যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ নির্বাহীদের আয় নিচের কর্মীদের ১৯৬ গুণ

যুক্তরাষ্ট্রছবি: রয়টার্স

উন্নত বিশ্বে বৈষম্য কতটা বেড়েছে, সম্প্রতি এক জরিপে তার আরেকটি নজির পাওয়া গেছে। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোয় যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের মধ্যে আয়ের বিস্তর ব্যবধান। নিচের সারির কর্মীদের তুলনায় ওপরের সারির কর্মীরা বছরে ১৯৬ গুণ বেশি আয় করেন।

ইয়াহু ফাইন্যান্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি এসঅ্যান্ডপি ৫০০ তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে। জরিপ সংস্থা ইকুইলার ইনকরপোরেটেড এ জরিপ পরিচালনা করে।

শেয়ার সূচক এসঅ্যান্ডপি ৫০০-এ যুক্তরাষ্ট্রে ৫০০টি বৃহত্তম কোম্পানি তালিকাভুক্ত। জরিপে অংশ নেওয়া অর্ধেক কোম্পানির প্রধান নির্বাহীরা গত বছর যা আয় করেছেন, তার সমপরিমাণ আয় করতে একজন সাধারণ কর্মীর প্রায় ২০০ বছর লেগে যাবে। কোম্পানির মুনাফা ও শেয়ারের দাম বাড়লে দেখা যায়, প্রধান নির্বাহী যে পরিমাণ পুরস্কার পান, নিচের সারির কর্মীরা সেই তুলনায় কিছুই পান না।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতির চাপ থাকলেও গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের সিইও বা প্রধান নির্বাহীদের বেতন অনেকটা বেড়েছে। এসঅ্যান্ডপি তালিকাভুক্ত কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তাদের বেতন গত বছর গড়ে প্রায় ১৩ শতাংশ বেড়েছে, পরিমাণের দিক থেকে যা ১ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। অথচ একই সময়ে কর্মচারীদের বেতন বেড়েছে মাত্র ৪ দশমিক ১ শতাংশ। আরেকটি বিষয় হলো, বেতন শীর্ষ নির্বাহীদের আয়ের একমাত্র উৎস নয়; এর সঙ্গে পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে তাঁরা স্টক অংশীদারত্ব ও বোনাস পেয়ে থাকেন।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, মহামারি-পরবর্তী বাজারে কর্মী–সংকট সৃষ্টি হয়েছে; সে জন্য সিইওদের বেশি বেতন–ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা দিয়েও ধরে রাখতে চায় কোম্পানিগুলো। ফলে তাঁদের বেতন বেড়েছে।

যাঁরা কমপক্ষে টানা দুই অর্থবছর দায়িত্ব পালন করেছেন—গবেষণায় এমন ৩৪১ জন প্রধান নির্বাহীর তথ্য পর্যালোচনা করা হয়েছে। ব্রডকম ইনকরপোরেটেডের সিইও হক ট্যান প্রায় ১৬ কোটি ২০ লাখ ডলারের বেতন প্যাকেজ নিয়ে তালিকার শীর্ষে আছেন। তাঁর আয়ের মধ্যে কোম্পানির ১৬ কোটি ৫ লাখ ডলারের স্টক অ্যাওয়ার্ড ছিল। এ ছাড়া নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা পূরণ ও পাঁচ বছর সিইও পদে থাকলে ২০২৫ অর্থবছর থেকে তিনি ১০ লাখ শেয়ার পাবেন—এমন ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।

অন্যান্য শীর্ষ বেতনভোগী সিইওর মধ্যে আছেন ফেয়ার আইজ্যাক করপোরেশনের উইলিয়াম ল্যানসিং; তাঁর বার্ষিক বেতন ৬ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। অ্যাপল ইনকরপোরেশনের টিম কুকের বেতন প্যাকেজ ৬ কোটি ৩২ লাখ ডলার, প্রোলোজিস ইনকরপোরেশনের হামিদ মোঘাদামের ৫ কোটি ৯ লাখ ডলার ও নেটফ্লিক্সের সহপ্রধান নির্বাহী টেড সারানডোসের বেতন ৪ কোটি ৯৮ লাখ ডলার।

যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের বেতনবৈষম্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্রের ইকোনমিক পলিসি ইনস্টিটিউটের তথ্যানুসারে, ১৯৭৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে সে দেশের শীর্ষ ১ শতাংশ কর্মীর মজুরি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয়ের পর ১৪৫ শতাংশ বেড়েছে, যেখানে বাকি ৯০ শতাংশ কর্মীর গড় বার্ষিক মজুরি বেড়েছে মাত্র ১৬ শতাংশ। বিভিন্ন কারণেই এ বৈষম্য হয়েছে, যেমন আইনকানুন শিথিল হওয়া, শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর পতন ও ফেডারেল মজুরি নীতিতে যথেষ্ট পরিবর্তন না আসা।

মহামারি–পরবর্তী সময়ে মানুষের মনোভাবেও পরিবর্তন এসেছে। নিয়োগকর্তা ও চাকরিপ্রার্থী—উভয়কেই কাজের পরিবেশ নিয়ে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে মহামারি। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, কলেজ পাস করা কর্মীরা আর্থিক নিরাপত্তার চেয়ে নিজেদের আবেগকে বেশি গুরুত্ব দেন। তাই কোম্পানিগুলোও নিয়োগের ক্ষেত্রে এখন কর্মীদের আরও কী কী সুযোগ দেওয়া যায়, তা নতুনভাবে মূল্যায়ন করছে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় সিইওদের সুযোগ-সুবিধা অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি হারে বাড়ছে।