শুল্ক আলোচনা নিয়ে চীন–যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, কাটছে না অনিশ্চয়তা

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকাফাইল ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের বিষয়ে সুর নরম করেছিলেন। বলেছিলেন, চীনের সঙ্গে আলোচনা হবে। শুল্ক নিয়ে এই অচলাবস্থারও নিরসন হবে। কিন্তু এখন এ প্রসঙ্গে চীনের বক্তব্য নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সুর নরম হওয়ার পর সারা বিশ্বের শেয়ারবাজারে আবার চাঙা ভাব এসেছিল। কিন্তু গতকাল শুক্রবার বেইজিং স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এখন পর্যন্ত তাদের কথা হয়নি; যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ কথা অস্বীকার করেছেন। এই ঘটনায় আবার নড়েচড়ে বসেছেন বিনিয়োগকারীরা। তাঁরা মনে করছেন, এখনো স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার সময় আসেনি। খবর রয়টার্স ও সিএনবিসির

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুয়ো জিয়াকুন বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্কসংক্রান্ত সমাধান নিয়ে কথা হয়নি। এই শুল্কযুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র শুরু করেছে। এটা যদি অবশ্যম্ভাবী হয়, তা হলে চীন লড়াই করে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র কথা বলতে চাইলে চীনের দরজা খোলা। সেই আলোচনা হতে হবে সাম্য, সম্মান ও পারস্পরিক মুনাফার ভিত্তিতে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য, দুই দেশের আলোচনাসংক্রান্ত খবরের বাস্তব ভিত্তি নেই।

চীনের এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, চীনের এই বক্তব্য ঠিক নয়। বৃহস্পতিবার সকালেও দুই দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। কারা এই আলোচনায় অংশ নিয়েছে, তা বড় বিষয় নয়। তবে আলোচনায় যাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাঁদের নাম-পরিচয় পরবর্তী সময়ে প্রকাশ করা হতে পারে। কিন্তু বিষয় হলো, চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা চলছে।

এদিকে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হে ইয়াডং সিএনবিসিকি বলেন, আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যা বলা হয়েছে, তা বাতিল করে দিতে হবে। তারা যদি প্রকৃত অর্থেই চীনের সঙ্গে আলোচনা চায়, তাহলে চীনের বিষয়ে একতরফা যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেগুলো বাতিল করতে হবে।

ঘটনাচক্রে গতকালই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট দাবি করেছেন, ভারতের সঙ্গে প্রাথমিক বাণিজ্যচুক্তি চূড়ান্ত হতে পারে। ভারতের শুল্ক অত বেশি নয়; অন্যান্য বাধাও কমেছে। সরকারি ভর্তুকিও বেশি নয়। ফলে তাদের সঙ্গে চুক্তি করা অপেক্ষাকৃত সহজ।

এদিকে ট্রাম্পের শুল্কনীতির বিরুদ্ধে নিউইয়র্কের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালতে আবেদন জানিয়েছে নিউইয়র্ক, কলোরাডো, অ্যারিজোনা, ইলিনয়সহ যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ১২টি অঙ্গরাজ্য। তাদের বক্তব্য, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ ‘বেআইনি’। যে কারণে অর্থ ব্যবস্থায় সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ঘরে-বাইরে চাপ বাড়ছে ট্রাম্পের ওপর।

বিশ্বের সব দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপের অংশ হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন চীনের পণ্যে ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যার প্রতিক্রিয়ায় চীন মার্কিন পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। কিন্তু সব দেশের পণ্যে এই শুল্ক স্থগিত করা হলেও চীনের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। এ অবস্থায় বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তারা ২০২৫ সালের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৩ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ দশমিক ৮ শতাংশ করেছে।