জ্বালানি তেলের দাম কমে ৭৫ ডলারের নিচে 

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণসীমা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়ার প্রভাবও বাজারে পড়েছে। তাই চাহিদা বৃদ্ধির পূর্বাভাস সত্ত্বেও দাম অতটা কমেনি। 

জার্মানির একটি তেল পরিশোধনাগার
ছবি: রয়টার্স

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম গতকাল বুধবার কিছুটা বেড়েছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ তেলের বাজারে চাহিদার তুলনায় জোগান কমে যাবে অর্থাৎ তেলের চাহিদা বাড়বে, সেই আশায় বুধবার সকালে তেলের দাম বেড়েছে। 

অয়েল প্রাইস ডট কমের তথ্যানুসারে, বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ইস্টার্ন ডে টাইম অনুসারে সকাল সাতটায় ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম বাড়ে শূন্য দশমিক ৪১ শতাংশ এবং জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ব্রেন্ট ক্রুডের দাম শূন্য দশমিক ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তাতে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৭৫ ডলার ছাড়িয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে দাম আবার ৭৫ ডলারের নিচে নেমে আসে।

তবে সামগ্রিকভাবে জ্বালানি তেলের দাম তেমন একটা বাড়েনি। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও চীনের ধারাবাহিকতাহীন অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের কারণে বাজারে একধরনের অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। মূলত এর জেরেই তেলের দাম অতটা বাড়েনি। 

অয়েল প্রাইস ডট কম জানিয়েছে, এপ্রিল মাসের চীনের শিল্পোৎপাদন বেড়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। অথচ রয়টার্সের অর্থনীতিবিদ জরিপের পূর্বাভাস ছিল, এই প্রবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। গত মাসে চীনের খুচরা বিক্রয়ের ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস ছিল ২১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণসীমা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়ার প্রভাবও বাজারে পড়েছে। 

এদিকে চীনের সামষ্টিক অর্থনীতির সব পরিসংখ্যান প্রত্যাশামতো না হলেও ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) গত মঙ্গলবার জ্বালানি তেলের চাহিদার হিসাব হালনাগাদ করেছে। চীনের প্রবৃদ্ধির হার প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে যাবে, এই ধারণার ভিত্তিতে তারা চাহিদা হালনাগাদ করেছে। আইইএ জানিয়েছে, গত মার্চে চীনে দৈনিক তেলের চাহিদা ছিল ১ কোটি ১৬ লাখ ব্যারেল। 

আইইএ মনে করছে, চলতি বছর বৈশ্বিক তেলের চাহিদা দৈনিক ২২ লাখ ব্যারেল বাড়তে পারে। মোট চাহিদা দাঁড়াতে পারে দৈনিক ১০২ মিলিয়ন বা ১০ কোটি ২০ লাখ ব্যারেল। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ ধরে যেভাবে তেলের দাম কমছে, তার সঙ্গে বছরের শেষ ভাগে বাজারে চাহিদা এতটা বৃদ্ধির পূর্বাভাস সাংঘর্ষিক। 

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেশ কয়েক বছর কমই ছিল। ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসজনিত বিধিনিষেধ উঠে গেলে চাহিদা বাড়তে শুরু করে। তখন থেকেই বাড়তে শুরু করে তেলের দাম। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। 

এই বাস্তবতায় বাংলাদেশেও দুই দফা তেলের দাম বাড়ানো হয়। এরপর একবার সামান্য কমানো হয়। এই ধাক্কায় মূল্যস্ফীতির হার অনেকটা বেড়েছে। দাম বাড়ানোর সময় সরকারের মন্ত্রীরা বলেছিলেন, তেলের দাম বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। অর্থাৎ বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে দেশে দাম বাড়ানো হবে, আবার কমলে দাম কমানো হবে। 

কিন্তু ২০২২ সালের শেষ দিকে এসে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলারের নিচে নেমে আসে। তখন রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বছরের শেষ প্রান্তিকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দর যে হারে কমেছে, তার কারণ হলো বিশ্ব অর্থনীতির বেহালজনিত উদ্বেগ। চলতি বছর বিশ্বের অনেক দেশেই মন্দার আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল। যদি সেটা হয়, তাহলে তেলের চাহিদা কমে যাবে। সে কারণেই ধারাবাহিকভাবে তেলের দাম কমছে। 

২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে বিশ্ববাজারে গড়ে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম ছিল ৪২ ডলার। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে যা ছিল ৪৯ ডলার। এর পর থেকে তা বাড়তে থাকে—ফেব্রুয়ারিতে ৫৩ ডলার, মার্চে ৬০, এপ্রিলে ৬৫, মে মাসে ৬৪, জুনে ৬৬, জুলাইয়ে ৭৩ ও আগস্টে ৭৪ ডলার। অক্টোবরে এই দাম ৮৫ ডলারে ওঠে। সে সময়ই দেশের বাজারে তেলের দাম বাড়ানো হয়। 

এখন জ্বালানি তেলের দাম ৭৫ ডলারের নিচে নেমে এসেছে। অনেক দিন ধরেই তেলের দাম ৭০ থেকে ৮০ ডলারের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। তবে দেশের বাজারে দাম কমানোর কোনো উদ্যোগ এখনো দেখা যায়নি।