ভারতে হীরাশিল্পে বিপ্লব

হীরা
ফাইল ছবি: এএফপি

ভারতে ডায়ামন্ড বা হীরাশিল্পে এখন বিপ্লব চলছে। ল্যাবরেটরিতে হীরা উৎপাদনে (ল্যাব-গ্রোন ডায়মন্ড) ব্যাপক সম্ভাবনা দেখে উদ্যোক্তারা যেমন এই ব্যবসায়ে ঝুঁকছেন, তেমনি সরকারও নীতি-সহায়তা প্রদান করছে।

মজার ব্যাপার হলো, বিশ্বে বিশ শতকে ল্যাবরেটরিতে হীরা উৎপাদনের কাজ শুরু হলেও প্রথম দিকে এটি তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি। গত ১০ বছরে এ ক্ষেত্রে প্রচুর অগ্রগতি ঘটে। বদৌলতে এ ধরনের হীরা দিয়ে জুয়েলারি বা অলংকার তৈরির প্রবণতাও দিন দিন জোরদার হচ্ছে।

সুইজারল্যান্ডের জুরিখভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বেইন অ্যান্ড কোম্পানির অংশীদার ওলিয়া লিন্ডে বলেন, ‘শুরুর দিকে ল্যাবরেটরিতে হীরা উৎপাদনের প্রক্রিয়াটি কঠিনই ছিল। কারণ, তখন কাজটি করার জন্য মেশিন বা যন্ত্রের সংখ্যা ছিল খুব কম। এ ছাড়া খুব কম বিজ্ঞানীই কাজটি করতে সক্ষম ছিলেন...। গত সাত বছরে বাজারে দক্ষ লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা এ খাতে সত্যিই বড় প্রবৃদ্ধি দেখেছি।’

ওলিয়া লিন্ডে আরও বলেন, ২০০০ সালের পর থেকে ল্যাবে হীরা উৎপাদনের খরচ প্রতি চার বছরে অর্ধেক হয়েছে। ফলে হীরার তৈরি অলংকারের দামও বেশ কমে গেছে। যেমন আজকাল ল্যাবে তৈরি করা জনপ্রিয় আকারের একটি এক ক্যারেটের এনগেজমেন্ট রিং বা হীরার আংটির দাম প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া হীরার সমতুল্য আংটির চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ কম হয়। মূলত দাম কমার কারণে ল্যাবে উৎপাদিত হীরার চাহিদা বাড়ছে। উদ্যোক্তারা এই খাতে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হচ্ছেন।

ভারতের ভান্ডারি ল্যাব গ্রোন ডায়মন্ডসের প্রধান নির্বাহী স্নেহাল দুঙ্গার্নি বলেন, ল্যাবে উৎপাদিত হীরা তুলনামূলকভাবে ব্যয় ও সময়সাশ্রয়ী। এটি মানবিক ও পরিবেশগত বিবেচনায়ও ভালো।

ভারত দীর্ঘদিন ধরেই বৈশ্বিক হীরা শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশেষ করে পশ্চিম ভারতের সুরাটকে বলা হয় হীরা পলিশিংয়ের রাজধানী।

ধারণা করা হয়, বিশ্বের প্রতি ১০টির মধ্যে ৯টি হীরাই সুরাটে পালিশ করা হয়। ভারত সরকারও এখন হীরাশিল্পের উন্নয়নে নজর দিয়েছে। সরকার চায়, বিশ্ববাজারে ভারত ল্যাবে উত্পাদিত হীরার ব্যবসায়ে একটি মূল শক্তি হয়ে উঠুক।

ভারতে ল্যাবে হীরা উত্পাদনের ব্যবসা গত ১০ বছরে বেশ সমৃদ্ধ হয়েছে। বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ভারত বর্তমানে ল্যাবরেটরিতে বছরে প্রায় তিন মিলিয়ন বা ৩০ লাখ হীরা উত্পাদন করে, যা মোট বৈশ্বিক উত্পাদনের ১৫ শতাংশ। অবশ্য ভারতের প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী দেশ চীন প্রায় একই হারে হীরা উৎপাদন করে থাকে।

ল্যাবে হীরা উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে ভারত সরকার এ বছরের জানুয়ারিতে হীরার বীজ আমদানির ওপর থেকে ৫ শতাংশ শুল্ক তুলে নিয়েছে। একই সঙ্গে ভারত সরকার দেশে নিজস্ব প্রচেষ্টায় হীরার বীজ উত্পাদন বিকাশে সহায়তা করার জন্য একটি তহবিলও ঘোষণা করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব বিপুল বনসাল বলেন, বৈশ্বিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে হীরার চাহিদাও বাড়বে।

ভারতের শীর্ষস্থানীয় কাটা ও পলিশড হীরা উৎপাদক হরি কৃষ্ণ এক্সপোর্টসের পরিচালক ঘনশ্যামভাই ঢোলাকিয়া ল্যাবে হীরা উত্পাদনের নতুন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলেছেন। তিনি বলেন, ‘আগামী তিন-চার বছরে আমরা ল্যাবে উৎপাদিত হীরার ব্যাপক চাহিদা ও এই ব্যবসায়ে প্রবৃদ্ধি দেখতে পাব।’ তিনি মনে করেন, ‘প্রাকৃতিক ও ল্যাবে উৎপাদিত উভয় ধরনের হীরারই আলাদা ভোক্তা রয়েছে।

এদিকে বিশ্বের বৃহত্তম জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান ডেনমার্কের প্যান্ডোরা। তারাও ল্যাবের হীরা উৎপাদনে মনোযোগ দিয়েছে। এতে হীরার বাজারের আরও বিকাশ ঘটবে এবং এই ব্যবসা পরিবেশবান্ধব হয়ে উঠবে বলে মনে করেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী।

সূত্র: বিবিসি