তেলের উৎপাদন কমিয়ে উল্টো বিপদে সৌদি আরব

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি

তেলের উৎপাদন কমিয়ে বিপাকে পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ানোর লক্ষ্যে তারা তেলের উৎপাদন কমিয়েছে। এতে তেলের দাম বাড়লেও সৌদি আরবের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে প্রভাব পড়েছে।

সিএনএনের সংবাদ বলা হয়েছে, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে সৌদি আরবের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৫ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। করোনা মহামারির পর এই প্রথম কোনো প্রান্তিকে দেশটির জিডিপি এতটা সংকুচিত হলো। তৃতীয় প্রান্তিকে দেশটিতে তেলবহির্ভূত খাতের ৩ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তা না হলে সংকোচনের হার আরও বেশি হতে পারত।

বেশ কয়েক মাস ধরে সৌদি আরবের তেল খাত সংকুচিত হচ্ছে। তা সত্ত্বেও বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় সৌদি আরবের ১ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। কিন্তু বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে সৌদির তেল খাত ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। ২০১১ সালের পর এই প্রথম কোনো প্রান্তিকে সে দেশের তেল খাত এতটা সংকুচিত হলো। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ানোর লক্ষ্যে তারা নিজে থেকে উৎপাদন কমানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তার ফলেই এই সংকোচন।

চলতি বছর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ায় ওপেক ও সহযোগী দেশগুলো উৎপাদন কমিয়ে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ওপেকের সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সৌদি আরব বড় ভূমিকা পালন করে, এমনকি তারা আগ বাড়িয়ে নিজেদের কোটার চেয়ে তেল উৎপাদন অতিরিক্ত কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের বিশ্লেষকেরা বলেছেন, চলতি বছর তেল উৎপাদন এমন কমই থাকবে; এরপর ২০২৪ সালের শুরুর দিকে ধীরে ধীরে তা বাড়তে পারে।
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের পূর্বাভাস, চলতি বছর সৌদি আরবের মাত্র শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে, গত বছর যা ছিল ৮ দশমিক ৭ শতাংশ।

এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মার্কেট ইন্টেলিজেন্সের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের অর্থনীতিবিষয়ক পরিচালক রালফ উইগের্ট বলেছেন, বৈশ্বিক তেলের বাজার স্থিতিশীল করতেই সৌদি আরব তেল উৎপাদন হ্রাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

উইগের্ট আরও বলেন, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ধীরগতির প্রভাব তেলের বাজারেও অনুভূত হচ্ছিল। সেই পরিস্থিতিতে সৌদি আরব বাজার থেকে কিছু তেল সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

এই পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকেরা বলছেন, সৌদি আরবের অর্থনীতি কতটা ঘুরে দাঁড়াবে, তা নির্ভর করবে দেশটি তেল উৎপাদন হ্রাসের সিদ্ধান্ত থেকে কবে ও কীভাবে সরে আসে, তার ওপর। তেল উৎপাদন হ্রাসের সিদ্ধান্ত আগামী ২০২৫ সাল পর্যন্ত চলার কথা রয়েছে, তবে ২০২৪ সালেও সৌদি আরবের ১ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে।

এদিকে উপসাগরীয় অন্যান্য দেশ তেল উৎপাদন হ্রাসের কারণে চাপে পড়লেও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। আরব আমিরাতের অর্থমন্ত্রী এ সপ্তাহে জানিয়েছেন, বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশটির ৩ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তেলবহির্ভূত খাতের প্রবৃদ্ধির কল্যাণেই তাঁরা এতটা প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পেরেছেন।

চলতি বছর আরব আমিরাতের তেলবহির্ভূত খাতের রাজস্ব আয় গত চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হারে বেড়েছে বলে জানা গেছে।