চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির শঙ্কা
বিশ্বের বৃহত্তম চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত গতকাল বৃহস্পতিবার বাসমতী ছাড়া অন্য সব ধরনের চাল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ জন্য বর্ষা মৌসুমে ভারী বৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় বিষয়টিকে সামনে এনেছে দেশটির সরকার। ভারতের এ সিদ্ধান্তের কারণে নতুন করে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির শঙ্কা তৈরি হয়েছে। খবর রয়টার্সের।
ভারত সরকার বলেছে, বর্ষা মৌসুমে ভারী বৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আবার গত এক মাসে দেশের অভ্যন্তরে খুচরা বাজারে চালের দাম ৩ শতাংশ বেড়েছে। এমন প্রেক্ষাপটেই চাল রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ভারতের সরকারের ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, চাল রপ্তানি বন্ধের এ সিদ্ধান্ত গতকাল, অর্থাৎ ২০ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। তবে রপ্তানির উদ্দেশ্যে যেসব প্রক্রিয়া চলমান, তা ৩১ আগস্টের মধ্যে সম্পন্ন করা যাবে। এ ছাড়া কোনো দেশের সরকার যদি তাদের খাদ্যনিরাপত্তার জন্য চাল রপ্তানির অনুরোধ করে, তাহলে ভারত সরকার বিশেষভাবে অনুমতি দিতে পারবে।
বিশ্ববাজারে চাল রপ্তানির ৪০ শতাংশের বেশি করে ভারত। তাদের চাল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর অন্য কোনো দেশ থেকে সরবরাহ কমলেই খাদ্যের মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে, যা কিনা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এমনিতেই বেশি রয়েছে।
ভারতের খাদ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের সরবরাহ স্থিতিশীল ও মূল্যবৃদ্ধি রোধ করতে চাল রপ্তানির নীতিতে পরিবর্তন এনেছে সরকার। এতে আরও বলা হয়, গত এক বছরে ভারতের খুচরা বাজারে চালের দাম বেড়েছে সাড়ে ১১ শতাংশ।
গত বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালে ভারত ২ কোটি ২০ লাখ টন চাল রপ্তানি করে। তার মধ্যে নন-বাসমতী সাদা ও ভাঙা চাল ছিল প্রায় এক কোটি টন। যদিও দেশটির সরকার পরিষ্কার করেছে, আধা সেদ্ধ চাল এ নিষেধাজ্ঞায় পড়বে না। গত বছর ভারত ৭৪ লাখ টন আধা সেদ্ধ চাল রপ্তানি করেছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী বছর ভারতে লোকসভা নির্বাচন। এ নির্বাচনকে সামনে রেখেই খাদ্যের মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশল হিসেবে চাল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে চাল রপ্তানি সীমাবদ্ধ করার পর গম রপ্তানির ওপরও নিষেধাজ্ঞা বাড়িয়েছিল তারা।
এদিকে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে দেশটির চাল রপ্তানিকারকদের সংগঠন রাইস এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের সভাপতি বি ভি কৃষ্ণা রাও বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গমের বৈশ্বিক বাজার এলোমেলো হয়েছিল। ভারত সরকারের চাল রপ্তানি ওপর নিষেধাজ্ঞায় তার চেয়েও বড় বিপর্যয় দেখা দেবে চালের আন্তর্জাতিক বাজারে। তিনি আরও বলেন, হঠাৎ চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা অনেক দেশের ক্রেতার জন্য বড় সমস্যার কারণ হবে। তারা কম সময়ের মধ্যে অন্য দেশ থেকেও চাল আনতে পারবে না।
ভারত থেকে চাল রপ্তানি বন্ধ থাকলে বিশ্ববাজারে ঘাটতি পূরণের মতো পর্যাপ্ত চাল থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে মজুত নেই। তাই আফ্রিকা অঞ্চলের ক্রেতারা ভারতের এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমন তথ্য দিয়ে বি ভি কৃষ্ণা রাও বলেন, অনেক দেশ হয়তো নয়াদিল্লিকে পুনরায় চাল রপ্তানির অনুমতি দিতে আহ্বান জানাবে। তিনি জানান, ভারত থেকে চাল কেনার ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে বেনিন, সেনেগাল, আইভরি কোস্ট, টোগো, গিনি, বাংলাদেশ ও নেপাল।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ৩০০ কোটি মানুষের প্রধান খাদ্য হলো ভাত। পানিনির্ভর এই শস্যের ৯০ শতাংশই উৎপাদন হয় এশিয়া অঞ্চলে। তবে আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে এ অঞ্চলে বৃষ্টি কম হচ্ছে। বর্তমানে বিশ্ববাজারে চালের দাম ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।