ইসরায়েল–হামাস যুদ্ধের পর বর্জনের ডাকে বিপাকে ম্যাকডোনাল্ডস

ছবি: রয়টার্স

বার্গারের জন্য সুপরিচিত ব্র্যান্ড ম্যাকডোনাল্ডস জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা তাদের ব্যবসার ক্ষতি করছে। গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকের জন্য কোম্পানিটি বিক্রি ও আয়ের যে হিসাব দিয়েছে, তাতে সার্বিকভাবে ভালো ব্যবসার চিত্র দিলেও মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে পণ্য বিক্রি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জানিয়েছে।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ম্যাকডোনাল্ডসের সার্বিক ব্যবসায় মধ্যপ্রাচ্যের অংশীদারত্ব খুব বেশি নয়। এই অঞ্চলে মূলত স্বাধীন কিছু কোম্পানি ম্যাকডোনাল্ডসের লাইসেন্সের আওতায় ব্যবসা করে। ম্যাকডোনাল্ডস জানিয়েছে, এসব ব্যবসার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে রয়্যালটি ছাড় কিংবা লাইসেন্স ফি আদায় পিছিয়ে দিয়ে তারা ওই সব ফ্র্যাঞ্চাইজিকে কিছুটা আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, এ কথাও জানিয়েছে ম্যাকডোনাল্ডস। যুদ্ধের কারণে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কথা জানালেও ঠিক কী পরিমাণ অর্থের ছাড় দেওয়া হয়েছে, তা তারা জানায়নি। ম্যাকডোনাল্ডস অবশ্য বলেছে, সহায়তার পরিমাণ খুব বেশি নয়।

বিশ্বজুড়ে লাইসেন্সের আওতায় ব্যবসা করে ম্যাকডোনাল্ডসের অনেক অংশীদার। মধ্যপ্রাচ্যের ব্যবসা তারই একটি অংশ। মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার কারণে এই ব্যবসায় কোম্পানিটির প্রবৃদ্ধি হয়েছে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। সেই তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক ব্যবসায় তাদের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ শতাংশেরও বেশি। অর্থাৎ, মধ্যপ্রাচ্যে তাদের ব্যবসা একেবারে ভালো হয়নি।

ঠিক এক বছর আগে লাইসেন্সের আওতাধীন ব্যবসাই ছিল ম্যাকডোনাল্ডসের জন্য সবচেয়ে জমজমাট। সে সময় তাদের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৬ শতাংশের বেশি।

কমপক্ষে এক বছর আগে ম্যাকডোনাল্ডসের রেস্তোরাঁ খোলা হয়েছে, চতুর্থ প্রান্তিকে এমন আন্তর্জাতিক ব্যবসায় বিক্রির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। বাজার বিশ্লেষকেরা যা প্রত্যাশা করেছিলেন, বিক্রির মোট পরিমাণ ছিল তার চেয়ে অনেক কম। আর এর মূল কারণ মধ্যপ্রাচ্যে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে যে বিক্ষোভ হয়েছে, তা।

একই কারণে ম্যাকডোনাল্ডসের আয়ও প্রত্যাশামতো হয়নি। এই প্রান্তিকে কোম্পানির আয় ছিল ৬৪১ কোটি ডলার। আর্থিক ফলাফল জানানোর পর শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরুর আগেই ম্যাকডোনাল্ডসের শেয়ারের দাম সামান্য পড়ে যায়।

গত মাসে ম্যাকডোনাল্ডস জানায়, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধের কারণে তারা মধ্যপ্রাচ্যে ‘অর্থপূর্ণ ব্যবসায়িক প্রভাব’ দেখতে পাচ্ছে। ব্যবসায় অনেকটা একই রকম ক্ষতির মুখে পড়ে আরেক বড় কোম্পানি স্টারবাকস। তাদের ব্যাপারে ভুল ধারণা দূর করতে ও তাদের পণ্য বর্জনের ডাকের বিপক্ষে এই দুই কোম্পানি তখন বিবৃতিও প্রকাশ করেছিল।

গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালানো পর ‘ম্যাকডোনাল্ডস ইসরায়েল’ হাজার হাজার বার্গার বিনা মূল্যে বিতরণ করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের অনেক ম্যাকডোনাল্ডস ব্যবসায়ী ইসরায়েলি শাখার কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের দূরত্বের কথা জানিয়ে দেয়। কুয়েত, পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশে ম্যাকডোনাল্ডস ফ্র্যাঞ্চাইজিরা বিবৃতি দিয়ে জানায় যে ইসরায়েলের ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে তাদের কোনো মালিকানার সম্পর্ক নেই।

ম্যাকডোনাল্ডসের বিপুলসংখ্যক স্থানীয় রেস্তোরাঁ ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিতে চলে। এসব ফ্র্যাঞ্চাইজি অনেকটা স্বাধীনভাবে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে। তারা নিজেরাই কর্মীদের মজুরি ও পণ্যের দাম ঠিক করে। প্রয়োজন মনে করলে তারা বিবৃতি দেয় কিংবা অর্থসাহায্য করে।

ব্যবসার এই কৌশল সারা পৃথিবীতে ম্যাকডোনাল্ডসকে ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করেছে। ২০২২ সালের হিসাবে, দুনিয়াজুড়ে তাদের ৪০ হাজার রেস্তোরাঁ রয়েছে। এর ২৭ হাজারই যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে।