আরব আমিরাতের জন্য স্বস্তি, বাদ পড়েছে আর্থিক অপরাধ নজরদারির তালিকা থেকে
অবৈধ অর্থের প্রবাহের ঝুঁকিতে থাকা দেশের তালিকা থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে (ইউএই) বাদ দিয়েছে ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্স (এফএটিএফ)। এর ফলে দেশটির বিষয়ে বৈশ্বিক আস্থা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি বৈধ পথে ইউএই আরও বেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে বলেও মনে করা হচ্ছে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, আর্থিক অপরাধ প্রবাহ মোকাবিলায় এর সঙ্গে যুক্ত দেশগুলোর ওপর নজরদারি করে থাকে ফ্রান্সভিত্তিক সংস্থা এফএটিএফ। সংস্থাটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত প্রায় দুই ডজন দেশকে ‘ধূসর’ তালিকায় রেখেছে। গত শুক্রবার ওই তালিকা থেকে আরব আমিরাতকে বাদ দেওয়া হয়।
উপসাগরীয় শহর আবুধাবি একসময় মুক্তা ও মাছ ব্যবসার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। তবে ১৯৫০-এর দশকের শেষের দিকে আবুধাবিতে তেলের খনি খুঁজে পাওয়া যায়। সেই তেল বাণিজ্যের ওপর ভর করেই সংযুক্ত আরব আমিরাত এখন বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ, যা বৈশ্বিক অর্থ প্রবাহের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলেও পরিণত হয়েছে।
বর্তমানে কোটিপতি, ব্যাংকার ও হেজ তহবিলের জন্য একটি আকর্ষণীয় জায়গা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে আবুধাবি। এর মাধ্যমে দেশটিতে অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসী অর্থায়নের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এ কারণে ২০২২ সালে দেশটিকে নজরদারিতে রেখেছিল এফএটিএফ।
এদিকে ধূসর তালিকাভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও সংযুক্ত আরব আমিরাত বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের আকর্ষণ করতে থাকে। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে এটি ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রতিষ্ঠান এবং রাশিয়ার ধনীদের জনপ্রিয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। আর গত বছর বেলজিয়ামকে পেছনে ফেলে পলিশ করা হয়নি এমন হীরার বৈশ্বিক বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে উপসাগরীয় এই দেশটি।
তবে অর্থ-সম্পদ বাড়ার পাশাপাশি আর্থিক অপরাধের সঙ্গে দেশটির সম্পৃক্ততা বেড়েছে। এর ধারাবাহিকতায় অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়নের ক্ষেত্রে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে একটি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে তালিকায় রাখে ইউরোপীয় ইউনিয়ন; যে তালিকায় রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, উত্তর কোরিয়া ও আফগানিস্তানের মতো দেশ।
ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় থাকায় আন্তর্জাতিক লেনদেন ও বৈধ বিনিয়োগের প্রবাহ কমে যায়। এ ছাড়া উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে বর্তমানে আর্থিক পরিষেবা, বাণিজ্য ও পর্যটনের মতো তেলবহির্ভূত খাতে প্রতিযোগিতা বাড়ছে। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছিল ইউএই। এর অংশ হিসেবে আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে অর্থ পাচারবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ ছাড়া আর্থিক তদন্ত ও বিচার ত্বরান্বিত করা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা ও ভার্চ্যুয়াল সম্পদ নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিচ্ছে দেশটি।