দুবাইয়ে দামি বাড়ি বিক্রি বেড়েছে, বেচাকেনায় এখন বিশ্বের শীর্ষ শহর

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরপ্রতীকী ছবি: এএফপি

চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে দামি বাড়ির বিক্রি বেড়েছে। এই সময়ে দুবাইয়ে ১০ মিলিয়ন বা এক কোটি ডলার ও তদূর্ধ্ব দামের বাড়ি বিক্রি হয়েছে ১০৫টি; গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ১৯ শতাংশ বেশি।
বৈশ্বিক সম্পদ খাতের বিশ্লেষক সংস্থা নাইট ফ্রাংকের সূত্রে এই খবর দিয়েছে গালফ নিউজ।

নাইট ফ্রাংকের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আমেরিকা–বিষয়ক প্রধান গবেষক ফয়সাল দুররানি বলেন, দুবাইয়ের দামি সম্পদের বাজারে ক্রেতাদের আনাগোনা বাড়ছেই। যেভাবে বিশ্বের ধনী ও অতি ধনী মানুষেরা এই শহরের সবচেয়ে দামি বাড়ি ও ফ্ল্যাটের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন, তাতে দামি বাড়ির চাহিদা বাড়ছে।

ফয়সাল দুররানি আরও বলেন, দুবাই শহরের দামি বাড়ির প্রতি ধনীদের আকর্ষণ কতটা বেড়েছে, তার আরেকটি নজির হলো বছরের প্রথম প্রান্তিকে এ ধরনের বাড়ির বিক্রির বিজ্ঞাপন কমে যাওয়া। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এই সময় দামি বাড়ি বিক্রির বিজ্ঞাপন ৫৯ শতাংশ কমে গেছে; এই সংখ্যাটা নেমে এসেছে মাত্র ৮৬৪টিতে। অর্থাৎ ধনীরা এই শহরে বাড়ি ধরে রাখতে চাইছেন।

বছরের প্রথম প্রান্তিকে দুবাই শহরে বিক্রি হওয়া দামি বাড়ির আর্থিক মূল্য দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন বা ১৭৩ কোটি ডলার। বস্তুত বিশ্বের দামি বাড়ি বা এক কোটি ডলারের বেশি দামের বাড়ির বাজারে দুবাই সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত নাম।

বিশ্বে দামি বাড়ি কেনাবেচার দিক থেকে দুবাই এখন বিশ্বের শীর্ষ শহর। গত বছর এই শহরে এক কোটি ডলারের চেয়ে বেশি দামের বাড়ি বিক্রি হয়েছে ৪৩১টি। এরপরেই আছে লন্ডনের স্থান, এই শহরে বিক্রি হয়েছে ২৪০টি বাড়ি। ২১১টি নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে নিউইয়র্ক শহর।

দুবাইয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান হচ্ছে পাম জুমেরাহ নামের এক কৃত্রিম দ্বীপ। সেখানে বিক্রীত দামি বাড়ির অর্থমূল্য ৬২ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এক কোটি ডলার বা তার চেয়ে বেশি দামের যত বাড়ি বিক্রি হয়েছে, তার মোট ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ বিক্রি হয়েছে এই পাম জুমেরাহ দ্বীপে। এরপর আছে যথাক্রমে জুমেরাহ বে দ্বীপ ও দুবাই হিল এস্টেট।

নাইট ফ্রাংক বলেছে, পাম জুমেরাহ জনপ্রিয় বা সংবাদপত্রের বহুল মুদ্রিত নাম হলেও অন্যান্য উপশহরও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, যেমন জুমেরাহ বে আইল্যান্ড, এমিরেটস হিল, দুবাই হিল এস্টেট ইত্যাদি।

দুবাইয়ের আবাসন বাজার প্রতি বছরই দ্রুততার সঙ্গে বাড়ছে। ২০২২ সালের দেশটির আবাসন খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ; ২০২৩ সালের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৬ দশমিক ৩ শতাংশ।

প্রবৃদ্ধির দিক থেকে দুবাইয়ের আবাসন খাত বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল হলেও এই শহরের আবাসন এখন পর্যন্ত বিশ্বের অন্যান্য বড় শহরের তুলনায় সাশ্রয়ী। দুবাই শহরের নামীদামি এলাকায় ১ কোটি ডলারে ৯৮০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট পাওয়া যায়; নিউইয়র্ক শহরে পাওয়া যায় ৩৬৬ বর্গফুট, লন্ডনে ৩৫৫ বর্গফুট ও মোনাকোতে ১৭২ বর্গফুট।

গত কয়েক বছরে সংযুক্ত আরব আমিরাত বিদেশি বিনিয়োগের অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। বিনিয়োগকারী ও ধনীদের কাছে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত স্থান হচ্ছে দুবাই। আমিরাত সরকারও বিনিয়োগ আকর্ষণে হাত খুলে ভিসা ও লাইসেন্স দিচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহে আরও গতি আনতে এবার নতুন উদ্যোগ হাতে নিয়েছে দেশটির সরকার। বিদেশিদের জন্য তারা নতুন দুটি ব্যবসায়িক লাইসেন্স চালু করেছে—একটি হলো ১০ বছর মেয়াদি গোল্ডেন লাইসেন্স, অন্যটি পাঁচ বছর মেয়াদি সিলভার লাইসেন্স।