চীনে মার্কিন কারখানা করা বারণ

স্থানীয় পর্যায়ে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে ৫০ বিলিয়ন বা ৫ হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

২০১৯ সালের শেষ ভাগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর আগে বিশ্ব অর্থনীতির সবচেয়ে বড় খবর ছিল মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ। পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের মধ্য দিয়ে তীব্র হয়ে উঠেছিল এই বাণিজ্যসংঘাত। এরপর করোনাভাইরাস এবং তারপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দৃশ্যপট থেকে একপ্রকার হারিয়ে গিয়েছিল বাণিজ্যযুদ্ধ।

তবে মার্কিন প্রশাসনের নতুন সিদ্ধান্তে যেন আবার জীবন্ত হয়ে উঠেছে বাণিজ্যযুদ্ধ। সেটা হলো, বাইডেন প্রশাসন ঘোষণা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের যেসব প্রযুক্তি কোম্পানি কেন্দ্রীয় সহায়তা পায়, সেগুলোর আগামী ১০ বছর চীনে উন্নত প্রযুক্তিসমৃদ্ধ কারখানা স্থাপন বারণ।

সেই সঙ্গে নিজ দেশে উৎপাদন বৃদ্ধিতে জোর দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় পর্যায়ে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে ৫০ বিলিয়ন বা ৫ হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই পরিকল্পনার দিকনির্দেশনা হিসেবে এই নিষেধাজ্ঞার কথা বলেছে বাইডেন প্রশাসন।

অভিযোগ আছে, চীন সরকার গোপনে সে দেশের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করে। ফলে চীনা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে অন্য দেশের কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতায় পেরে ওঠে না। সে জন্য মার্কিন কোম্পানিগুলো চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে অধিকতর সরকারি সহায়তা চেয়ে এসেছে এত দিন।

এদিকে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরবরাহব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ায় বিশ্বজুড়ে মাইক্রো চিপের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এতে মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী গিনা রায়মন্ডো বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা শিগগিরই নির্দেশনা প্রণয়ন করতে যাচ্ছি, যারা চিপস তহবিল পাবে, তারা জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করতে পারবে না। এই অর্থ তারা চীনে বিনিয়োগ করতে পারবে না এবং সেখানে উন্নত প্রযুক্তি তৈরি করতে পারবে না।’ যুক্তরাষ্ট্রের চিপস ও বিজ্ঞান আইনের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

গত আগস্ট মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন উচ্চাভিলাষী আইনে সই করেছেন। এই আইনের আওতায় ২৮০ বিলিয়ন ডলার বা ২৮ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হবে উচ্চ প্রযুক্তির পণ্য উদ্ভাবন এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায়। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর ভয়, তারা প্রযুক্তিতে চীনের কাছে হেরে যাচ্ছে।

এই বিনিয়োগের মধ্যে থাকবে যুক্তরাষ্ট্রে কম্পিউটার চিপ উৎপাদনকারী কারখানাগুলোকে কর ছাড় দেওয়া।

যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে বৈশ্বিক চাহিদার ১০ শতাংশ মাইক্রো চিপ উৎপাদন করে। অথচ ১৯৯০ সালে এই বাজারে তাদের হিস্যা ছিল ৪০ শতাংশ। গাড়ি থেকে শুরু করে মোবাইল ফোন—সবকিছু উৎপাদনে এই মাইক্রো চিপ প্রয়োজন হয়।

তবে চীন নিজের দেশের কোম্পানিগুলোকে সহায়তা করলেও যুক্তরাষ্ট্রের এই সেমিকন্ডাক্টর বিলের বিরোধিতা করেছে। তারা বলছে, এটি স্নায়যুদ্ধের আমলের মানসিকতা।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্র অনেকবার অভিযোগ করেছে, চীন তাদের প্রযুক্তি চুরি করছে। বিষয়টি হলো, চীনে যারা ব্যবসা করতে চায়, তাদের স্থানীয় কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কাজ করতে হয়। এই অংশীদারির কারণে চীনা কোম্পানিগুলো বিদেশি কোম্পানির এমন অনেক তথ্য পেয়ে যাচ্ছে, যা সাধারণত গোপন রাখা হয়। এরপর ২০১৭ সালে চীন নতুন এক আইন করে আন্তর্দেশীয় তথ্য স্থানান্তরের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করে। এই আইনের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে তথ্য সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হয়। ৮০ শতাংশ বিদেশি কোম্পানি বলেছে, তারা এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন।