যুক্তরাষ্ট্রে ক্রেডিট কার্ডের ঋণ এক লাখ কোটি ডলার ছাড়াল

প্রতীকী ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ক্রেডিট কার্ডের ঋণ নতুন উচ্চতায় উঠেছে। ইতিহাসে এই প্রথম সে দেশের মানুষের ক্রেডিট কার্ডের ঋণ ১ ট্রিলিয়ন ডলার বা ১ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ এই তথ্য জানিয়েছে।

সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের ক্রেডিট কার্ডের ব্যালান্স বা স্থিতি ৪৫ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৬ শতাংশ।

ফেডের প্রতিবেদনে আরও জানা গেছে, ক্রেডিট কার্ড ও গাড়ির ঋণ বৃদ্ধির কারণে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের পারিবারিক ঋণ ১৭ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে; দ্বিতীয় প্রান্তিকে যা ১ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৯ সালের তুলনায় পারিবারিক ঋণ ২ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন বা ২ লাখ ৯ হাজার কোটি ডলার বেড়েছে। তবে এই হিসাব মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে দেওয়া হয়নি।

প্রায় দেড় বছর ধরে ফেড নীতি সুদহার বাড়াচ্ছে; নীতি সুদহার এখন গত ২২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তার মধ্যেই দেশটির মানুষের ঋণ এতটা বেড়েছে।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মর্নিং কনসাল্টের অর্থনীতিবিদ সোফিয়া বেগ সিএনএনকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহার বাড়লে ব্যাংকঋণের সুদহারও বাড়ে। সে কারণে এখন ব্যাংকের গ্রাহকদের ঋণের সুদহার বাড়বে। এর মধ্যেও মানুষ ঋণ নিচ্ছে, ফলে অনেক পরিবারের পক্ষে এই ঋণ পরিশোধ করা কঠিন হয়ে যাবে।’

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের গড়পড়তা ক্রেডিট কার্ডের ঋণের সুদহারও এখন প্রায় রেকর্ড উচ্চতায়—২০ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

ফেডের তথ্যে দেখা যায়, এ নিয়ে টানা পাঁচ প্রান্তিকে ক্রেডিট কার্ডের বিপরীতে ঋণের স্থিতি বেড়েছে; এই বৃদ্ধির হার আবার ২০ বছরের মধ্যে অন্যতম দ্রুততম।

যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক প্রতিষ্ঠান লেন্ডিং ট্রির প্রধান ঋণ বিশ্লেষক ম্যাট শুলজ সিএনএনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে মার্কিন নাগরিকদের ঋণ এই অবস্থা থেকে আরও বাড়বে। মূল বিষয় হলো মূল্যস্ফীতি। মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে ঋণ নিতে হচ্ছে, বাড়ছে বোঝা।’

যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজার এখন চাঙা। বেকারত্বের হার অনেক কম, মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির চেয়ে বেশি। অর্থনীতি প্রবৃদ্ধির ধারায় আছে এবং সেই সঙ্গে মানুষের ভোগব্যয়ও বাড়ছে। তা সত্ত্বেও মূল্যস্ফীতির উচ্চ হার ভোক্তাদের জীবনে প্রভাব ফেলছে। দেশটির ১ কোটি ৪০ লাখ গৃহমালিক অবশ্য ভালোই আছেন। মহামারির সময় অতি অল্প সুদে এঁরা ৪৩০ বিলিয়ন বা ৪৩ হাজার কোটি ডলার ঋণ নিয়েছেন।

এদিকে মঙ্গলবার ব্যাংক অব আমেরিকা জানিয়েছে, অনেক মানুষ আপৎকালীন হিসাব থেকে অর্থ তুলছেন। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসব হিসাব থেকে অর্থ তুলেছেন আগের প্রান্তিকের চেয়ে অন্তত ১৫ হাজার ৯৫০ বেশি মানুষ; ২০২২ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকের চেয়ে যা ৩৬ শতাংশ বেশি।  

সামগ্রিকভাবে এই সংখ্যা খুব বেশি না হলেও বোঝা যাচ্ছে, পরিবারের আর্থিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, মানুষের ঋণ বাড়লে অবধারিতভাবে ব্যয় কমবে। জানা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের মানুষেরা ইতিমধ্যে ব্যয় কমাতে শুরু করেছেন, যাতে বাজেট-বহির্ভূত ব্যয় নির্বাহ করা যায়।

এদিকে মহামারির সময় শিক্ষাঋণের কিস্তি পরিশোধ স্থগিত করেছিল বাইডেন প্রশাসন। সেই ঋণ এখন আবার পরিশোধ করতে হবে, যদিও তা পরিশোধে গ্রাহকদের অনেক স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। এরপরও অনেক পরিবারের পক্ষেই এই ঋণ পরিশোধ করা কঠিন হবে।

মার্কিন নাগরিকদের ঋণের পাশাপাশি দেশটির জাতীয় ঋণও সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এই ঋণের সীমা ছিল প্রায় ৩২ লাখ কোটি ডলার। এই ঋণসীমা স্থগিত করা নিয়ে দেশটির ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিক দলের মধ্যে একদম শেষ মুহূর্তে ঐকমত্য হয়। এতে দেশটি ঋণখেলাপি হওয়া থেকে বেঁচে যায়, যদিও শেষ মুহূর্তের ঐকমত্যের কারণে দেশটির ভাবমূর্তির অনেক ক্ষতি হয়েছে। ফিচের মতো আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা দেশটির ঋণমান অবনমন করেছে।