বিশ্ববাজারে ৬% কমেছে, দেশে ২%

রাশিয়া-ইউক্রেন চুক্তির প্রভাবে বিশ্ববাজারের দেখাদেখি দেশের পাইকারি বাজারেও গমের দাম খানিক কমেছে।

ইউক্রেনের শস্য রপ্তানির দুয়ার খোলার পর বিশ্ববাজারে এক দিনেই গমের দাম কমেছে ৬ শতাংশ। বিশ্ববাজারের ইতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। গতকাল শনিবার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে গমের দাম প্রায় ২ শতাংশ কমেছে।

ইউক্রেনের শস্য রপ্তানির জন্য কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো খুলে দিতে দেশটির সঙ্গে গত শুক্রবার চুক্তি করেছে রাশিয়া। জাতিসংঘ-সমর্থিত এই চুক্তি অনুযায়ী, ইউক্রেনের বড় বন্দর ওদেসাসহ তিনটি বন্দর খুলে দেওয়ার কথা। এসব বন্দরে বিপুল পরিমাণ গম আটকা পড়েছিল।

রাশিয়া গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করলে ইউক্রেনের সঙ্গে তাদের যুদ্ধ বেধে যায়। তাতে ইউক্রেনের শস্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। এরপরই বিশ্ববাজারে শস্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে থাকে।

যদি ইউক্রেন থেকে আমদানি স্বাভাবিক থাকে, তাহলে গম নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। ইউরোপের দেশগুলোতে এখন কম আমিষযুক্ত গমের ফলন উঠছে।
আবুল বশর চৌধুরী, চেয়ারম্যান, বিএসএম গ্রুপ

চুক্তির পর দাম কমেছে

রাশিয়া-ইউক্রেন চুক্তির বিষয়টি কয়েক দিন ধরে আলোচনায় থাকায় বৈশ্বিক গমের বাজারে দাম ওঠানামা করছিল। চুক্তির পর যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য লেনদেনের বাজার শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে (সিবিওটি) গমের দাম ৬ শতাংশ কমে ২৭৯ ডলারে নেমে এসেছে।

অবশ্য বৈশ্বিক উৎপাদন বৃদ্ধির আভাস থাকার কারণেও এক মাসের বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম কমতে শুরু করে। চুক্তির পর এখন আরেক দফা কমল। তাতে এক মাসে বিশ্ববাজারে গমের দাম ২২ শতাংশ কমেছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, চুক্তির আগে ইউরোপ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত কম আমিষযুক্ত গম আমদানিতে টনপ্রতি খরচ পড়ত ৪২৫ থেকে ৪৩০ মার্কিন ডলার। চুক্তির পর তা এখন ৪০০ থেকে ৪০৫ ডলারে নেমে আসবে।

দেশের বাজারেও প্রভাব পড়েছে

বিশ্ববাজারে দাম কমার তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে। সাপ্তাহিক লেনদেন শুরুর প্রথম দিনে গতকাল কম আমিষযুক্ত গমের দাম মণপ্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকা কমেছে। কেজিপ্রতি কমেছে ৫৩ থেকে ৬৬ পয়সা। দেশের বাজারে মূলত ভারতীয় কম আমিষযুক্ত গম বেচাকেনা হচ্ছে। এদিকে গতকাল সকালে ইউক্রেনের ওদেসা বন্দর এলাকায় রুশ হামলা হয়েছে বলে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে। এতে দেশটি থেকে গম রপ্তানির বিষয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

আমদানি কম

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর দেশ দুটি থেকে গম আমদানি বন্ধ হয়ে গেলেও বাংলাদেশের সমস্যা হয়নি। কারণ, রাশিয়া-ইউক্রেনের তুলনায় ভারত থেকে কম দামে গম আমদানি করছিলেন ব্যবসায়ীরা। অবশ্য গত ১৩ মে ভারত গম রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করায় দেশে গম আমদানিতে হোঁচট খান ব্যবসায়ীরা। পরবর্তী তথ্যে দেখা যায়, ভারতীয় গম আমদানি কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে।

সাধারণত গড়ে প্রতি মাসে পাঁচ লাখ টন গম আমদানি করে চাহিদা পূরণ হয়। সেখানে ভারত রপ্তানি বন্ধের পর গত দুই মাসে সব মিলিয়ে আমদানি হয়েছে পাঁচ লাখ টন। এই গমের প্রায় ৭৭ শতাংশ এসেছে ভারত থেকে। রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করার আগে যেসব ঋণপত্র খোলা হয়েছে, সেগুলোর বিপরীতে গম আমদানি হয়েছে। এ সময়ে বিকল্প দেশ থেকে গম আমদানি হয়েছে কম।

খুচরায় চড়া দামই চলছে

গম প্রক্রিয়াজাত করে আটা-ময়দা তৈরি করা হয়। বিশ্ববাজারে দাম বাড়তি থাকায় খুচরা বাজারে আটা-ময়দার দাম গত বছরের তুলনায় ৫১ শতাংশ বাড়ে। কিন্তু এক মাস ধরে বিশ্ববাজারে দাম কমতে থাকলেও দেশের খুচরা বাজারে তা কমেনি।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত আটা ৪৮-৫৫ টাকা ও ময়দা ৬২-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই দর গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫১ শতাংশ বেশি। বিশ্ববাজার ও দেশীয় পাইকারি বাজারে এক মাসে গমের দাম সংশোধন হলেও খুচরায় কমেনি।

বিকল্প বাজার খোঁজা উচিত

বাংলাদেশে মূলত কম আমিষযুক্ত গমই আমদানি হয় বেশি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর ভারত থেকে এ ধরনের গম আমদানি করা হয়। ভারতের বিধিনিষেধের কারণে দেশটি থেকেও আমদানি কমে যায়। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন চুক্তির পর গমের সরবরাহ নিয়ে দুশ্চিন্তা কমার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

দেশের শীর্ষস্থানীয় আমদানিকারক ও বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, যদি ইউক্রেন থেকে আমদানি স্বাভাবিক থাকে, তাহলে গম নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। ইউরোপের দেশগুলোতে এখন কম আমিষযুক্ত গমের ফলন উঠছে। তবে ভারত থেকে গম আমদানিতে যে বিধিনিষেধ রয়েছে, তা শিথিল করার জন্যও সরকারি পর্যায়ে চেষ্টা চালানো উচিত। ভারতের বাজার খুললে গম নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।