চাকরিতে মোটা বেতন নয়, মানসিক স্বাস্থ্যে বেশি জোর দিচ্ছে ‘জেন যি’

নতুন প্রজন্মের তরুণদের পছন্দের ধরন বদলাচ্ছে।
রয়টার্স

নতুন প্রজন্মের তরুণদের পছন্দের ধরন বদলাচ্ছে। জেনারেশন জেড বা যাঁরা ‘জেন যি’ হিসেবে পরিচিত, অর্থাৎ যাঁদের জন্ম ১৯৯৭ সালের পর, সেই প্রজন্মের তরুণেরা এখন বেশি বেতনের চেয়ে মানসিক স্বাস্থ্যে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

আরপিজি গ্রুপের এক সমীক্ষাকে উদ্ধৃত করে টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, জেন যি প্রজন্মের তরুণেরা মোটা বেতনের চেয়ে মানসিক স্বাস্থ্য ও অন্তর্ভুক্তিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।

আরেকটি বিষয় হলো, এই প্রজন্মের তরুণেরা সেই ধরনের প্রতিষ্ঠান পছন্দ করেন, যারা ‘আচরণের বহিঃপ্রকাশের ওপর ভিত্তি করে কোনো বিষয়ে বিচার’ করে না। এ ছাড়া জরিপে অংশ নেওয়া ৬৪ শতাংশ তরুণ বলেছেন, ভালো কর্মক্ষেত্রের সবচেয়ে বড় দিক হচ্ছে, কাজের ক্ষেত্রে স্থান ও সময়ের ধরাবাঁধা নিয়ম না থাকা, যাকে বলে ফ্লেক্সিবল ওয়ার্কপ্লেস। তাঁরা যদি দেখেন যে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ বিষিয়ে উঠেছে, তাহলে নতুন কাজ জোটাতে তাঁরা দ্বিধা করবেন না।

কর্মক্ষেত্রে জেন যি প্রজন্মের তরুণেরা কিছু মূল্যবোধ প্রত্যাশা করেন, সেগুলো হলো—যথার্থতা, স্বায়ত্তশাসন, পরিষ্কার মূল্যবোধ, সমতা, ন্যায্যতা ও ধরাবাঁধা নিয়ম না থাকা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই প্রজন্মের তরুণেরা যেন তাঁদের চারপাশের ভাঙা ব্যবস্থা সংস্কারে পণ করেছেন।

এই তরুণেরা কী চান, সে বিষয়ে তাঁরা পরিষ্কার—এর মধ্যে আছে কোনো ধরনের পোশাক বিধান না থাকা, শীর্ষ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ, সবার জন্য অভিন্ন বাথরুম ও ধ্যান বা গভীর চিন্তা করার কক্ষ।

আরপিজি গ্রুপ জানিয়েছে, তাঁদের ভবিষ্যৎনীতি এই সমীক্ষার ফলাফল দ্বারা প্রভাবিত হবে। যুবা ইনসাইটস স্টুডিওর সহায়তার তারা এই সমীক্ষা পরিচালনা করেছে।

আরপিজি গ্রুপের চেয়ারম্যান হার্শ গোয়েঙ্কা বলেছেন, এই সমীক্ষা শিল্পের নেতৃত্ব, মানবসম্পদকেন্দ্রিক পেশাদার ও অন্যদের জন্য দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করবে। অর্থাৎ, এর মাধ্যমে তাঁরা জানতে পারবেন, জেন যি ঠিক কী চায়।

প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগের প্রেসিডেন্ট এস ভেঙ্কি ভেঙ্কটেশ বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে জেন যি প্রজন্মের সুখ-অসুখ বোঝাটা কেবল এখন আর ঐচ্ছিক বিষয় নয়, বরং যেসব কোম্পানি ভবিষ্যতেও প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে চায়, তাদের জন্য বিষয়টি অপরিহার্য।’

এদিকে মহামারির পর উন্নত বিশ্বে অনেকেই এখন পূর্ণকালীন কাজ করতে চাইছেন না। পাইকারি হারে চাকরিও ছাড়ছেন অনেকে। এই পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্যে চার দিনের কর্মসপ্তাহ নিয়ে পাইলট প্রকল্প করা হয়েছে।

এতে দেখা গেছে, ৭০টি কোম্পানি তাদের সাড়ে ৩ হাজার কর্মীর সাপ্তাহিক কর্মসময় ২০ শতাংশ হ্রাস করে দেখেছে, প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রে কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বেড়েছে। ৮৮ শতাংশ কোম্পানি ইতিমধ্যে বলেছে, তারা পাইলট প্রকল্পের পরও এই ধারা বজায় রাখবে।

মানুষ এখন কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য খুঁজছে। অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ এখন আগের মতো ব্যক্তিগত জীবনকে জলাঞ্জলি দিয়ে কর্মজীবনকে প্রাধান্য দিতে চান না। সন্তানের লালন-পালনের বিষয়েও মানুষের সচেতনতা বেড়েছে। মহামারির পর এ বিষয়ে আরও পরিবর্তন এসেছে। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোতে মানুষ বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে এখন।