এশিয়ার ধনীদের মধ্যে দানে এগিয়ে কারা
পশ্চিমা বিশ্বের ধনীদের মতো এশিয়ার ধনীরাও দান করে থাকেন। প্রতিবছর ফোর্বস ম্যাগাজিন এই দানবীরদের নিয়ে বিশেষ সংবাদ প্রতিবেদন করে থাকে। এবার এশিয়ার দানবীরদের নিয়ে তারা যে সংবাদ করেছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে এ বছর ভারতের শত কোটিপতি অভিষেক লোধা এশিয়ার ধনীদের মধ্যে দানধ্যানে সবচেয়ে এগিয়ে।
অভিষেক লোধা চলতি বছর ২৫০ কোটি ডলার সমমূল্যের ১৮০ মিলিয়ন বা ১৮ কোটি শেয়ার লোধা ফাউন্ডেশনে দান করেছেন। একই সঙ্গে ভারতের সুধীর ও সুমির মেহতা ৫৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার সমমূল্যের শেয়ার দান করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি অবশ্য একবারে নয়, বরং ধাপে ধাপে আগামী পাঁচ বছরে দান করার ঘোষণা দিয়েছেন। এর লক্ষ্য হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা পরিবেশ ও শিল্পকলায় সহায়তা করা।
শুধু ভারত নয়, এশিয়ার অন্যতম দেশের ধনীরাও চলতি বছর বিভিন্ন খাতে দান করেছেন। দেখা যাচ্ছে, এই দান করার ক্ষেত্রে শিক্ষা সবচেয়ে গুরুত্বপ্রাপ্ত খাত। চীনের মুঠোফোন কোম্পানি শাওমির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান লেই জুন উহান বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮ কোটি ২০ লাখ ডলার দান করছেন। তিনি নিজে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন এবং বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন।
এ ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার শত কোটিপতি মাইকেল কিম ইনস্টিটিউট ফর এথিক্যাল ইনকোয়ারি অ্যান্ড লিডারশিপ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২৫ মিলিয়ন বা আড়াই কোটি ডলার দান করেছেন, এটি প্রতিষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায়। এ ছাড়া তাইওয়ানের ড্যানিয়েল সাই জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ল স্কুলে ৩০ মিলিয়ন বা ৩ কোটি ডলার দান করছেন।
দানবীরদের তালিকায় আছেন হংকংয়ের সোলিনা চাও ও সিঙ্গাপুরের এদুয়ার্দো সাভেরিন। চলতি বছর এশিয়ার দানবীরদের তালিকায় যে ৯ জন নতুন মুখ এসেছেন, এঁরা তাঁদের মধ্যে আছেন। চলতি বছর ফোর্বস ম্যাগাজিন এশিয়ার ১৫ জন দানবীরের তালিকা প্রণয়ন করেছে, যদিও এ ক্ষেত্রে ক্রমতালিকা করা হয়নি। এই ব্যক্তিরা নিজেদের গাঁটের পয়সা থেকে বড় ধরনের দান করেছেন। এই তালিকায় পাঁচজন সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:
অভিষেক লোধা
অভিষেক লোধা ও তাঁর পরিবার লোধা ফিলানথ্রপি ফাউন্ডেশনে ম্যাক্রোটেক ডেভেলপারে তাঁদের অংশীদারির বড় একটি অংশ দান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই ফাউন্ডেশনে দান করা অর্থ বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচিতে ব্যয় করা হবে। এদিকে অভিষেক লোধার এই মহতী সিদ্ধান্তকে দেশের সমগ্র ব্যবসায়িক মহল কুর্নিশ জানিয়েছে। এমতাবস্থায়, প্রত্যেকেই জানতে চাইছেন অভিষেক লোধার পরিচয়। লোধা গ্রুপের অভিষেক লোধা এবং তাঁর পরিবারের হাতে ম্যাক্রোটেক ডেভেলপারস লিমিটেডের বেশির ভাগ অংশীদারি রয়েছে। ম্যাক্রোটেক ডেভেলপারস ভারতের শীর্ষস্থানীয় আবাসন ডেভেলপারদের মধ্যে অন্যতম। এটি লোধা ব্র্যান্ডের অধীনে সম্পত্তি বিক্রি করে। অভিষেক লোধা রতন টাটাকে দেখে দানধ্যানের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন বলে জানা যায়।
লেই জুন
চীনের ফোন কোম্পানি শাওমরি সহ-প্রতিষ্ঠাতা গণিত, পদার্থবিজ্ঞান ও কম্পিউটারবিজ্ঞানে গবেষণার জন্য গত বছর উহান বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮ কোটি ২০ লাখ ডলার দান করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কোনো প্রাক্তন ছাত্রের কাছ থেকে এটাই তাদের পাওয়া সবচেয়ে বড় অনুদান। শুধু তা–ই, নয় চীনের উহানে আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নগদ অর্থে এত বড় অঙ্কের অনুদান পায়নি।
মেলানেই পারকিন্স ও ক্লিফ অবরেখট
এই দম্পতি অস্ট্রেলিয়ার ডিজাইন সফটওয়্যার ক্যানভার প্রতিষ্ঠাতা। ২০২২ ও ২০২৩ সালে তাঁরা ২১ মিলিয়ন বা ২ কোটি ১০ লাখ ডলার দান করেছেন। চরম দারিদ্র্য দূরীকরণে গিভ ডিরেক্টরি নামের এক অলাভজনক সংস্থাকে তাঁরা এই দান করেছেন।
তাদাশি ইয়ানাই
জাপানি ফ্যাশন ব্র্যান্ড ইউনিক্লোর প্রতিষ্ঠাতা তাদাশি ইয়ানাই জাপানি মানববিদ্যা পড়ানোর জন্য ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩১ মিলিয়ন বা ৩ কোটি ১০ লাখ ডলার দান করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় বলেছে, মানবিক বিদ্যা পড়ানোর ক্ষেত্রে এর চেয়ে বড় দান এর আগে হয়নি।
অ্যান্ড্রু ফরেস্ট ও নিকোলা ফরেস্ট
ফরচেসকু মেটালস গ্রুপের চেয়ারম্যান অ্যান্ড্রু ফরেস্ট ও মিনডেরু ফাউন্ডেশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা নিকোলা ফরেস্ট ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন ও ইউএন ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামে ৫০ লাখ ডলার করে দান করেছেন। ফাউন্ডেশন যেসব বিষয় নিয়ে কাজ করে, তার মধ্যে আছে শিশুদের শিক্ষা, আধুনিক দাসত্বের অবসান, আদিবাসী অস্ট্রেলিয়ানদের কর্মসংস্থানে সমতা ও সমুদ্রের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করা। এর আগে মিনডেরু ফাউন্ডেশন ফিলিস্তিনের গাজায় ক্ষতিগ্রস্ত বেসামরিক মানুষের জন্য এক কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলার মানবতাবাদী সাহায্য দিয়েছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের পর তাঁরা ইউক্রেনের শস্যগুদাম ও জেনারেটর সুরক্ষায় দান করেছেন।
এই তালিকায় আরও আছেন হংকংয়ের লি কা শিং, ভারতের সমীর ও সুধীর মেহতা, সিঙ্গাপুরের এদুয়োর্দা সাভেরিন ও ইলেইন সাভেরিন, নিউজিল্যান্ডের মার্ক দুনাজতসিক, হংকংয়ের সোলিনা চাউ, তাইওয়ানের ড্যানিয়েল সাই, দক্ষিণ কোরিয়ার মাইকেল কিম, ফিলিপাইনের ম্যানুয়েল ভিলার, নিউজিল্যান্ডের লিজ গ্রিভ, ভারতের রামদেও অগ্রবাল ও মোতিলাল অসওয়াল।