এবার ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার টিকা উৎপাদনে নজর ফেরাচ্ছে ভারতের সিরাম

ভারতের জাতীয় পতাকাছবি: এএফপি

বিশ্বের বৃহত্তম টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী আদর পুনাওয়ালা জানিয়েছেন, কোভিড টিকা উৎপাদনের সময় যে অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছিল, সেটা ব্যবহার করে তাঁর কোম্পানি এখন ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুর মতো রোগের টিকা উৎপাদনে জোর দিচ্ছে।

সিরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আদর পুনাওয়ালা এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এখন কোভিডের প্রকোপ কমে এসেছে। সে জন্য কোভিড টিকার উৎপাদনও কমেছে; কিন্তু কোম্পানিটি এখন সেই অবকাঠামো ব্যবহার করে নতুন টিকা উৎপাদনে জোর দিচ্ছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই প্রক্রিয়ায় তাদের টিকার উৎপাদন ২০০ থেকে ২৫০ কোটি ডোজ বৃদ্ধি পাবে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, কোভিড মহামারি মোকাবিলায় অ্যাস্ট্রোজেনেকার উদ্ভাবিত টিকা উৎপাদন করে সিরাম ইনস্টিটিউট খ্যাতি অর্জন করেছিল। অ্যাস্ট্রোজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড নামে বাজারজাত করে সিরাম। একই সঙ্গে তারা নোভাভ্যাক্সের প্রোটিনভিত্তিক টিকাও তৈরি করে। কোভিড মহামারির সময় সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ২০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছিল।

বর্তমানে সিরাম ইনস্টিটিউট বছরে ১৫০ কোটি ডোজ টিকা বিক্রি করে থাকে। প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, তাদের বর্তমান উৎপাদন সক্ষমতা বার্ষিক ৪০০ কোটি ডোজ।

আদর পুনাওয়ালা বলেন, বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আবারও যদি কোভিডের মতো মহামারি আসে, তাহলে পুরো ভারতকে তিন থেকে চার মাসের মধ্যে টিকার আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।

এমনকি এ বিষয়ে সিরাম ইনস্টিটিউট অন্যান্য দেশ ও সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছে; অর্থাৎ ভবিষ্যতে এ ধরনের মহামারির প্রকোপ হলে কীভাবে তাদের অবকাঠামো ব্যবহার করা যায়, সে বিষয়েই হয়েছে এই আলোচনা। যদিও এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু জানায়নি তারা।

আদর পুনাওয়ালা বলেন, সিরাম ইনস্টিটিউটের ১০ কোটি ডোজ ম্যালেরিয়া টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা আছে; এরপর চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে তারা উৎপাদন আরও বাড়াতে পারবে। ম্যালেরিয়ার টিকা বাজারে আসতে যাচ্ছে, সেই টিকার প্রায় আড়াই কোটি ডোজ সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদন করছে। মশাবাহিত এই পুরোনো রোগে এখনো লাখ লাখ মানুষ মারা যান, বিশেষ করে সাব-সাহারা আফ্রিকা অঞ্চলের ছোট শিশুরা এ রোগে আক্রান্ত হয়ে বিপুল সংখ্যায় মারা যায়।

আদর পুনাওয়ালা প্রযুক্তি হস্তান্তরে খুব একটা আগ্রহী নন। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তাঁরা অন্যান্য দেশে ম্যালেরিয়ার মতো প্রয়োজনীয় টিকা রপ্তানি করতে আগ্রহী, প্রযুক্তি হস্তান্তরে নয়।

একই সঙ্গে সিরাম ইনস্টিটিউট এক ডোজের ডেঙ্গু টিকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের গবেষণার ভিত্তিতে সিরাম ইনস্টিটিউট এই টিকা উৎপাদনের কাজ করছে।

শিগগিরই ডেঙ্গুর টিকা বাজারে আসছে না বলেই পুনাওয়ালার কথায় জানা গেছে। তিনি বলেন, ভারতে এখন এই টিকার প্রাথমিক ও মধ্যবর্তী পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে; আগামী তিন বছরে এর পরবর্তী পর্যায়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হবে।

জাপানের তাকেদা ফার্মাসিউটিক্যালস ডেঙ্গু টিকা উৎপাদন করে থাকে। ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের মতো দেশে এখন এই টিকা দেওয়া হচ্ছে। এসব দেশেও ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে; কিন্তু তাদের হাতে যথেষ্ট পরিমাণে টিকা নেই। তবে সিরাম ইনস্টিটিউটের মতো ইন্ডিয়ান ইমিউনোলজিক্যালসও ডেঙ্গু টিকা তৈরির কাজ করছে।