ব্র্যান্ড থেকে সরাসরি পণ্য কেনার প্রবণতা বাড়ছে

এখনকার ভোক্তারা প্রযুক্তি সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখেন। ফলে পণ্য কেনাকাটায়ও প্রযুক্তিজ্ঞানের প্রভাব থাকে বলে জানিয়েছে পিডব্লিউসি।

বিশ্বব্যাপী ভোক্তাদের আচরণে পরিবর্তন আসছে। এক জরিপে দেখা গেছে, ভোক্তারা এখন পুরোনো ধাঁচের মধ্যস্বত্বভোগী বা বাজার থেকে পণ্য না কিনে সরাসরি ব্র্যান্ডের কাছ থেকে পণ্য কিনতে বেশি আগ্রহী। ৬৩ শতাংশ ভোক্তা সরাসরি ব্র্যান্ডের ওয়েবসাইট থেকে পণ্য কিনছেন। ২৯ শতাংশ বলেছেন, সরাসরি ব্র্যান্ডের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত না কিনলেও বিষয়টি তাঁদের চিন্তায় আছে।

অর্থাৎ ভোক্তারা এখন নিজেরা সরাসরি যাচাই করে পণ্য কিনতে চান। জরিপে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ক্রেতা পণ্য কেনার আগে অনলাইন মাধ্যমে সেই পণ্য সম্পর্কে অনুসন্ধান করেন। এ ছাড়া অনেকে সরাসরি অনলাইন মার্কেটপ্লেসে গিয়ে পণ্য সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। এ ছাড়া ফেসবুক, টিকটকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম থেকেও তথ্য জানেন প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভোক্তা।

বিশ্বজুড়ে ভোক্তার আচরণ নিয়ে জানতে গত জুন মাসে ‘গ্লোবাল কনজ্যুমার ইনসাইটস পালস’ নামে একটি সমীক্ষা চালায় প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারস (পিডব্লিউসি)। সেই জরিপে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সে কারণে পিডব্লিউসির পরামর্শ, ভোক্তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য, উপকরণ ও প্রযুক্তি দিয়ে সমৃদ্ধ করা, যাতে তাঁরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

জরিপে দেখা গেছে, বর্তমান বিশ্বে ভোক্তাদের বিদ্যমান ব্যয়ের ধরন থেকে বেশি কিছু বের করে আনা কঠিন। অর্থাৎ ভোক্তারা একই পণ্য বেশি পরিমাণে কিনতে চান না বা খরচ করতে চান না।

সমীক্ষায় ২৫টি দেশ ও অঞ্চলের ৮ হাজার ৯৭৫ জন ভোক্তার মতামত নেওয়া হয়েছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর এবং তাঁরা প্রত্যেকে এক বছরের মধ্যে অন্তত একবার অনলাইনে কেনাকাটা করেছেন।

কোথায় পণ্যের তথ্য খোঁজেন

পিডব্লিউসি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, এখনকার ভোক্তারা প্রযুক্তি সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখেন। ফলে পণ্য কেনাকাটার ক্ষেত্রেও এই প্রযুক্তিজ্ঞানের প্রভাব থাকে। নির্দিষ্ট পণ্য বা পরিষেবা সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ, তুলনামূলক দাম জানা ও অন্য ক্রেতাদের প্রতিক্রিয়া জানা ইত্যাদি প্রয়োজনে প্রথমেই অনলাইনে অনুসন্ধান করেন ভোক্তারা। এরপর তাঁরা ই-কমার্স বা নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের ওয়েবসাইট থেকে কিংবা সরাসরি দোকান থেকে সেই পণ্য কেনেন।

পিডব্লিউসি জরিপে অংশ নেওয়া অর্ধেকের বেশি (৫৫ শতাংশ) ভোক্তা জানিয়েছেন, পণ্য কেনার আগে প্রাথমিক তথ্যের জন্য তাঁরা বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে (যেমন গুগল) অনুসন্ধান করেন।

পণ্য সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য অনুসন্ধানের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন। প্রায় ৩৫ শতাংশ ভোক্তা অ্যামাজন প্ল্যাটফর্মে পছন্দের পণ্য সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন। অন্যদিকে যে ওয়েবসাইটগুলোতে একই জাতীয় পণ্যের তুলনামূলক দাম দেওয়া থাকে, ২৯ শতাংশ ভোক্তা সেই সব ওয়েবসাইটে ঢুঁ মারেন। এসব ভোক্তার অধিকাংশই জেড জেনারেশনের (যাঁদের জন্ম ১৯৯৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে)।

অর্থাৎ সার্চ ইঞ্জিন ও খুচরা পণ্য বিক্রির ওয়েবসাইটগুলো প্রাক্‌–ক্রয় তথ্য সংগ্রহের মূল উৎস। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো  ফেসবুক, টিকটকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন ৩১ শতাংশ ভোক্তা।

জরিপে অর্ধেকের বেশি উত্তরদাতা জানান, তাঁরা প্রায় সব ক্ষেত্রে স্মার্টফোন ও অ্যাপস ব্যবহার করেন। মজার বিষয় হলো উত্তরদাতাদের এক–তৃতীয়াংশ জানিয়েছেন, দোকান থেকে পণ্য কেনার সময় সেখানে দাঁড়িয়েই অনলাইনে সেই পণ্যের দাম ও অন্যান্য তথ্য যাচাই করেন।

এক–তৃতীয়াংশ উত্তরদাতা জানান, তাঁরা সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পণ্য কিনতে আগ্রহী। অর্থাৎ তাঁরা চান ব্র্যান্ডগুলো যেন  তাঁদের চাহিদা অনুযায়ীই বিজ্ঞাপন দেয়।

ভোক্তারা কোন মাধ্যমে পণ্য কিনতে চান

অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে মার্কেটপ্লেস ও সরাসরি ব্র্যান্ডের ওয়েবসাইট থেকে ক্রেতারা পণ্য কিনে থাকেন। এ ক্ষেত্রে মার্কেটপ্লেসগুলো (যেমন অ্যমাজন) বরাবরই এগিয়ে ছিল। তবে পিডব্লিউসির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ভোক্তারা ক্রমেই মার্কেটপ্লেসের পরিবর্তে ব্র্যান্ড থেকে সরাসরি পণ্য কেনার দিকে ঝুঁকছেন।

ই–কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্যের সমাহার থাকে। ফলে সেখান থেকে তুলনামূলক দামদরও জানা যায়। তবে গ্রাহকেরা বলছেন, ব্র্যান্ডের নিজস্ব ওয়েবসাইটের কিছু সুবিধা আছে। যেমন ব্র্যান্ডের ওয়েবসাইটগুলোতে, বিশেষ করে পোশাক, ইলেকট্রনিকস, সৌন্দর্য উপাদান ও ব্যক্তিগত যত্ন–আত্তির পণ্যের ক্ষেত্রে বেশি আস্থা পাওয়া যায়। এ ছাড়া ব্র্যান্ডের ওয়েবসাইটে পণ্যের মজুতও বেশি থাকে।

বিভিন্ন ব্র্যান্ড এখন সাবস্ক্রিপশন মডেলের মাধ্যমে বিশ্বস্ত গ্রাহক তৈরি করছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাবস্ক্রিপশনের বিনিময়ে গ্রাহককে নির্দিষ্ট অর্থ ব্যয় করতে হয়।

জরিপে অংশ নেওয়া উত্তরদাতাদের ৫০ শতাংশ এখনো সরাসরি দোকান বা বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে পণ্য কিনতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন।

টেকসই পণ্যের জন্য ভোক্তারা খরচ করছেন

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে টেকসই উপায়ে তৈরি পণ্য কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতারা আগের তুলনায় বেশি আগ্রহী হয়েছেন বলে জানিয়েছে পিডব্লিউসি। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ভোক্তারা এখন টেকসই পণ্যের জন্য বেশি অর্থ খরচ করতে রাজি থাকেন।

সাধারণত টেকসই প্রক্রিয়া উৎপাদিত পণ্যের দাম কিছুটা বেশি হয়। পিডব্লিউসির জরিপে অংশ নেওয়া প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৮ জন ভোক্তা জানিয়েছেন, তাঁরা টেকসইভাবে উৎপাদিত পণ্যের জন্য ৫ শতাংশ পর্যন্ত বেশি অর্থ দিতে রাজি। অর্থাৎ মানসম্মত পণ্যের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে।