ঋণসীমা বাড়ানোর শেষ তারিখ ৫ জুন, না হলে খেলাপি হবে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্র
ছবি: রয়টার্স

জাতীয় ঋণের সীমা বৃদ্ধি করতে না পারলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খেলাপি হয়ে পড়বে—এটা এখন সারা বিশ্বই জানে। তবে সেটা কবে, তা নিয়ে কিছুটা অস্পষ্টতা ছিল। দেশটির অর্থমন্ত্রী জেনেট ইয়েলেন গতকাল শুক্রবার এক চিঠিতে বলেছেন, সেই দিনটা হচ্ছে ৫ জুন। ঋণের সীমা বাড়ানোর সময় আছে সেদিন পর্যন্ত।

এর আগে ইয়েলেন এই দিন সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে কিছু বলেননি। বলেছিলেন, সেই দিন হতে পারে ১ জুন। খবর এনবিসি নিউজের।

গত জানুয়ারি মাসেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৩১ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন বা ৩১ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলারের জাতীয় ঋণসীমা ছুঁয়ে ফেলেছে। এর পর থেকে ফেডারেল সরকার নানা ধরনের বিশেষ ব্যবস্থা অবলম্বন করে দেশটির বিভিন্ন দেনা পরিশোধ করে আসছে।

কংগ্রেসের নেতাদের উদ্দেশে এক চিঠিতে ইয়েলেন বলেছেন, ‘সর্বসাম্প্রতিক তথ্যের ভিত্তিতে আমাদের আনুমানিক হিসাব, আগামী ৫ জুনের মধ্যে কংগ্রেস জাতীয় ঋণের সীমা বৃদ্ধি করতে না পারলে রাজস্ব বিভাগ থেকে সরকারের প্রতিশ্রুত অর্থ পরিশোধ করা সম্ভব হবে না।’

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও হাউস স্পিকার কেভিন ম্যাককার্থি ঋণের সীমা বৃদ্ধির বিষয়ে একাধিক বৈঠক করেছেন, তবে তাঁরা কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেননি। দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা অবশ্য এখনো চলছে।

মূলত, ব্যয়ের বিষয়ে এখনো দুই দল সমঝোতায় আসতে পারেনি। বাইডেন চান ধনীদের করহার বৃদ্ধিসহ নানাভাবে কর সংগ্রহ বৃদ্ধি করে ঋণের সীমা বৃদ্ধি করতে, কিন্তু রিপাবলিকানরা কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেট হ্রাসের বিষয়ে নাছোড়বান্দা। এমনকি ধনীদের ওপর কর বৃদ্ধির বিপক্ষেও তাঁরা।

তবে জানা গেছে, এসএনএপি বা সাপ্লিমেন্টাল নিউট্রিশন অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রামের অন্তর্ভুক্ত হতে নাগরিকদের জন্য শর্ত আরও কঠোর করতে চান রিপাবলিকানরা।

আলোচনায় রিপাবলিকান পার্টির প্রতিনিধি গ্যারেট গ্রেভস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বয়স্ক কিন্তু শক্তসমর্থ নাগরিক, যাঁদের কোনো পোষ্য নেই, তাঁদের এই সহায়তা পাওয়ার জন্য কাজ করতে হবে—এমন শর্ত দেওয়া খুবই যথাযথ।

গ্রেভস সাংবাদিকদের আরও বলেছেন, ‘হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর অবস্থান নিয়েছে; আমরা সাংবাদিকদের বিষয়টি সম্পর্কে জানাব, এটি অত্যন্ত গুরুতর।’

ডেমোক্র্যাটরা বলছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তা পেতে হলে কাজের মধ্যে থাকতে হবে, এমন শর্ত আগে থেকেই আছে। তাঁদের যুক্তি, নীতিমালা কঠোর করা হলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আরও বাড়বে; যে নাগরিকেরা এসব কাগুজে শর্ত ঠিকঠাক পূরণ করতে পারবেন না, তাঁরা সহায়তা পাওয়ার যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও ছিটকে পড়বেন। তাঁদের আরও যুক্তি, কাজ করার এই শর্ত বেকারত্বে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না।

এ ছাড়া আরও যেসব বিষয়ে দুই দলের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে, সেগুলো হলো, কোভিডের ত্রাণ তহবিলের অব্যবহৃত অর্থ ফিরিয়ে আনা এবং অবকাঠামো ও জ্বালানি প্রকল্পের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা।

হোয়াইট হাউস দুই বছরের জন্য ঋণের মেয়াদ বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। বিষয়টি সঙ্গে জড়িত এক সূত্র এনবিসি নিউজকে বলেছে, ‘আলোচনার “অগ্রগতি হয়েছে”। আজই যে চুক্তি হয়ে যাবে, তা মনে করার কারণ নেই। আমরা কাছাকাছি পৌঁছে গেছি।’ এদিকে কংগ্রেসের প্রতি ইয়েলেনের আরজি, দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

চিঠিতে ইয়েলেন আরও লিখেছেন, ‘অতীতেও আমরা দেখেছি, সিদ্ধান্তের জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করা হলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ভোক্তাদের আত্মবিশ্বাস ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। করদাতাদের জন্য স্বল্পমেয়াদি ঋণের সুদহার অনেকটা বাড়তে পারে; সেই সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমানে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।’

এর আগে এবিসি নিউজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ইয়েলেন বলেছিলেন, ‘ঋণের সীমা বাড়ানো কংগ্রেসের কাজ। যদি তারা ব্যর্থ হয়, তাহলে আমাদের অর্থনীতি ও আর্থিক খাতে যে বিপর্যয় সৃষ্টি হবে, তা আমাদের কারণেই হবে।’

ইয়েলেন আরও বলেছিলেন, মার্কিন জনগণের মাথায় বন্দুক ধরে ঋণের সীমা বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করা উচিত হবে না। বাস্তবতা হচ্ছে, সময় ফুরিয়ে আসছে।

ঋণের সীমা বৃদ্ধির বিষয়ে আন্তদলীয় ঐকমত্য না হলে দেশটিতে সাংবিধানিক সংকট হতে পারে। ১৯৬০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণের সীমা ৭৮ বার বর্ধিত বা সংশোধন করা হয়েছে।