এবার চীনের গাড়ি নিয়ে শঙ্কিত পশ্চিমারা, কী করবে তারা

চীনের তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়িফাউল ছবি: রয়টার্স

চীনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো না হলেও দেশটির গাড়িশিল্প পশ্চিমাদের জন্য নতুন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি গাড়ি রপ্তানি করেছে চীন, জাপানকে ছাড়িয়ে গেছে তারা। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমা দেশগুলোর ভয়, চীন কি আরও একবার পশ্চিমা দেশগুলোতে শিল্পায়নের কারণ হবে।

দ্য ইকোনমিস্ট-এর সংবাদে বলা হয়েছে, ১৯৯৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতে ১০ লাখ মানুষ কাজ হারিয়েছেন চীনের উত্থানের কারণে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেন। একই সঙ্গে দেশে দেশে শিল্পনীতি গ্রহণ করা হয়। এসবের প্রভাবে চীনের প্রবৃদ্ধির গতি কমলেও সম্প্রতি দেশটির গাড়িশিল্পের বিস্ময়কর উত্থান হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমা দেশগুলোর আবার ভীতি ধরে গেছে।

এই পাঁচ বছর আগেও চীনের গাড়ি রপ্তানির পরিমাণ ছিল জাপানের এক-চতুর্থাংশ। তবে ২০২৩ সালে চীনের গাড়ি রপ্তানি জাপানকে ছাড়িয়ে গেছে; গত বছর তারা ৫০ লাখের বেশি রপ্তানি করেছে। চীনের বৃহত্তম গাড়ি কোম্পানি বিওয়াইডি ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে পাঁচ লাখ গাড়ি রপ্তানি করেছে, টেসলাকে ছাড়িয়ে গেছে তারা। চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ি দেখতে সুন্দর ও প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত, সেই সঙ্গে এসব গাড়ি অনেক সস্তা। ২০২৩ সালে টেসলা চীনের বাজারে দফায় দফায় গাড়ির দাম কমিয়েও কূল পায়নি।

দেশে দেশে জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক গাড়ির চাহিদা কমছে, বাড়ছে বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা। ২০৩০ সালের মধ্যে বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে চীনের হিস্যা দ্বিগুণ হতে পারে। এতে পশ্চিমা গাড়ি কোম্পানিগুলোর আধিপত্য শেষ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, চীনের গাড়িশিল্পের উত্থান নিয়ে পশ্চিমাদের ভীত হওয়ার কিছু নেই, বরং তা উদ্‌যাপন করা উচিত। ১৯৮০-এর দশকে জাপানি ও দক্ষিণ কোরিয়ার গাড়ি মার্কিন ও ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর জন্য হুমকি বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু ইতিহাসের শিক্ষা হলো, বাজারে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হলে স্থানীয় কোম্পানিগুলো উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বাজারে নতুন যারা আসছে, তারাও গ্রাহকদের বা ভোক্তাদের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করে।

যেমন চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ি কোম্পানি বিওয়াইডি ইতিমধ্যে ইউরোপের দেশ হাঙ্গেরিতে কারখানা স্থাপন করছে এবং অন্যান্য চীনা গাড়ি কোম্পানি উত্তর আমেরিকায় কারখানা স্থাপনের জন্য জায়গা খুঁজছে। অন্যদিকে ফোর্ড ও ফক্সওয়াগনের মতো পশ্চিমা কোম্পানিগুলো চীনা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়েছে। গত বছর জাপানি গাড়ি কোম্পানি টাটা ‘সলিড স্টেট’ টেকনোলজি নামে নতুন এক প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে; বলা হচ্ছে, এই প্রযুক্তির কল্যাণে গাড়ির ওজন ও ব্যাটারির খরচ উভয়ই কমবে।

দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, পশ্চিমাদের উদ্বেগের আরেকটি কারণ হচ্ছে, তাদের জাতীয় নিরাপত্তা। বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারির জন্য কেবল চীনের ওপর নির্ভর করা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। আবার বৈদ্যুতিক গাড়িতে চিপের সঙ্গে সেন্সর ও ক্যামেরা ব্যবহৃত হয়। ফলে এটা হতে পারে যে এসব গাড়ি নজরদারির জন্য ব্যবহার করা হবে। এমনকি চীন নিজেই দেশটির অভ্যন্তরে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য টেসলার গাড়ি ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।

দ্য ইকোনমিস্ট মনে করছে, নীতিপ্রণেতাদের এত সুরক্ষাবাদী হওয়ার কিছু নেই। বাজারে চীনা গাড়ি এলে প্রতিযোগিতা হবেই, তাতে শঙ্কিত হওয়া সংগত নয়। চীন যদি নিজ দেশের করদাতাদের অর্থে সারা বিশ্বের ভোক্তাদের ভর্তুকি দেয় এবং জ্বালানি খাতের এই রূপান্তর ত্বরান্বিত করে, তাহলে সবচেয়ে ভালো কাজ হবে, দেশটিকে স্বাগত জানানো।