‘ইন্ডিয়া’ থেকে ‘ভারত’, দেশের নাম পরিবর্তনে কত অর্থ খরচ হতে পারে

ভারতে এখন জোর জল্পনাকল্পনা, নরেন্দ্র মোদির সরকার দেশটি আন্তর্জাতিকভাবে যে নামে পরিচিত, সেই ‘ইন্ডিয়া’ নামটি পরিবর্তন করতে চলেছে। সব ক্ষেত্রেই এর নাম হবে ‘ভারত’। এই মাসের আরও পরের দিকে দেশটির সংসদের বিশেষ একটি অধিবেশন ডাকা হয়েছে এবং সে সময় এই নাম পরিবর্তনের ব্যাপারটি ঘটবে বলে অনেকে ধারণা করছেন।

নাম পরিবর্তনের বিষয়টি সস্তায় ঘটে না, বরং এর সঙ্গে বড় পরিমাণ খরচের ব্যাপার জড়িত রয়েছে বলে বেশ কিছু মডেলে দেখা গেছে।

সংবাদমাধ্যম আউটলুককে উদ্ধৃত করে ইকোনমিক টাইমস জানাচ্ছে যে ইন্ডিয়া নামটি পরিবর্তন করে সব ক্ষেত্রে ভারত করার জন্য ১৪ হাজার কোটি রুপির বেশি অর্থ খরচ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে যে মডেলটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি উদ্ভাবন করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকাভিত্তিক বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি-সংক্রান্ত আইনজীবী ও ব্লগার ড্যারেন অলিভিয়ের।

ড্যারেন অলিভিয়ের মডেলটি ব্যবহার করেছিলেন ২০১৮ সালে, যখন ‘সোয়াজিল্যান্ড’ দেশটি নাম পরিবর্তন করে ‘এসওয়াতিনি’ রাখে। বড় বড় কোম্পানি যখন নিজেদের নাম পরিবর্তন করে বা রিব্র্যান্ডিং করে, সেই কাজের খরচের সঙ্গে দেশের নাম পরিবর্তনের বিষয়টির তুলনা করে তিনি তাঁর মডেলটি দাঁড় করান।

ড্যারেন অলিভিয়েরের এই মডেল অনুসারে, সাধারণত বিপণন খাতে একটি কোম্পানির গড় খরচ হয় তার মোট আয়ের ৬ শতাংশ। অন্যদিকে কোম্পানির রিব্র্যান্ডিং করার খরচ হতে পারে বিপণন বাজেটের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশের মতো।

২০২৩ সালের ৩১ মার্চ শেষ হওয়া অর্থবছরে ভারতের রাজস্ব আয় ছিল ২৩ দশমিক ৮৪ লাখ কোটি রুপি। সে কারণে অলিভিয়ের মডেল অনুসারে, দেশের নাম পরিবর্তন খাতে দিল্লির সরকারকে ১৪ হাজার ৩৪ কোটি রুপি খরচ করতে হতে পারে। আউটলুক বলছে, এই অর্থ খাদ্যনিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার প্রতি মাসে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে, তার চেয়ে বেশি।

একটা দেশের নামের যে ‘ব্র্যান্ড ভ্যালু’ বা যশের মূল্য রয়েছে, কয়েকজন ভারতীয় রাজনৈতিক নেতা অবশ্য সেই বিষয়ও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন।

কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা শশী থারুর ‘এক্স’ প্ল্যাটফর্মে (সাবেক টুইটার) পোস্ট করা এক মন্তব্যে বলেছেন, ‘ইন্ডিয়াকে ভারত নামে অভিহিত করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সাংবিধানিক বাধা নেই। কারণ, দুটিই আনুষ্ঠানিক নাম। তবে আমি আশা করব, শত শত বছর ধরে ইন্ডিয়া নামটির যে একটি ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি হয়েছে, সরকার তা সম্পূর্ণ নষ্ট করে দেবে না।’

শশী থারুর আরও বলেন, ‘আমাদের উচিত, দুটি নামই ব্যবহার করা। ইতিহাসে যে নামটি স্মৃতিভারাতুর হয়ে আছে, যে নামটি পুরো বিশ্ব চেনে, তাকে পুরোপুরি বাদ দেওয়া ঠিক হবে না।’

উপনিবেশের চিহ্ন
বিদেশি শাসন থেকে বেরিয়ে অনেক দেশই নিজেদের নাম পরিবর্তন করেছে। অন্য কারণেও দেশের নামে পরিবর্তন হয়েছে। শ্রীলঙ্কার আগের নাম ছিল সিলোন, স্বাধীনতার পরপরই যে নামটি পরিবর্তন করা হয়। থাইল্যান্ডের আগের নাম ছিল সিয়াম।

ইন্ডিয়া নামের পরিবর্তনের বিষয়টি সামনে আসে মঙ্গলবার, যখন ভারতীয় প্রেসিডেন্টের কার্যালয় রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে জি-২০ সম্মেলনের নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানানোর খবর প্রকাশ পায়। খবরে বলা হয়, আমন্ত্রণপত্রে প্রেসিডেন্ট অব ভারত শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করা হয়েছে। সাধারণত এমন আমন্ত্রণপত্রে ‘প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া’ শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করা হয়।

কিছু সংবাদ প্রতিবেদনে এমন ধারণা দেওয়া হয় যে ১৮ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের নাম পরিবর্তন করা হবে।

এর পরপরই বিরোধী দলগুলো ও ক্ষমতাসীন বিজেপির মধ্যে কথার লড়াই শুরু হয়। এই লড়াইয়ে যোগ দেন বিজেপির অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা, যাঁদের মধ্যে ছিলেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমান্ত বিশ্ব শর্মা। তাঁরা সবাই দেশকে ‘ভারত’ নামে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত করানোকে সমর্থন করেন।

আসামের মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সূর্য ও চন্দ্রের মতোই পুরোনো হলো ভারত। যত দিন সূর্য ও চন্দ্র থাকবে, তত দিন ভারত থাকবে। প্রতিটি রাজ্য ও এর জনগণ চায়, দেশটি ভারত নামে পরিচিত হোক।’

বিরোধী দল কংগ্রেস অবশ্য বলছে, তাদের গঠিত ‘ইন্ডিয়া’ জোটের কারণে সরকার ‘ভয়’ পাচ্ছে এবং নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও ‘বেকারত্ব বাড়ার’ মতো বিষয়গুলো থেকে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতে তারা দেশের নাম পরিবর্তনের মতো বিষয়টি আলোচনায় এনেছে।

কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ একটি এক্স পোস্টে বলেছেন, ‘খবরটি অবশ্যই সত্য। রাষ্ট্রপতি ভবন ৯ সেপ্টেম্বরের জি-২০ ডিনারের জন্য যে আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছে, তাতে প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়ার পরিবর্তে প্রেসিডেন্ট অব ভারত শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করা হয়েছে।’