কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে গুগলের লন্ডন কার্যালয়ে ধর্মঘট
গুগলের কর্মী ছাঁটাই নিয়ে বিরোধ আবারও প্রকাশ্যে এসেছে। গুগলের যুক্তরাজ্যের শত শত কর্মী গতকাল মঙ্গলবার গুগলের লন্ডন কার্যালয়ে ধর্মঘট করেছেন। যুক্তরাজ্যে গুগলের কর্মীর সংখ্যা পাঁচ হাজারের বেশি। খবর ইকোনমিক টাইমসের
গত বছর বিপুল কর্মী ছাঁটাইয়ের পর এ বছরের জানুয়ারিতে আবার ১২ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে গুগল, যা বিশ্বব্যাপী তাদের মোট কর্মশক্তির প্রায় ৬ শতাংশ। গুগল জানিয়েছে, বর্তমানে পরিবর্তনশীল অর্থনৈতিক বাস্তবতার কারণেই তারা কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রযুক্তি খাতে ছাঁটাইপ্রক্রিয়া অনুসরণকারী সংস্থা লেঅফ ফাই অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের করপোরেট জগৎ, বিশেষ করে প্রযুক্তি খাতে কর্মী ছাঁটাইয়ের মচ্ছব চলছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৫৫৬টি প্রযুক্তি কোম্পানি মোট ১ লাখ ৬৭ হাজার ৬১৯ কর্মী ছাঁটাই করেছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য বিশ্লেষণকারী কোম্পানি ক্রাঞ্চবেসের তথ্যানুসারে, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো ১ লাখ ৫০ হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছে।
যুক্তরাজ্যের ট্রেড ইউনিয়ন ইউনাইট বলেছে, কর্মী ছাঁটাই নিয়ে গুগলের কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, কিন্তু গুগল কর্মীদের এই উদ্বেগ উপেক্ষা করেছে।
ইউনাইটের আঞ্চলিক কর্মকর্তা ম্যাট হোয়েলি বলেছেন, ‘আমাদের অবস্থান পরিষ্কার: গুগলকে উন্নতি করতে হলে ভেতরের মানুষের পরামর্শ শুনতে হবে।’
ম্যাট হোয়েলি আরও বলেন, গুগল যতক্ষণ কর্মীদের পূর্ণাঙ্গ ইউনিয়ন করার অনুমতি না দেয়, ততক্ষণ গুগলের কর্মী ও ইউনাইট পিছিয়ে আসবে না। গুগলকে কর্মীদের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। কর্মীদের প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদা দিতে হবে।
এদিকে গুগলের কর্মী ছাঁটাই নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অসন্তোষ বাড়ছে। গত মাসে গুগলের জুরিখ কার্যালয়ের সামনে গুগলের কর্মীরা অবস্থান কর্মসূচি করেছেন। এমনকি গুগলের কর্মীরা কোম্পানির প্রধান নির্বাহী সুন্দার পিচাইয়ের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
কর্মীদের প্রতিনিধিরা দাবি করেন, কর্মী ছাঁটাই না করার যে প্রস্তাব তাঁরা দিয়েছিলেন, গুগল তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
গুগলের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘২০ জানুয়ারি বলেছিলাম, বিশ্বব্যাপী ১২ হাজার কর্মী ছাঁটাই করার কঠিন সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছিলাম। আমরা জানি, এটি আমাদের কর্মীদের জন্য খুব চ্যালেঞ্জিং সময়।’
গুগলের মুখপাত্র আরও বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে আমরা কর্মীদের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করছি, কথা শুনেছি তাঁদের। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা যুক্তরাজ্যের সব প্রক্রিয়া ও আইনি বিষয়াবলি মেনে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে জানাব।’
কেন এই ছাঁটাই
মহামারির সময় বিশ্বের বিপুলসংখ্যক মানুষ ঘরে থেকে কাজ করেছেন। তখন প্রযুক্তির চাহিদা বেড়ে যায়। অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে ২০২০ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে বিপুল কর্মী নিয়োগ দিয়েছে বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি। কিন্তু এখন চাহিদা কমে যাওয়ায় কর্মীদের বিদায় করা হচ্ছে।
এই মুহূর্তে বিপুল ছাঁটাইয়ের আরেকটি বড় কারণ হিসেবে বিশ্লেষকেরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’(এআই)–কে চিহ্নিত করছেন। এআই খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ক্রমেই বাড়াচ্ছে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো। এতে তৈরি হয়েছে অর্থের সংকট।
দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, প্রযুক্তির যা গতি-প্রকৃতি, তাতে এই মুহূর্তে এআই খাতে কেউই বিনিয়োগ কমানোর ঝুঁকি নিতে চাইছে না। কিন্তু এখনই তা থেকে আয় বৃদ্ধির নতুন পথ বেরোচ্ছে না। তাই ব্যয় কমানোর সবচেয়ে সহজ পথ হচ্ছে কর্মী ছাঁটাই এবং তা করেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে তারা।
এদিকে সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে। ২০২২ সালের অক্টোবরে দেখা যায়, গত বছরের তুলনায় গুগলের মুনাফা কমেছে ২৭ শতাংশ, আর্থিক হিসাবে যা ১ হাজার ৩৪০ কোটি ডলার। ফলে তারা বিপুল হারে ছাঁটাই করছে।
অন্যান্য প্রযুক্তি কোম্পানির অবস্থাও এক।
গত বছর টুইটারের মালিকানার নিয়ন্ত্রণ নিয়েই প্রতিষ্ঠানটির বিপুলসংখ্যক কর্মী ছাঁটাই করেন ইলন মাস্ক। তিনি মূলত নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় এই ছাঁটাই করেন। এরপরের কাহিনি ভিন্ন।
টুইটারের পর একে একে মাইক্রোসফট, গুগল, ফেসবুকের মালিকানা প্রতিষ্ঠান মেটাও ব্যাপক হারে কর্মী ছাঁটাই শুরু করে।