মুদ্রার অব্যাহত দরপতনে চরম সংকটে পাকিস্তান

চরম সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তানের রাজনীতি ও অর্থনীতি। ডলারের বিপরীতে দেশটির মুদ্রা রুপির মান ধারাবাহিকভাবে কমছে। গতকাল সোমবার দেশটির আন্তব্যাংক বাজারে ১ ডলারের মান কমে দাঁড়িয়েছে ২২৯ দশমিক ৮৮ রুপি। খবর দ্য ডন–এর।

পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান (এসবিপি) জানিয়েছে, ডলারের বিপরীতে রুপির শূন্য দশমিক ৬৬ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে। ফলে দেশটির আন্তব্যাংক বাজারে ডলারের ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যের মধ্যে বড় ব্যবধান দেখা গেছে।

গত ৭ এপ্রিল সংসদে আস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতা থেকে উৎখাত হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এরপর থেকে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে গত ২২ জুলাই পর্যন্ত মার্কিন ডলারের বিপরীতে মুদ্রার দর ২১ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে।

আর্থিক খাতের তথ্য সরবরাহকারী সংস্থা মেটিস গ্লোবালের পরিচালক সাদ বিন নাসের দ্য ডনকে বলেছেন, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন ঘিরে পাকিস্তানে যে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তার কারণে রুপির ওপর চাপ পড়েছে। ফলে একদিকে আমদানিকারকেরা দ্রুততম সময়ে বেশি পরিমাণে ঋণপত্র খুলছে, অন্যদিকে রপ্তানিকারকেরা আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিদেশে থাকা তাদের আয়ের অর্থ সময়মতো দেশে ফেরত আনছে না।

রপ্তানিকারকেরা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে রুপির বিনিময় হার বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এই সংকট কাটাতে রপ্তানিকারকদের অর্থপ্রাপ্তির পর অবিলম্বে তা ডলার থেকে রুপিতে রূপান্তর নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন সাদ বিন নাসের। তিনি বলেন, পাকিস্তানের সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতায় এ ধরনের নির্দেশিকা জারি করতে পারে।

বিলাসবহুল পণ্যের আমদানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার

গত ১৯ মে পাকিস্তান সরকার ‘জরুরি অর্থনৈতিক পরিকল্পনার’ অধীন ৩৮টি অপ্রয়োজনীয় বিলাসবহুল পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এই সিদ্ধান্ত যখন নেওয়া হয়, তখন আন্তব্যাংক বাজারে ১ ডলারের মান ছিল ২০০ রুপি। কিন্তু তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে, এবং তা করা হয়েছে মুদ্রার অব্যাহত দরপতনের মধ্যেই। বিপরীতে রপ্তানির পরিমাণ ধরে রাখতে পুরো অর্থবছর ধরে ভর্তুকি দিয়ে জ্বালানি সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছে সরকার।

দ্য ডন জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে কিছু বন্ধুরাষ্ট্র ও সংস্থা থেকে প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা পাবে বলে আশা করছে পাকিস্তান। এই অর্থ দিয়ে পাঁচটি রপ্তানিমুখী খাতকে অর্থ সহায়তা দেওয়া এবং ভবিষ্যৎ আমদানি ব্যয় পরিশোধের মাধ্যমে বাজারে একধরনের স্থিতিশীলতা আনার চেষ্টা করা হবে। পাশাপাশি শুধু মোবাইল ফোন ও গাড়ি বাদে অন্য সব পণ্য আমদানির অনুমতি দেবে সরকার।