয় করে ফেলা। দেশটির এক দোকান কর্মচারী রবার্টা বলেন, এই মাসে যা কেনা যায়, পরের মাসে একই পরিমাণ অর্থ দিয়ে তা কেনা যায় না। সে কারণে পেসো জমিয়ে রাখার অর্থ হয় না।