তেলের দাম বাড়াতে মরিয়া ওপেক, উৎপাদন আবার কমাতে পারে

জ্বালানি তেল
প্রতীকী ছবি: রয়টার্স

সেপ্টেম্বর মাসের পর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ২০ শতাংশ কমে যাওয়ার কারণে ওপেক ও সহযোগী দেশগুলো এখন তেল সরবরাহ আরও কমানো হবে কি না, তা বিবেচনা করছে। চলতি মাসের শেষ দিকে ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হবে।

রয়টার্স জানিয়েছে, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়াতে এ বছর দফায় দফায় তেলের সরবরাহ কমিয়েছে ওপেক ও সহযোগী দেশগুলো। এর ফলে তেলের দাম বাড়তে শুরু করে এবং একপর্যায়ে তা প্রতি ব্যারেল ৯৮ ডলারে উঠে যায়। কিন্তু এরপর বিশ্ববাজারে চাহিদা কমে যাওয়া ও আগামী বছর বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হওয়ায় তেলের দাম আবার কমতে শুরু করে। এখন তা প্রতি ব্যারেল ৭৯ ডলারে নেমে এসেছে।

২০২২ সালের শেষ ভাগে ওপেক ও সহযোগী দেশগুলো তেলের উৎপাদন কমাতে শুরু করে। এই প্রক্রিয়ায় সৌদি আরব, রাশিয়া ও অন্যান্য সহযোগী দেশগুলো বাজার থেকে দৈনিক ৫ দশমিক ১৬ মিলিয়ন বা ৫১ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল তেলের সরবরাহ প্রত্যাহার করে নেয়, যা দৈনিক বৈশ্বিক চাহিদার প্রায় ৫ শতাংশ। এর মধ্যে ওপেক ও সহযোগী দেশগুলো সম্মিলিতভাবে দৈনিক ৩ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন বা ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল সরবরাহ কমায় এবং বাকিটা কমায় সৌদি আরব ও রাশিয়া স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে।

ওপেকের সূত্রগুলো রয়টার্সকে বলেছে, বাজারের মৌলভিত্তি শক্তিশালী হলেও অস্থিরতা বেড়েছে, পরবর্তী বৈঠকের আগে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া সুখকর নয়। এই পরিস্থিতিতে ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর মন্ত্রীরা তেলের দাম বাড়াতে আরও কী করা যায়, সে বিষয়ে মত দেবেন।

২৬ নভেম্বর এই বৈঠক হওয়ার কথা। চলতি বছরের জুন মাসে তাদের সিদ্ধান্ত ছিল যে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আগের তুলনায় দৈনিক তেল সরবরাহ ৩ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন বা ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল কম রাখা হবে।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে রয়টার্স ওপেক ও সৌদি আরবের তেল মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে সাড়া পায়নি।

চলতি সপ্তাহে তেলের দাম কমার প্রবণতা আরও শক্তিশালী হয়েছে। যদিও এক প্রতিবেদনে ওপেক বলেছে, নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সত্ত্বেও তেলের বাজারের মৌলভিত্তি জোরালো রয়েছে। শুধু তা–ই নয়, ২০২৪ সালে তেলের চাহিদাও ভালো থাকবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়।

তবে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি চলতি সপ্তাহে তেলের বাজারের হালনাগাদ পূর্বাভাস প্রতিবেদনে বলেছে, ২০২৪ সালে চাহিদা কমে যেতে পারে এবং বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে তেলের সরবরাহও বেড়ে যেতে পারে।

তেলের সরবরাহ আরও কমানো হবে কি না, তা নিয়ে অবশ্য ওপেকের মধ্যেই মতভেদ আছে বলে রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়। একটি পক্ষ রয়টার্সকে বলেছে, তেল সরবরাহ আরও কমানোর প্রয়োজন হবে। আরেকটি পক্ষ বলেছে, সরবরাহ কমানো নিয়ে আলোচনা হবে কি না, সে বিষয়ে কথা বলার এখনো সময় আসেনি।

তেলের দাম কত রাখা হবে, সে বিষয়ে ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর লক্ষ্যমাত্রা নেই। তবে এসব দেশের আয়ের মূল উৎস হচ্ছে জ্বালানি তেল।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, তেল সরবরাহ কমানোর কারণে আগামী বছর সৌদি আরবের জিডিপি সংকুচিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তারপরও এ বিষয়ে সৌদি আরব এখনো কঠোর অবস্থানে রয়েছে। অন্যান্য দেশ যেন তেল সরবরাহ হ্রাসের সিদ্ধান্ত আরও কঠোরভাবে মানে, সে বিষয়ে তারা চাপাচাপি করে।

জিডিপি সংকোচনের আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, সৌদি আরব অন্তত ২০২৪ সালের প্রথম ভাগ পর্যন্ত তেলের উৎপাদন হ্রাসের সিদ্ধান্তে অটল থাকবে।